বাংলাদেশ থেকে গত বছর বিভিন্ন দেশে গেছেন ১৩ লাখের বেশি কর্মী। দেশের ইতিহাসে এক বছরে এটি সর্বোচ্চ। আগের বছরের তুলনায় বিদেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে প্রবাসী আয় বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
তবে দেশের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়নি। আবার পুরুষ কর্মী বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় নারী কর্মী কমেছে ২৭ শতাংশ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার আয়োজিত 'আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি ও প্রকৃতি ২০২৩: অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রতিবছরই অভিবাসন খাত বিশ্লেষণ করে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা।
এতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা বলেন, গুণগত অভিবাসন শুধু কর্মী পাঠানো দেশটির ওপর নির্ভর করে না। এটি দুই দেশের সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরির ব্যাপার। এ কারণেই জাপান ও কোরিয়ায় গুণগত অভিবাসন হচ্ছে। অন্যান্য দেশে এটা নিশ্চিত করতে হলে
জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। কর্মী পাঠানো সব দেশের সঙ্গে আলাদা করে সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করতে পারলেই গুণগত অভিবাসন নিশ্চিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ও রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী। প্রবাসী আয় কমার কারণ কী; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক কারণ থাকতে পারে। ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে গেছে প্রবাসীদের। অনেকেই কাজ না পেয়ে ফিরে আসছেন, যদিও ফিরে আসা কর্মীদের কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তারপরও যারা বিদেশে আছেন, তারা ঠিকই টাকা পাঠাচ্ছেন। টাকা না পাঠালে গ্রামের অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হতো। তাদের অনেকেই গ্রামে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান বলে তা প্রবাসী আয়ে হিসাব হচ্ছে না।
রামরুর প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেই অভিবাসী কর্মী বেড়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিদেশে কর্মী বেড়েছিল ৮৪ শতাংশ। একই সময় নেপালের কর্মী বেড়েছে ৩০০ শতাংশ। শ্রীলংকা থেকেও ১০০ শতাংশের বেশি ছিল বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা।
রামরু বলছে, আগের বছরের তুলনায় বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো কিছুটা বেড়েছে। গত বছর দক্ষ কর্মী গেছেন প্রায় ২৫ শতাংশ। এর আগের বছর এটি ছিল প্রায় ২৩ শতাংশ। এ ছাড়া স্বল্প দক্ষ কর্মী পাঠানো কমেছে আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ। আগের বছরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে সৌদি আরব। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। তবে প্রতিবছর সৌদি আরব থেকে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এলেও গত বছর সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। তবে এর কারণ জানাতে হলে আরও গবেষণা করতে হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়, গত বছর মালয়েশিয়ায় অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, গ্রিসে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়মিতকরণ কর্মসূচিতে ১০ হাজারের বেশি কর্মী নিবন্ধন করেছে, ওমানে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান স্থগিত করা হয়েছে, বাহরাইনে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচার প্রবণতা আগের মতোই দেখা গেছে। এ ছাড়া অভিবাসী আইনে দালালদের সাব-এজেন্ট হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি গত বছরের একটি ইতিবাচক ঘটনা।
২০২৫ থেকে ২০৩৫ পর্যন্ত সালকে অভিবাসন দশক ঘোষণার দাবি জানিয়ে প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করেছে রামরু। এতে বলা হয়, রাজনৈতিক ইশতেহারে অভিবাসীদের নিয়ে যেসব প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছে, তার জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ হোক। অনলাইনে অভিযোগের যে ব্যবস্থা দীর্ঘদিন চালু ছিল, তা দ্রম্নত ফিরিয়ে আনা হোক। আর প্রবাসী আয় বাড়াতে ব্যাংকের প্রতি কর্মীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বল্পমেয়াদি অভিবাসীদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে হবে।