শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আগামীকাল বড় শোডাউন করতে চায় বিএনপি

হাসান মোলস্না
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আগামীকাল বড় শোডাউন করতে চায় বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিনে অর্থাৎ আগামীকাল ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সারাদেশে বড় শোডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে রাজধানীতে বড় জমায়েত করে নতুন নির্বাচনের পক্ষে জনমতের বিষয়টি দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জানান দিতে চায় দলটি। এজন্য পূর্বঘোষিত আগামীকালের কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি সফলে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১০ জানুয়ারি নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। আর প্রথম অধিবেশন বসবে আগামীকাল ৩০ জানুয়ারি। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওইদিন বেলা তিনটায় এ অধিবেশন শুরু হবে। প্রথম অধিবেশনকে কেন্দ্র করেই দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন পরবর্তী প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে হরতাল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির পরিবর্তে নিরীহ গোছের কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চাচ্ছে দলটি। এজন্য গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারির পর আগামীকালও কালো পতাকা মিছিলে কর্মসূচি পালন করবে তারা। এদিন রাজধানীতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেও কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। কালোপতাকা মিছিল সফল করতে এরই মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতারা। সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনে বড় জমায়েত করতে প্রত্যেক ইউনিট নেতাকর্মীদের পৃথকভাবে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।

কালো পতাকা মিছিলের মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত

সদস্য সচিব এজিএম শামসুল হক বলেন, নেতাকর্মীদের মনোবল এখনো সুদৃঢ় আরও শক্ত। যে কোনো কর্মসূচি পালনে তারা সব সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে আছেন। 'ফ্যাসিবাদ' সরকারের বিরুদ্ধে তাদের চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে মঙ্গলবারের কর্মসূচি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এদিন নেতাকর্মীদের ঢল নামবে। কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল শুরু হবে।

বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর জামিন প্রক্রিয়া ভালোভাবে এগুচ্ছে। নেতাকর্মীরা মুক্তি পেলে আগামী মাসে ফের কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে ফেরার ভাবনাও আছে বিএনপিতে। কর্মসূচি নির্ধারণে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে প্রায় প্রতিদিন বৈঠক হচ্ছে। মঙ্গলবারের কালো পতাকা মিছিল থেকে ফের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

বিএনপি নেতারা জানান, দীর্ঘ আড়াই মাসের আন্দোলনে তাদের অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। একটা পরিবর্তনের আশায় তারা সর্বোচ্চ ভূমিকা নিয়ে আন্দোলন করলেও সেই ফসল তারা ঘরে তুলতে পারেননি বলে আশাহত দলটির নেতাকর্মীরা। বিগত ১৭ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা আজ নিঃস্ব। মামলা-হামলায় জর্জরিত প্রত্যেক নেতাকর্মীর এখন বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে। আদালত আর কারাগারে দৌড়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন তারা। এর ফলে কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন চরম হতাশা কাজ করছে তেমনি অনেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় দলকে আবারো টেনে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটিয়ে নতুন উদ্যমে মাঠের আন্দোলনে ফিরতে চান তারা। এর প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে বড় জমায়েতের কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।

কালো পতাকা মিছিরের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, কালো পতাকা মিছিল নিয়ে ঠাট্টা করেছে আওয়ামী লীগ। তারা একে শোকের কর্মসূচি বলছে। আসলে আওয়ামী লীগ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তারা এ দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এর চেয়ে আর বড় কোনো শোক নেই। গণতন্ত্র ফিরে না আসা পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলবে। তবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত তাদের।

এদিকে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা কালো পতাকা মিছিল ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। হোটেল, মেস ও সন্দেহজনক যানবাহনে নিয়মিত তলস্নাশি অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া ঢাকার ধর্মীয় উপাসনালয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে নিয়মিত চেকপোস্ট চলছে। যাতে যেকোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।

একই বিষয়ের্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে বলেন, ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এছাড়া চেকপোস্ট বসিয়ে তলস্নাশি অভিযান অব্যাহত আছে। বাড়ানো হয়েছে পেট্রোল ডিউটি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাইবার ওয়ার্ল্ডে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং চলছে। যাতে করে গুজব ছড়িয়ে কেউ মিছিলের আড়ালে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। প্রস্তুত রয়েছের্ যাবের বম্ব ডিসপোজাল টিম, হেলিকপ্টার, ডগ স্কোয়াড ও বিশেষ টিম। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছের্ যাব।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে ৭ জানুযারি নির্বাচন পর্যন্ত পাঁচ দফায় ৭ দিন হরতাল করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এছাড়া ১২ দফায় ২৩ দিন সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ৮দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে দলটি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে গণসংযোগ ও আলোচনা সভার মতো নিরীহ ও ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এরপর গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেছে বিএনপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে