শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দন্ডিত নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস প্রশ্ন তুলেছেন, তার বিরুদ্ধে ওই মামলার বাদী আসলে কে, শ্রমিকরা, নাকি সরকার?
তিনি বলেছেন, 'আমার দিক থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। সরকার বারবার বলতেছে, সকল পর্যায়ে থেকে বলতেছে, এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা তো (সাংবাদিক) সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কি সরকার করল, নাকি শ্রমিক করল? এ জবাবটা আমাকে দেন।
ইউনূস নিজেই উত্তর দেন, 'এটা কলকারখানা অধিদপ্তর, সরকারের অধিদপ্তর করেছে। শ্রমিকেরা করে নাই। শ্রমিকেরা এর কিছুর মধ্যে নাই।'
ইউনূসের পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এ মামলায়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রোববার শ্রম আপিল
ট্রাইবু্যনালে আপিল করে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক ছিল আমাদের একটা স্বপ্ন। আমরা পৃথিবীকে বদলাতে চাই। দারিদ্র্যকে মুছে ফেলতে চাই। এটাই ছিল আমাদের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা পেছনে লেগেছিলাম। কিন্তু যারা এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঙ্গে ছিলেন, তাদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে।'
আপিলের পর তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে ট্রাইবু্যনালের বিচারক এম এ আউয়াল আসামিদের জামিন বহাল রাখেন। সেইসঙ্গে শ্রম আদালতের রায়সহ মামলার নথি আগামী ৩ মার্চ আদালতে উপস্থাপনের তারিখ রেখেছেন তিনি।
এজলাস থেকে বের হয়ে ইউনূস সাংবাদিকদের সামনে অন্য আসামিদের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।
তার ভাষ্য, এ মামলার আসামি নূরজাহান বেগমের হাত দিয়েই জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু হয়। মোহাম্মদ শাহজাহানও গ্রামীণ ব্যাংকের গোড়া থেকে সঙ্গে আছেন। আশরাফুল হাসান বুয়েট থেকে পাস করে যোগ দিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকে।
ইউনূসের আইনজীবী আবদুলস্নাহ আল-মামুনও মামলার বাদী নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রীয় সর্বমহল এমনকি বিদেশিদের কাছেও বলা হচ্ছে- এ মামলা সরকার করেনি। এ মামলা শ্রমিক করেছে। কিন্তু ঘটনাটা সঠিক নয়। সরকার তার প্রতিষ্ঠান কলকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ মামলা করেছে। শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হয় নাই, বর্ধিত ছুটি দেওয়া হয় নাই এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি- এমন তথ্য দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।'
'সরকারি নির্দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান এ মামলা করেছে। এ মামলায় যে রায় হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ৩০৭ ধারা অনুযায়ী এ মামলায় শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। কারণ লেবার আইনের ২৩৬ ধারা অনুযায়ীই এ মামলার শাস্তির বিধান আছে। এ ধারাতেই বলা আছে, যদি বকেয়া থাকে তাহলে সেটা পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। এটা না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে। পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইন অনুযায়ী এটা আদায় করা হবে।'
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, 'সরকারের মামলা হলে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থাকত অথবা পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস থাকত। আমি একজন বেসরকারি আইনজীবী। উনারা বেসরকারিভাবে আমাকে হাইকোর্টে এনগেজ করেছিলেন, বিচার কি আদালতে করেছিলেন, এখানেও করেছেন, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান নিজেই মামলা পরিচালনা করে।'
ইউনূসের বিরুদ্ধে এ মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি এই মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। তবে আপিলের শর্তে সেদিনই সাজাপ্রাপ্তদের এক মাসের জামিন দেওয়ায় কাউকে কারাগারে যেতে হয়নি। ১১ জানুয়ারি ৮৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিলর প্রক্রিয়া শুরু করেন ইউনূসের আইনজীবীরা।