স্বাস্থ্য খাতে আস্থা নেই বলেই মানুষ বিদেশে চলে যাচ্ছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, 'এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ফিরিয়ে আনতে গ্রাসরুট লেভেলে কাজ শুরু করেছি মাত্র।' রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সরকারি হাসপাতালে সেবায় আস্থা না থাকায় রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে যান এবং বিদেশে যান- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, 'রাতারাতি কোনো কিছুর পরিবর্তন করা সম্ভব না। আস্থা নেই বলেই মানুষ (বিদেশে) চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ ভারত যাচ্ছে, ব্যাংকক যাচ্ছে। রংপুর থেকে মানুষ ঢাকায় আসছে, তার মানে আস্থার অভাব। আমি দুই জায়গায় ভিজিট করলাম। আমাকে আরও সুযোগ দিতে। আমি চেষ্টা করছি। আমি পারব না শতভাগ, তবে আমি চেষ্টা করব।'
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াবেন, আমরা দেখেছি বরাদ্দ ফেরত যায়- এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি সংশ্লিষ্ট সচিব ও ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে বসে একটা বাৎসরিক পরিকল্পনার কথা হচ্ছে। আমার ভাবনা হচ্ছে, যে প্রকল্প এবং যে কার্যক্রম নিলে জনসাধারণের উপকার হবে সে ধরনের প্রকল্প নেব। অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প নিলাম বা কোনো খাতে খরচ করলাম, সে ধরনের কোনো বরাদ্দ নেব না যাতে সাধারণ মানুষের কাজে না লাগে।'
সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃতু্যর তদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি আদালতে রয়েছে তাই এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তাহলে আদালত অবমাননা হয়ে যাবে। যে তদন্ত রিপোর্ট হয়েছে এবং হাইকোর্ট থেকে কী রায় দেয় সেটা আমরা দেখি আগে, তারপর।'
যারা অবৈধ ক্লিনিক চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। না হলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তিনি। রোববার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
অনিবন্ধিত হাসপাতালের বিষয়ে আপনাদের পদক্ষেপ কী থাকবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'অবৈধ এবং লাইসেন্স ছাড়া যে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে আমি এ ব্যাপারে কথা বলেছি। হঠাৎ করে বন্ধ করলে তো হবে না। আমাকে তো পরীক্ষা করতে হবে। আমার কাছে তালিকা এসেছে, আমরা সেই তালিকা ধরে কাজ করব। কোনো হাসপাতাল অবৈধ কিংবা ইলিগ্যালভাবে কাজ করবে, সেটা অন্তত আমি হতে দেব না। এ ব্যাপারে আমার কঠোর নির্দেশ।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, যারা এ ধরনের ক্লিনিক চালাচ্ছেন তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করুন। না হলে আমরা কিন্তু তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব এবং তাদের একটা সময় দেব। হঠাৎ করে আমরা একটা ক্লিনিক বন্ধ করতে পারি না। একটা নিয়ম আছে, প্রসিডিউর আছে। আমি সেভাবে এগোব।'
এদিকে, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর সংকট নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমরা ক্রয় পরিকল্পনা অনেক আগেই অনুমোদন দিয়েছি। ক্রয় পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে রাজস্ব খাতসহ দুই জায়গা থেকেই কেনার কথা বলা হয়েছে। আমরা অপশন দিয়েছিলাম এক জায়গা থেকে কেনা। তারা যে অপশন দিয়েছিল তা অনেক আগেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটার কার্যক্রম চলছে। সহসাই এই ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।'
ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে- প্রশ্নে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, 'ওষুধের যে কাঁচামাল এবং ডলারের দাম বেড়ে গেছে। কাঁচামাল আমরা সব সময় বিদেশ থেকে আনি। মাত্র ৫ শতাংশ কাঁচামাল দেশে তৈরি হয়। সেটার দাম যেমন বেড়েছে, ডলারের দামও বেড়েছে। এরপর দেশে দেশে বিদু্যতের দাম বেড়েছে, বেতন বেড়েছে। সবকিছু মিলে আমাদের কোম্পানিগুলো বলছে, তারা অত্যন্ত অসহায়, বন্ধ করে দেওয়ার মতো অবস্থা। প্রথম শ্রেণির কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলো চলতে পারছে না। ডলারের যে দাম বেড়েছে আমরা সে হিসেবে বাড়িয়েছি। আমাদের স্যালাইনগুলোর দাম এত কম যে উৎপাদন করে লাভ করতে পারে না। এজন্য অনেক কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বাড়তে দেব না। আমরা কাজ করতেছি। একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যদি বাড়াতে হয় তাহলে কমিটির মাধ্যমে বাড়াতে হবে।'
এদিকে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রম্নত ছড়ায়, তবে এতে প্রাণহানির শঙ্কা কম বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
করোনার নতুন ধরনের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এমন প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দিতে বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, 'করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রম্নত ছড়ায়। কিন্তু এতে প্রাণহানির শঙ্কা কম। এই ভ্যারিয়েন্টের এগেনেস্টে আমাদের যে ভ্যাকসিন আছে সেটা কার্যকরী এবং এটা দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।'
করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের বাতাসে যে পরিমাণ ধুলাবালি, ময়লা আছে তা খুব একটা সুখকর নয়। আমরা মাস্ক পরতে বলছি। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছি। আমরা ফ্রন্ট লাইনে যেমন ডাক্তার আছেন, তাদের বলছি আমাদের টিকা আছে, আপনারা টিকা নিয়ে নেবেন।'
নিউমোনিয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, এই সিজনে অন্যান্য বছরের তুলনায় অবশ্যই নিউমোনিয়ার প্রকোপ অনেক বেশি। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডগুলো রোগীতে ভর্তি হয়ে গেছে।