রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) চলছে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবার মেলা শুরুর পর প্রথম ছুটির দিন উপলক্ষে মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আসা শুরু হয়। ছুটির দিন হওয়াতে আশপাশের জেলা থেকেও প্রচুর লোক ভিড় জমান মেলায়। এতে বিক্রি বেড়েছে স্টলগুলোতে।
এদিকে বিগত দিনের তুলনায় ছুটির দিনে বেচা-বিক্রি বেশি হয় বলে দাবি করেন বিক্রেতারা। যদিও ক্রেতারা বলেন, বেশিরভাগ নন ব্র্যান্ডের স্টলগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে।
শুক্রবার
সকাল থেকে সরেজমিন বাণিজ্য মেলা ঘুরে দর্শনার্থী এবং বিভিন্ন স্টলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাণিজ্য মেলার ৫ম দিনে সকাল থেকেই মেলার প্রধান প্রবেশদ্বারে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশের পর দেখা গেছে লোকে লোকারণ্য। কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ বা এসেছেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে। অনেকে একাই এসেছেন পরখ করে নিতে। পরে সুবিধাজনক সময়ে পরিকল্পনা নিয়ে সপরিবারে আসবেন বলে।
তবে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ছবি তুলে সময় কাটাতে দেখা গেছে। আবার অনেকে পছন্দের পণ্যটি খুঁজছেন এবং কেনাকাটা করছেন।
এদিন বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। গৃহস্থালির সামগ্রী, পোশাক, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রসহ প্রায় সবকিছুতেই ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেছে।
মেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানান, বিভিন্ন পণ্য একসঙ্গে দেখার ও কেনার সুযোগ পেয়ে তারা খুশি। ছুটির দিন থাকায় শুক্রবার অধিকাংশ দর্শনার্থীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় এসেছেন। মেলায় ঘুরে দেখা ও কেনাকাটা করার জন্য তারা বেশ আনন্দিত।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর মগবাজার থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত নাজমুল আহসান। আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করার সময় প্রতিবছর গেলেও পূর্বাচলে এই বছরই প্রথম এসেছেন তিনি।
নাজমুন বলেন, আসতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ম্যারাথনের কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে কিছুটা জ্যাম ছিল। তবে ওভারঅল ঘুরে মনে হয়েছে আগারগাঁওয়ের তুলনায় পূর্বাচলেই বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা ভালো হয়েছে। আগারগাঁওয়ে আয়োজন করার সময় রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতো। এখানে সেটি নেই। অনেক বড় জায়গায় আয়োজন। আজকে ঘুরতে এলাম, পাশাপাশি যদি কোনো কিছু পছন্দ হয় সেটিও কিনব।
অন্যদিকে, বিক্রেতারাও ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ভিড়ে বেশ খুশি। তাদের মতে, ছুটির দিনের কারণে এদিন ক্রেতাদের ভিড় বেশি। বিক্রেতারা জানান, তাই তাদের বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে।
মেলায় কথা হয় সেভওয়ে আইস্ক্রিমের বিক্রয় প্রতিনিধি রোমানা আক্তার বিথির সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলা যেহেতু শুরু হয়েছে ২১ তারিখ। মেলা শুরুর প্রথম দিকে শীত ছিল বেশি। তাই শুরুর দিকে তেমন একটা দর্শনার্থী হয়নি। তবে শুক্রবার বন্ধের দিন উপলক্ষে দর্শনার্থী অনেক বেশি দেখা গেছে।
মেলায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মেলা প্রাঙ্গণে মোতায়েন রয়েছেন।
ইপিবি'র (রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো) পক্ষ থেকে জানায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৩৫১টি, যা বিগত বছরে ছিল ৩৩১টি। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের দুটি হলে (এ ও বি) ১৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সেন্টারের প্রধান ফটকের পূর্বপাশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৬২টি। হলের পেছনে ফরেন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন এবং প্রিমিয়ার ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৫৩টি।
সেন্টারের মূল কম্পাউন্ডের বাইরে ৬ একর জমির একাংশে ফুড জোন (৩২টি রেস্তোরাঁ ও মিনি রেস্তোরাঁ) এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৬২টি।
পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় প্রবেশমূল্যও বেড়েছে। এবারের মেলায় প্রবেশের টিকিট মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশুদের টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।