দুই বাংলাদেশি ও তিন বিদেশিসহ গ্রেপ্তার ৫

ঢাকায় বসে মাদক রুট নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকায় জব্দ হওয়া শত কোটি টাকা মূল্যমানের কোকেন চোরাচালানের সূত্রধরে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই বাংলাদেশি ও তিন বিদেশি নাগরিকসহ পাঁচ জন। কোকেন চোরাচালানের নেপথ্যে রয়েছেন ডন ফ্রাঙ্কি নামের এক নাইজেরিয়ান মাদক মাফিয়া। তিনি আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়া চক্রের সদস্য। ৯ বছর ধরে ঢাকায় বৈধভাবে বসবাস করে গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তিনি কোকেন চোরাচালান করছিলেন। রোববার দুপুর তিনটায় ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পুরানো প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিলস্নাহ ফারুকী। তিনি বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জব্দ হওয়া ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের একশ' কোটি টাকা মূল্যমানের কোকেন জব্দের পর সম্মিলিত তদন্ত চলছে। এতবড় কোকেনের চালান ইতোপূর্বে জব্দের ঘটনা ঘটেনি। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে কারা কিভাবে জড়িত সে বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে। তিনি আরও বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে জব্দ হওয়া চালানটির সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হয় ৫ জন। যার মধ্যে দুই জন বাংলাদেশি। বাকি তিন জন আফ্রিক মহাদেশের নাইজেরিয়ার নাগরিক। গ্রেপ্তাররা হলেন- কোকেন চোরাচালান চক্রের অন্যতম প্রধান হোতা ও আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়া চক্রের সদস্য নাইজেরিয়ার নাগরিক ডন ফ্রাঙ্কির ম্যানেজার বাংলাদেশি নাগরিক আসাদুজ্জামান আপেল (২৭) ও তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম রনি (৩৪)। গ্রেপ্তার অপর তিনজন হচ্ছেন, ক্যামেরুনের নাগরিক ক্যালভিন ইয়েঙ্গে, নাইজেরিয়ার নাগরিক ননসো ইজেমা পিটার ওরফে অস্কার (৩০) ও নাডুলে এবুকে স্ট্যানলি ওরফে পোডস্কি (৩১)। তিনি জানান, বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসাবে ব্যবহার করে কোকেন চোরাচালানের মূলহোতা ডন ফ্রাঙ্কি। তার আসল নাম জ্যাকব ফ্রাঙ্কি। তিনি বিগ বস হিসেবে পরিচিত। তিনি আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়া চক্রের সদস্য। বাংলাদেশে বসবাস করা নাইজেরিয়ান সমিতি বা কমিউনিটির প্রেডিডেন্ট তিনি। ৯ বছর ধরে বাংলাদেশে বৈধভাবে বসবাস করছেন। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসা করেন বলে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক জানা গেছে। তবে কাকতালীয় হলেও সত্য গত ৯ মাস ধরে তিনি বাংলাদেশে নেই। নয় মাস আগেই তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তবে স্থায়ী না অস্থায়ীভাবে ছেড়েছেন সেটি জানার চেষ্টা চলছে। কোকেনের বড় চালানটি জব্দ হওয়ার পর তার নাম এসেছে। স্বাভাবিক কারণেই তার বাংলাদেশে ফেরার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই আমরা ধরে নিচ্ছি। প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে তিনি নাইজেরিয়ায় বসেই বিভিন্ন দেশের মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় করছেন বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার রনি এই সিন্ডিকেটের বাংলাদেশি সমন্বয়কারী। তিনি একটি এগ্রো মেশিনারিজ কোম্পানির পরিচালক। ডন ফ্রাঙ্কির সঙ্গে ২ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। রনির মূল কাজ মাদক বহনকারীদের দেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ মাদক নিয়ে আসা ব্যক্তির জন্য কোনো কোম্পানির নামে দাওয়াতপত্র তৈরি করা, হোটেল বুকিং করা ও ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। তিনি ম্যাসপেক্স লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির নামে ভুয়া দাওয়াতপত্র বা ইনভাইটেশন কার্ড তৈরি করে মাদক পরিবহনকারীর কাছে পাঠাতেন। সেই কার্ডের সূত্রধরে তারা অন এরাইভাল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসত। অর্থাৎ বিমানবন্দরে আসার পর তাদের ভিসা করা হতো। রনির মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইস বিশ্লেষণ করে একাধিক ভুয়া ইনভাইটেশন লেটারসহ ডন ফ্রাঙ্কির সঙ্গে যোগাযোগ থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, রনির কাছেই ডন ফ্রাঙ্কির ঢাকার বারিধারায় অবস্থিত অফিস-কাম বাসার ঠিকানা পাওয়া যায়। সেই বাসায় পাওয়া যায় কোকেন পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ল্যাগেজ ও ৭০ গ্রাম কুশ মাদক। ডন ফ্রাঙ্কির পরিবর্তে তার ভাই উইসলি ও ডন ফ্রাঙ্কির ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল কোকেন ব্যবসা দেখাশুনা করতেন। আপেলের তথ্য মতে গ্রেপ্তার করা হয় দুই নাইজেরিয়ান নাগরিককে। গ্রেপ্তার রনির পিতার নাম গোলাম ফারুক। বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থানা এলাকায়। আপেলের পিতার নাম মোতালেব সরকার। বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহার থানা এলাকায়। এই নিয়ে কোকেনের চালান জব্দের সঙ্গে জড়িত ৬ জন গ্রেপ্তার হলো। এর আগে কোকেন বহনকারী নারী মালাউয়ের বাসিন্দা নোমথানডাজো তোয়েরা সোকো (৩৫)। মাদকটির পার্শ্ববর্তী একটি দেশে পাঠানোর কথা ছিল বলেও জানান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।