নারী ক্রিকেটার স্বর্ণার চুরির মামলায় আরেক ক্রিকেটারের স্বামী গ্রেপ্তার
প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সদস্য স্বর্ণা আক্তারের করা চুরির মামলায় আরেক ক্রিকেটারের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযান। দুটি আইফোন, মার্কিন ডলারসহ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল চুরির অভিযোগে গত সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বর্ণা। এই মামলায় মঙ্গলবার রাতে দিনাজপুর থেকে আল-আমিনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়র্ যাব-১৩।
বুধবার বিকালে ঢাকার কারওয়ান বাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদ আলী বলেন, পূর্ব রাজাবাজারের একটি ফ্ল্যাটে স্বর্ণাসহ চারজন নারী ক্রিকেটার থাকেন। তাদের প্রত্যেকের আলাদা কক্ষ। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী গত সোমবার সকালে চুরির ঘটনাটি ঘটে। এদিন সকালে ফ্ল্যাটটিতে আল-আমিন এসেছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সদ্য বিয়ে করা এক নারী ক্রিকেটারের স্বামীকে বাসায় রেখে তারা তেজকুনিপাড়া খেলাঘর মাঠে অনুশীলনে যান। কিছুক্ষণ পর আল-আমিন মাঠে এসে স্বর্ণার সঙ্গে কথা বলেন। ছবি তোলার কথা বলে স্বর্ণার মুঠোফোন কোথায়, তা জানতে চান। নিজের কয়েকটি ছবি তুলে তিনি চলে যান। অনুশীলন শেষে স্বর্ণা ব্যাগ খুলে দেখেন, তার আইফোন ১৩ প্রো (যার মূল্য প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা) ও মিনি আইফোন ১৩ মিনি (যার মূল্য প্রায় ৮১ হাজার টাকা) নেই। পরে তিনিসহ অন্যরা ফ্ল্যাটে যান। গিয়ে দেখেন ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে। দারোয়ানকে ডেকে দরজা খুলে দেখেন, ঘরের সব জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে।
মামলায় স্বর্ণা আরও অভিযোগ করেন, তার সাড়ে তিন হাজার ডলার, অন্য দুই নারী ক্রিকেটারের সাড়ে ছয় হাজার টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া মালামালের মূল্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত মঙ্গলবার রাতের্ যাব-১৩ ওর্ যাব-২ এর একটি দল সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে দিনাজপুর জেলায় অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেপ্তার হয় মো. আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযান (২৯)। তার পিতার নাম মৃত আবুল কালাম। বাড়ি ঢাকার চকবাজারে। তার কাছে পাওয়া যায় ৪টি আইফোনসহ ৫টি মোবাইল ফোন, প্রাইম ব্যাংকের ১টি চেক বইয়ের পাতা, একই ব্যাংকের ১টি মাস্টার কার্ড, বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা, ৩টি হাতঘড়ি, স্বর্ণের ৪টি চেইন, ১টি নোজপিন (নাক ফুল), ১টি ব্রেসলেট ও ২টি আংটি এবং ১টি হ্যান্ড ব্যাগ।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বলেছে, সে মূলত একজন প্রতারক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি খুলে নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিত। সুন্দরী নারীদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত বিভিন্ন স্টাইলে ছবি পোস্ট করত। এ ছাড়া নিজেকে প্রচার করতে টিকটক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করত। এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলত। পরে ওইসব নারীকে বিয়ের প্রলোভনে ফেলত। ওইসব নারীর সঙ্গে দেখা করত। আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে আল আমিন একজন বড় কাপড় ব্যবসায়ী বলেও পরিচয় দেয়।
র্
যাব কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সূত্র ধরেই পরিচয় হয় স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে। সম্পর্ক তৈরির ১৭ দিন পর গত ১২ জানুয়ারি আল আমিন নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আল আমিন নারী ক্রিকেটারকে সঙ্গে নিয়ে তেজকুনিপাড়ার একটি ফ্ল্যাটে ওঠে। স্বাভাবিক কারণেই অন্যান্য নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে আল আমিনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যবসায়ীকসহ নানা কারণ দেখিয়ে অন্যান্য নারী ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকার বেশি ধার নেয়। ধার পরিশোধ করতে পারছিল না।
এজন্য গত ২৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্বর্ণাসহ তার তিনজন তেজকুনিপাড়ার মাঠে অনুশীলন করতে যান। সেখানে আল আমিন উপস্থিত ছিল। এ সময় আল আমিন স্বর্ণার রুম থেকে মার্কিন ডলার, চেক বই, ভিসা কার্ডসহ অন্যান্য নারী ক্রিকেটারদের ব্যাগ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা চুরি করে। বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে স্বর্ণাসহ তার সতীর্থরা চুরির বিষয়টি দেখতে পান। আল আমিন স্বর্ণার ব্যবহৃত একটি আইফোন ঢাকার একটি দোকানে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এরপর বাসযোগে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর যায়। রাতে রংপুরের একটি হোটেলে থাকে। পরদিন রংপুর থেকে দিনাজপুর যায়।
র্
যাব কর্মকর্তা জানান, আল-আমিন ২০১১ সালে ঢাকার একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। তার আগে বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে চাকরি করেছে। ২০১৭ সালে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নারীদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকান্ড ও বস্ন্যাকমেইল শুরু করে। প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা পাওয়ার পর সে পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করত। ২০২২ সালে প্রথম বিয়ে করে আল আমিন। তার আগে বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়েছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এবারও সে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে আত্মগোপনের জন্য পালানোর চেষ্টা করেছিল। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা আছে। তিনবার বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খেটেছে। কিন্তু স্বভাব বদলাতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ব্যাংককে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে অভিষেক ঘটে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের। ২০১১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভ করে। এরপর থেকে বিগত দশকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী ক্রিকেটারদের ওয়ানডে এবং টি-২০ ফরমেটে সাফল্যের ধারা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটারা টি-টুয়েন্টি এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বিজয়ের এই মুকুট এসেছিল নারী ক্রিকেট দলের হাত ধরেই। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এই সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে।