অমলিন স্মৃতি স্মরণের ভাষার মাস শুরু
প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আজ থেকে শুরু হলো সেই ভাষার মাস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রম্নয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস এই ফেব্রম্নয়ারি। আজ সকালে যে সূর্যের উদয় হয়েছে, তাতে মিশে আছে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি'র করুণ সুর। বাঙালির কাছে এই মাস ভাষার মাস, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। তাই তো বাঙালি জাতি ফেব্রম্নয়ারি মাসজুড়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাবে ভাষা শহীদদের। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রম্নয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষকাল। ভাষাকে কেন্দ্র করে জীবনজগৎ, সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির পরিমন্ডলের যাবতীয় মানচিত্রের বদল ও নতুনরূপে বিনির্মাণের সংগ্রাম হচ্ছে 'একুশ'। সেই ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পূর্ণ হয়ে আজ ১ ফেব্রম্নয়ারি। ১৯৫২ সালের এই মাসে ভাষা আন্দোলনে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করেন। মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার এই সংগ্রামে সেদিন ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে আসেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষা নিয়ে এমন আন্দোলন আর কোথাও হয়নি। একুশের ৭২ বছরে দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস। দেশ-বিদেশে সর্বত্র বাড়ছে ফেব্রম্নয়ারি আর ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক প্রাণচাঞ্চল্য। ১৯৪৭-পরবর্তী আমাদের জাতীয় জীবনের সব জাগরণ, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনার মূলে জড়িয়ে আছে এ মাসের স্মৃতি। ভাষার লড়াইকে কেন্দ্র করে অভু্যদয় ঘটে একটি স্বাধীন দেশের। বিশ্বে এ গৌরবের অধিকারী একমাত্র আমরাই। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের উৎসধারা এই ফেব্রম্নয়ারি মাসের আগমনে যাদের নাম সবার আগে আমাদের মনে আসে তারা হলেন- সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় জীবন দিতে হয়েছিল পরিচিত এই ক'জন যুবকসহ আরও বেশ কয়েকজনকে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং সূত্র অন্বেষণ করতে গেলে সবার আগে মনে আসে জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলস্নাহর কথা। আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরও অনেক ভাষা সৈনিকের নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আবুল কাসেম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ১৭ দিনের মাথায় ১ সেপ্টেম্বর সাংস্কৃতিক সংগঠন 'তমদ্দুন মজলিস' গঠন করে ১৫ সেপ্টেম্বর পুস্তিকা আকারে ভাষা আন্দোলন ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে। ১৮ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকার নাম ছিল 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু'। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিলগ্নে জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর জিয়াউদ্দীন আহমদ হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের অনুরূপ পদক্ষেপ হিসেবে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করে বক্তব্য রাখেন। জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে 'পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা' নামে একটি নিবন্ধ রচনা করেন। এতে তিনি বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে তা রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তত্মর হবে বলে মতপ্রকাশ করেন। এটিকে তিনি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের নীতিবিরোধী বলেও অভিমত প্রকাশ করেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলস্নাহর এ বক্তব্যে তৎকালীন বাঙালিসমাজ উদ্দীপ্ত হয়। কমরেড পত্রিকায় 'দি ল্যাংগুয়েজ প্রবলেমস অব পাকিস্তান' নামে ১৯৪৭ সালের ৩ আগস্ট নিবন্ধটি প্রকাশ হয়। সে কারণে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ ভাষা আন্দোলনের উৎসপুরুষ হিসেবে বিবেচিত। ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন ইউনেস্কো ২১ ফেরুয়ারি দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখন বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়। আজ ১ ফেব্রম্নয়ারি ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকেই সরকারিভাবে এবং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ রাজধানী ও বিভিন্ন জেলা শহরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রকাশিত হবে স্মরণিকা, আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।