৩০ জানুয়ারি ফের কালো পতাকা মিছিল বিএনপির

ওরা ভারত-চীন-রাশিয়ার সরকার :গয়েশ্বর

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
টানা তিন মাস 'আত্মগোপনে' থাকার পর শনিবার রাজধানীতে 'কালো পতাকা' হাতে মিছিল করেছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ে ঘোষিত দুই দিনের কর্মসূচির শেষদিনে দেশের বিভিন্ন মহানগরে কালো পতাকা মিছিল বের করে দলটি। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মসূচি থেকে আগামী ৩০ জানুয়ারি দেশের সব জেলা ও মহানগরের অন্তর্গত থানা-উপজেলা ও পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিলে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 'অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের' দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করবে দলটি। ওইদিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। নয়াপল্টনে কালো পতাকা মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, 'এই সরকার ভারত, চীন, রাশিয়ার সরকার। তাই এই সরকারকে মানতে বাধ্য নই।' তিনি বলেন, '৭ জানুয়ারি মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায় নাই। ৭ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ৭ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর তারেক রহমান ৯৩ শতাংশ মানুষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুতরাং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতেই হবে। এই সরকারকে আমরা মানতে বাধ্য নই। এটা আমাদের ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। সুতরাং প্রতিরোধের আগেই মানে মানে কেটে পড়ুন।' বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি পালনে দুপুরের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মী খন্ডখন্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এদিন ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেক নেতাকর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। নেতাকর্মীদের সবার হাতে কালো পতাকা ছাড়াও কারাবন্দি বিভিন্ন নেতাকর্মীর পস্ন্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে দলটির কালো পতাকা নিয়ে মিছিলে আর স্স্নোগানে পুরো নয়াপল্টন এলাকা প্রকম্পিত করেন এদিন। মিছিলে সদ্য কারামুক্ত তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট নেতাকর্মীদের ফুলের মালা পরিয়ে অংশ নিতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পন্ড হয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে বিএনপি নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যায় এবং ওইদিনের পর থেকেই শুরু হয় দলটির কঠোর আন্দোলন। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন সর্বশেষ হরতাল কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলনের ইতি ঘটায় বিএনপি। এরপর থেকেই রাজপথের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরু করে দলটি। যদিও গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের করে এবং সেখানেও নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছিল। তবে ২৮ অক্টোবরের পর প্রথম কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে বাজিমাত করতে সক্ষম হন দলটির হাইকমান্ড। মিছিলে দীর্ঘদিনের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর একটি অংশকেও সামনের সারিতে দেখা গেছে। তবে বিভিন্ন মামলায় সাজপ্রাপ্ত নেতাদের এদিন দেখা যায়নি। গয়েশ্বর রায় বলেন, 'শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। জিনিসপত্রের দাম অতিমাত্রায় বেশি। দেশের মানুষ দিশেহারা। ঘরে ঘরে অভাব। দিনমজুর মানুষ আগের মতো পেট ভরে দুবেলা খেতে পারে না। দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। আর তারা নাকি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন করেছে। আসলে এই ধারাবাহিকতা তাদের লুটপাট ও মহাদুর্নীতির কারণে। দশ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। যারা পাচার করেছেন তারা কিন্তু অস্বীকারও করে না। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।' তিনি বলেন, 'সেদিন একজন বিজিবি সদস্যকে হত্যা করেছে। কেন কীসের অধিকারে তারা এটা করছে? কেন একটা প্রতিবাদ নেই? আজকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। কারণ অন্য কেউ যখন দেশের সিদ্ধান্ত নেয় তখন তো আমার সার্বভৌমত্ব থাকে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে 'সমকামী' নির্বাচন বলে অভিহিত করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।' বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেন! আর যেদিন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়া করলেন তখন কি হয়েছিল? তাহলে প্রধান বিচারপতির পদটা কতটা কলঙ্কিত করলেন? বিএনপির ঘোষিত এই কর্মসূচি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, মালিবাগ পার হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের অনুরোধে সেটার পরিবর্তন করা হয়। সমাবেশ শেষে নয়াপল্টন থেকে মিছিল শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে নটর ডেম কলেজের সামনে দিয়ে আরামবাগ মোড় হয়ে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে এসে কর্মসূচির সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, 'অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে রাজপথে নেমেছি। সরকার কালো পতাকার কালো চিহ্নে নিশ্চিহ্ন হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কারও কাছে মাথা নত করতে নয়। দিলিস্নর শাসন দিয়ে কোনোদিন বাংলাদেশ চলেনি আজকেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগ ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ায় দেশ শাসন করছে। তারা দেশে বিভাজন তৈরি করেছে।' এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ছাড়াও দলটির নেতা প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কাদের গণি চৌধুরী, রফিক শিকদার, ঢাকা জেলা বিএনপির খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ইয়াসিন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম, আবু সালেহ মোহাম্মদ আদনান, পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে প্রকৌশলী মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নুসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, জাসাসের হাজারো নেতাকর্মী কালো পতাকা হাতে নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।