শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

উত্তরায় নয়, এবার টঙ্গীতেই হবে বিশ্ব ইজতেমা

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
উত্তরায় নয়, এবার টঙ্গীতেই হবে বিশ্ব ইজতেমা

টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা মঞ্চের পাশাপাশি উত্তরার দিয়াবাড়িতেও এবার বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করায় প্রস্তুতি সব নিলেও সেখানে ইজতেমা হচ্ছে না।

শনিবার বিকালে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান জানান, 'আমরা গত সপ্তাহে পরামর্শ করছি। মুরুব্বিরা বসে আলোচনা করে দুই মঞ্চ বন্ধ করে রেখেছি। এক মঞ্চে হবে ইজতেমা।'

২ ফেব্রম্নয়ারি থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবারও এক মঞ্চে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। আর এই ইজতেমায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিস্নদের

সঙ্গে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছে মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। সামিয়ানা টানানো, রাস্তাঘাট মেরামত, নিচু জমি ভরাট ও পয়োনিষ্কাশন কাজ চলছে।

ইজতেমায় প্রথম পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুসলিস্নরা। ৪ ফেব্রম্নয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব।

মাওলানা সা'দ অনুসারীরা ৯ ফেব্রম্নয়ারি দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১১ ফেব্রম্নয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।

টঙ্গীতে তুরাগ তীরে প্রায় ১৬০ একর জমির ওপর তাবলিগ জামাতের সদস্যদের থাকার জন্য বিশাল চটের প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম পাশের নিচু জমিতে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। মুসলিস্নদের যাতায়াতের জন্য তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মাণ করছেন। মাঠে অবস্থানের জন্য জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় (ভাগে) বিভক্ত করা হচ্ছে। বিদু্যৎ লাইন, গ্যাস লাইন, পানির পাইপ লাইন, পানির ট্যাঙ্কি বসানো, বাঁশের খুঁটি বসানো, নামাজের দাগ কাটা, মাঠের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারসহ প্যান্ডেল সাজগোছের কাজ করা হচ্ছে। মঞ্চ নির্মাণ, মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে টিনের চালা ও ইটের গাঁথুনির দেওয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসলিস্নদের সুবিধার্থে খাবার পানি, অজুখানা, গোসলখানা সংস্কার, পুরনো টিউবওয়েল, বাথরুম ও কাঁচা-পাকা টয়লেট সংস্কার, ইটের সলিং দিয়ে রাস্তা তৈরি ও ড্রেন সংস্কার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতি বছরই ইজতেমা শুরু হওয়ার ৭ দিন আগে ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছায় কাজ করতে আসি।

ইজতেমা ময়দানের অভ্যন্তরে রাস্তা মেরামত কাজ করছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদেশি মেহমানরা স্বাচ্ছন্দ্যে বয়ান মঞ্চে যাওয়ার পথ নির্মাণের জন্য কাজ করছি।

বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী (মাওলানা জোবায়ের অনুসারী) মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এগিয়ে চলছে ইজতেমার প্রস্তুতি কাজ। ইতোমধ্যে ময়দানের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে।

ইজতেমার প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মাহফুজ বলেন, এবার বিশ্ব ইজতেমায় ১০৫টি খিত্তা থাকবে।

সম্প্রতি টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভায় ইন্সপেক্টর জেনারেল আবদুলস্নাহ আল মামুন বলেন, বিশ্ব ইজতেমা সাফল্য করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জোবায়ের পন্থি তাবলিগ জামাতের মুরুব্বিরা উত্তরায় দিয়াবাড়ি এলাকায় বিশ্ব ইজতেমার মুসলিস্নদের জন্য প্যান্ডেল নির্মাণকাজ শুরু করে, কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো অনুমতি নেয়নি। উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিশ্ব ইজতেমার মুসলিস্নদের জন্য প্যান্ডেল নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে মুরুব্বিদের তিনি বলেছেন, আমরা চাই আপনারা ভবিষ্যতে যৌথভাবে কাজ করবেন।

'ইজতেমা স্থলে হকার

অবস্থান করতে দেওয়া

হবে না'

এদিকে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (জিএমপি) মো. মাহবুব আলম বলেছেন, এবার একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ইজতেমা স্থল ও এর আশপাশে কোথাও হকারকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না। কারো সহযোগিতায় যদি হকার বসে তাহলে হকার এবং তাকে অবস্থান করতে আশ্রয় দাতা বা সহায়তাদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার সকালে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা ও ময়দান পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জিএমপি কমিশনার ওইসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, কামারপাড়া রোডসহ ইজতেমা এলাকায় কোনো প্রকার অবৈধ দোকান এবং হকারকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না। অন্যান্য স্থায়ী দোকানি যারা আছেন তাদের দোকানের সামনে যদি কোনো হকার বা অবৈধ দোকান বসায় তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

\হজিএমপি কমিশনার বলেন, দু'পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতি বছর তাদের মধ্যে যে দাবি-দাওয়া নিয়ে সমস্যাটা সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। প্রথম পক্ষ ইজতেমা শেষ হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কোনো প্রকার ভাঙচুর ছাড়া মাঠের ছামানা প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে ময়দান ত্যাগ করবে। আবার একইভাবে দ্বিতীয় পক্ষও তাদের ইজতেমা শেষে নির্ধারিত সময়ে প্রশাসনের কাছে মাঠ ও সরঞ্জামাদি শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করবে। দু'পক্ষের মধ্যে সুন্দরভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সমঝোতা হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে ইজতেমার মুসলিস্নদের সব নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে।

এবারের ইজতেমায় জিএমপির ৬ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াওর্ যাব, ডিএমপি, পোশাকে ও গোয়েন্দা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্বপালন করবেন।

জিএমপি কমিশনার বলেন, ইজতেমার প্রস্তুতির পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, জিএমপি কমিশনার মো. মাহবুব আলম, উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ, মো. ইব্রাহিম খান, ডিএমপি'র প্রতিনিধি, ইজতেমার দুইপক্ষের মুরুব্বি ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২ ফেব্রম্নয়ারি শুরু হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ পর্ব চলবে ৪ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত। আবার চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রম্নয়ারি ইজতেমার ২য় পর্ব শুরু হয়ে তা চলবে ১১ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে