২০ কোম্পানির বিরুদ্ধে শুরু হচ্ছে অভিযান
ফের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা শুরুর চেষ্টা
প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাফফার খান চৌধুরী
আবারও ব্যাপকহারে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিসরে এই ব্যবসা শুরু করেছে। এমন ২০টি প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করেছে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) ও গোয়েন্দারা। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রম্নত অভিযান শুরু হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার তথ্য ফাঁস হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ভিওআইপি ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত ২০টি কোম্পানিকে শনাক্ত করা হয়। কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি অত্যন্ত সুপরিচিত মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে ১২৫ কোটি, অপর একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে ১৪৫ কোটি, আরেকটি ফোন কোম্পানির কাছ থেকে ১৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আরেকটি ফোন ১৫০ কোটি, এনটেল কমিউনিকেশনকে ১৭ লাখ,র্ যাংকসটেলের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
সূত্রটি বলছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত ২০টি কোম্পানির কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। তাছাড়া আরও একটি বড় ফোন কোম্পানি মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দেওয়ার পরেই আবারও ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পরে কোম্পানিটির কাছ থেকে দ্বিতীয়বার জরিমানা আদায় করে বিটিআরসি। সবমিলিয়ে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ৮৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিগুলোকে মনিটরিং করতে একটি স্থায়ী বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের মনিটরিংয়ের অভাবে নতুন করে কোম্পানিগুলো আবারও ব্যাপকহারে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিসরে কোম্পানিগুলো অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ জরিমানাদাতা কোম্পানিটির অন্যতম কর্ণধারকে নিয়ে রীতিমতো হইচই চলছে। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় প্রায় তাকে উচ্চ আদালতে যাতায়াত করছে হচ্ছে।
র্
যাব-১০ উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মোতাবেক অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার বিষয়ে আবারও অভিযান শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১ ফেব্রম্নয়ারি দিবাগত রাতের্ যাব-১০ এবং বিটিআরসির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ দল যৌথভাবে অভিযান চালায়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের সূত্রধরে অভিযান চালানো হয় ঢাকার সবুজবাগ থানাধীন দক্ষিণ মাদারটেকের সরকার পাড়ার একটি বাড়িতে। বাড়ি থেকে জব্দ হয় বিটিআরসির অনুমোদনহীন ফ্রিকোয়েন্সি ও বিভিন্ন ধরনের বেতার যন্ত্রসহ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চালানোর নানা সরঞ্জাম।
র্
যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার করা হয় মো. মিজানুর রহমান (৩৬) নামের একজনকে। তার পিতার নাম মো. আব্দুর রাজ্জাক। বাড়ি গাজীপুর জেলার গাছা থানাধীন দক্ষিণ কলমেশ্বর গ্রামে। তার কাছে পাওয়া গেছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত ২৮টি বিভিন্ন মডেলের সেট টপ বক্স, ১টি ইনকোডার, ১টি রিসিভার, ১টি মডুলেটর, ২টি এন্টিনা ও ৩টি এলএনবি। এসব সরঞ্জামের দাম কয়েক লাখ টাকা। এসব ভিওআইপি সরঞ্জাম কীভাবে বিদেশ থেকে দেশে আসছে সে বিষয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছে।
র্
যাব কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম আরও জানান, গ্রেপ্তার মিজানুর রহমান বেশ কিছু দিন ধরে বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই ফ্রিকোয়েন্সি ও বিভিন্ন বেতার যন্ত্র সামগ্রী স্থাপন করে। বিদেশি স্যাটেলাইট থেকে বিদেশি বিভিন্ন চ্যানেল ডাউন লিংক করে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিতরণ করছিলেন। এতে করে মিজানুর রহমান অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করলেও সরকার অনেক টাকার রাজস্ব হারাচ্ছিল। ব্যবসার প্রসারের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকার মাধ্যমে আরও উন্নত সরঞ্জাম স্থাপনের চেষ্টা করছিলেন। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
র্
যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে বলেন, 'দীর্ঘদিন অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিটিআরসির নিয়মিত অভিযানের কারণে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ব্যবসাটি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আবারও নতুন করে চালুর চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এমন গোয়েন্দা তথ্যের সূত্রধরেই মূলত অভিযান চালানো হচ্ছে। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার বিরুদ্ধের্ যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিমানবন্দরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কারণ বিমানবন্দর দিয়েই অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামগুলো দেশে ঢুকছে। কে বা কারা বা কোন প্রতিষ্ঠান অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সরঞ্জাম আমদানি করছে তা জানতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নেপথ্যের কুশীলবদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি অভিযান চলছে।'