ফের উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ
দলকে চাঙা করার উদ্যোগ বিএনপির
রাজপথে ফের মুখোমুখি হচ্ছে বড় দুই দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আজ শনিবার মাঠে থাকছে দল দুটি। এর মধ্যে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। ভোটের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রথম কোনো কর্মসূচি করছে দলটি। বিপরীতে শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। তবে আগামীকাল রোববার জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি দল সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন করে উত্তাপ ছড়াবে দেশের রাজনীতিতে
প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ভোটকে কেন্দ্র করে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যেভাবে দল চাঙা ছিল ঠিক সেভাবেই সাংগঠনিক শক্তির জানান দিতে চাচ্ছে বিএনপি। দলকে আবারও টেনে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে হাইকমান্ড। এজন্য বিগত দিনের মতোই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ রাজধানী ঢাকাসহ সব মহানগরে 'কালো পতাকা মিছিল' করবে দলটি। একই দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, লেবার পার্টিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দল আলাদা আলাদাভাবে কালো পতাকা মিছিল করবে।
রাজপথের এই কর্মসূচি ঘিরে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। নিজেদের সাংগঠনিক আর জনশক্তির জানান দিতে লোকসমাগম ঘটাতে চান তারা। রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল সফল করতে এরই মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রত্যেক ইউনিট নেতাকর্মীদের পৃথকভাবে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। এর মধ্য দিয়ে ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকায় বড় জমায়েত ঘটাতে চায় দলটি। নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেও কাজ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এরই মধ্যে এ কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের অনুমতি মিলেছে। গত মঙ্গলবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি বরাবর কালো পতাকা মিছিলের বিষয়ে অবগত করে চিঠি দেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল শুরু হবে। এজন্য প্রশাসনকে জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে মৌখিকভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী তাকে এটা নিশ্চিত করেছেন। এদিন একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দাম, কারবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং
'অবৈধ সংসদ বাতিলের' এবং সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে এই কালো পতাকা মিছিল করবেন তারা।
বিএনপি নেতারা জানান, দীর্ঘ আড়াই মাসের আন্দোলনে তাদের অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একটা পরিবর্তনের আশায় সর্বোচ্চ ভূমিকা নিয়ে আন্দোলন করলেও সেই ফসল ঘরে তুলতে পারেননি বলে আশাহত দলটির নেতাকর্মীরা। বিগত ১৭ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা আজ নিঃস্ব। মামলা-হামলায় জর্জরিত প্রত্যেক নেতাকর্মীর এখন বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে। আদালত আর কারাগারে দৌড়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন তারা। ফলে কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন চরম হতাশা কাজ করছে তেমনি অনেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় দলকে আবারও টেনে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটিয়ে নতুন উদ্যোমে মাঠের আন্দোলনে ফিরতে চান তারা। এর প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
কালো পতাকা মিছিলের বিষয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবরের আগে থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। এ সময়ের মধ্যে তাদের কেউ একসঙ্গে জড়ো হতে পারেননি। ফেরারি জীবন পার করতে হচ্ছে তাদের। তবে এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা আবারও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চাইছেন। এই কর্মসূচিটা তাদের সেই ধরনের টনিক হিসেবে কাজ করবে। অনেকদিন পর রাজনৈতিক সতীর্থদের পাশে পাওয়া যাবে, দেখা যাবে মনে করে এদিনের কর্মসূচিতে আগের তুলনায় বেশি নেতাকর্মী হাজির হবেন বলে তাদের বিশ্বাস।
তবে গত ২৮ অক্টোবরের মতো এই কর্মসূচিতেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন আগাম তথ্যে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি সতর্কতাও আছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, 'হুমকি এসেছে রাজপথে কালো পতাকা মিছিল করলে ২৮ অক্টোবরের মতো আমাদের ওপর ক্র্যাকডাউন করা হবে।'
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, 'মূলত বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙতে এবং আন্দোলন যাতে এখনই বেগবান না হয় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার পরিকল্পনাও থাকতে পারে। তবে তাতে লাভ হবে না। বিএনপির আন্দোলনে জনগণ এখন সম্পৃক্ত কালো পাতকা মিছিলে ব্যাপক লোক সমাগম হবে।'
কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব এজিএম শামসুল হক বলেন, 'নির্বাচনের পরে মাঠের প্রথম বড় ধরনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বড় জমায়েতের মাধ্যমে কর্মসূচি সফল করার নির্দেশনাও আছে।'
এই কর্মসূচি ঘিরে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগরের এই শীর্ষ নেতা বলেন, 'হুমকি-ধামকি বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য নতুন নয়। দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-নির্যাতন চলছেই। আর নতুন করে হুমকি আসায় আতঙ্ক থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এদিন নেতাকর্মী সতর্ক থাকবে।'