সংরক্ষিত নারী আসন

স্বতন্ত্রদের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ৪৮, জাতীয় পার্টি ২

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করে ও স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। এতে তারা ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের মধ্যে ৪৮টি পেতে যাচ্ছে। বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা জোটবদ্ধ হওয়া সংক্রান্ত চিঠি ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছে প্রতিনিধি দল। দুপুরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্বাদশ সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন। দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া বলেন, 'দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের বিষয়ে আমরা কাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছি, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সই করা চিফি নিয়ে (ইসিতে) এসেছি।' দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, ১৪ দলীয় শরিক জাসদ ১টি ও ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি আসনে জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি হয়েছেন ৬২ জন। কল্যাণ পার্টি ১টি আসন পেয়েছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। প্রতিনিধি দলের প্রধান হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, 'আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ সদস্য সমর্থন দেবেন। সেই সমর্থনসূচক আলাদা আলাদা চিঠি তাদের সইসহ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সন্নিবেশিত করে ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।' সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি ২টি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসন পায়। ইতোমধ্যে নারী আসন বণ্টনের সুবিধার্থে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল ও স্বতন্ত্রদের কাছে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দলে যোগদান বা জোট করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্বাদশ সংসদের হুইপ স্বপন বলেন, 'ইসির চিঠির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জেটের আরও দুজন সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত নারী আসনে যাদের মনোনয়ন দেবে তাদের তারাও (স্বতন্ত্র) সম্মতি দিয়েছেন।' আওয়ামী লীগ ৩৮টি আসন বরাদ্দ পেত। স্বতন্ত্রদের ১০টি আসন নিয়ে এখন আওয়ামী লীগের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৪৮টি। বাকি দুটি থাকছে জাতীয় পার্টির। আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, আওয়ামী লীগের নিজস্ব সংসদ সদস্য ২২৩ জন ও জোটের ২ জন। সব মিলিয়ে এখন সংরক্ষিত ৫০টির মধ্যে ৪৮টি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হবে। তিনি জানান, এটা জোট হচ্ছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা স্বেচ্ছায় তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগের কাছে সমর্পণ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে তাদের সমর্থন দেবেন, সেই সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। 'ইসি সচিব প্রত্যেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, তাদের অবস্থান কী। তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ক্ষমতাটি অর্পণ করেছেন। ৬২ জনই তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে সমর্পণ করেছেন। আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে, তাদের সমর্থন দেবেন তারা', বলেন হুইপ স্বপন। আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলে উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানও ছিলেন। আ'লীগের নতুন মুখই বেশি এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন মুখই বেশি আসতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তাদের দলের হয়ে ৩৫-৪০ জন নারী নতুন করে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হতে পারেন। এর মধ্যে দু-একজনের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। সংরক্ষিত সদস্য বাছাই করার সঙ্গে অতীতে যুক্ত ছিলেন, এমন একজন দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, পুরানোদের মধ্যে বেশির ভাগই বাদ পড়বেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ভাগ থেকে ১৪ দলের শরিকদের পছন্দের তিন-চারজন নারীকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনে একটা বড় সংখ্যায় মনোনয়ন পান পিতা বা স্বামীর অবদানের কারণে। বিশেষ করে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে এমএনএ ছিলেন, এমন নেতাদের পরিবারের সদস্যরা গুরুত্ব পান। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে দলে ভূমিকা রেখেছিল, এমন পরিবারের সদস্যদেরও সংসদ সদস্য করা হবে। এছাড়া ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দায়িত্ব নেওয়ার পর যাদের পাশে পেয়েছিলেন, এমন নারীনেত্রীদের কেউ কেউ জায়গা পাবেন। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। যেমন যারা জোট বা দলের অন্যদের সুযোগ করে দিতে সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। বিনোদন জগৎ, লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে থেকে অন্তত দু'জনকে স্থান দেওয়া হতে পারে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা থেকেও দু-তিনজন সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য করা হতে পারে। গত সংসদে যেসব জেলা থেকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করা হয়নি, সেসব জেলা এবার অগ্রাধিকার পাবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।