দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো মুসলিস্নর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। ভোরে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। এদিন ভোর থেকেই আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ইজতেমায় যোগ দেওয়া মুসলিস্ন ছাড়াও জুমার নামাজে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার মুসলিস্নরা অংশ নেন। জুমার নামাজে ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বি এবং কাকরাইল মারকাজ মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের।
প্রথম পর্বের জুমার নামাজে যোগ দিতে ইজতেমা ময়দানের ১৬০ একর জায়গা ছাড়িয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া রোড, তুরাগের দুই পার, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা মুসলিস্নতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। টঙ্গীর বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে থেকেও মুসলিস্নরা জুমার নামাজে শরিক হন। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসলিস্নরা মহাসড়ক ও অলিগলিসহ যে যেখানে স্থান পেয়েছেন জুমার নামাজে অংশ নেন। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেশের লাখ লাখ মুসলিস্ন ছাড়াও ৪৭টি দেশের ২ হাজারের অধিক মুসলিস্ন নামাজে অংশ নেন।
নামাজ শেষে ইজতেমায় আগত মুসলিস্নরা ময়দানে অবস্থান নেন। আশপাশ থেকে আসা মুসলিস্নরা হেঁটে ময়দান থেকে চলে যান। জুমার নামাজে অংশ নিতে কয়েকটি সড়ক ও ফাঁকা জায়গায় দু-তিন ঘণ্টা আগে থেকেই মুসলিস্নরা খোলা স্থানে জায়নামাজ, পুরনো পত্রিকা, হোগলা-পাটি, চটের বস্তা বিছিয়ে বসে যান।
রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় সমাবেশের আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে মাওলানা জুবায়ের অনুসারিদের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। আখেরি মুনাজাতও তিনিই পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি হাবিবুলস্নাহ রায়হান।
এদিকে ইজতেমা মাঠ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা দাবি করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, 'ইজতেমা ময়দানে প্রচুর মানুষ আসছে; স্রোতের মতো। আইনশৃঙ্খলাসহ সবকিছু এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, এরিয়াটা নিরাপত্তার চাদরে যেহেতু ঢেকে দিয়েছি, সুতরাং কোনোরকম কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।'
পুলিশ জানায়, 'ভবিষ্যতেও কোনো ধরনের নাশকতা, ছিনতাই ও রাহাজানির ঘটনা ঘটবে না বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। ধর্মপ্রাণ মুসলিস্নরা যাতে আলস্নাহর ধ্যানে মগ্ন হতে পারেন, জুমার দিনে সবাই মিলে যেন শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রেখে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ইজতেমা মাঠ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন সংস্থা মিলে একযোগে কাজ করছি।'
পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
টঙ্গী প্রতিনিধি জানান, বিশ্ব ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করতে আসার পথে বাসের ধাক্কায় পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হাসান নিহত হয়েছেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা আদালতে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার সকাল ৭টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী মিলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মানিকগঞ্জ জেলা আদালতে কর্মরত এএসআই হাসান একটি পালসার মোটরসাইকেলযোগে (ঢাকা মেট্রো-ল-৬১-৪৩৬৪) ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করতে আসছিলেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মিলগেট এলাকায় এলে পেছন থেকে বলাকা পরিবহণের একটি বাস তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ সময় এএসআই হাসান গুরুতর আহত হন।
তিনি আরও জানান, টঙ্গী থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উলস্নাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন।
আরও দুই মুসলিস্নর মৃতু্য
বিশ্ব ইজতেমায় দুইজন মুসলিস্নর মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নেত্রকোনার কুনিয়া কুমড়ি গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুস সাত্তার (৭০) এবং রাতে একই জেলার বুড়িজুরি গ্রামের এখলাস মিয়া (৭০) মারা যান।
শুক্রবার বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে দুই মুসলিস্নর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজার পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাসপাতাল ও ইজতেমা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ইজতেমায় অংশ নিতে এসে এখন পর্যন্ত চারজন মারা গেছেন। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের ধামাউরা গ্রামের ইউনুস মিয়া এবং একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চৌহদ্দী গ্রামের জামাল উদ্দিন মারা যান।