সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে চিরচেনা সংঘাতের রূপ ফিরে এসেছিল। গত বছরের ১২ জুলাই বিএনপি সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা থেকেই ভোট গ্রহণের কয়েকদিন পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ঘটে। এরপর কিছুদিন শান্ত থাকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তবে বিএনপির নতুন কর্মসূচিকে ঘিরে সংহিসতা হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টরা। এমন প্রেক্ষাপটে সহিংসতা ঠেকানোই ক্ষমতাসীন দলের টার্গেট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপিকে রাজপথে ফাঁকা ছেড়ে দেবে না আওয়ামী লীগ। বিগত দিনের মতোই বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও। আজ শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে- বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা তাদের দলের নেতাদের নেতৃত্বকে ব্যর্থ মনে করছেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি বিরাগভাজন এই নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করে মাঠে নামানো অনেক কঠিন হবে। ফলে বিএনপি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন বিদেশিদের যোগসাজশে কীভাবে সরকার পতন ঘটানো যায় সেই চেষ্টায় আছেন। ফলে যে কোনো সময় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলন কর্মসূচি সহিংতার দিকে এগোনোর সন্দেহের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সম্প্রতি দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'এখন যে সহিংসতা বন্ধ আছে,
এটাকে স্থায়ী বলা যায় না। এখন হয়তো তারা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে, বাইরে কথা বলছে। তারা শক্তি সঞ্চয় করছে বড় ধরনের সহিংসতা করতে।'
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু কর্মসূচির নামে জনজীবন বাধাগ্রস্ত করলে তা মানবে না ক্ষমতাসীনরা। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন আগের মতোই কঠোর পদক্ষেপ নেয় সে তাগিদ দেবে আওয়ামী লীগ। দলের নেতাকর্মীরাও যে কোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে মাঠে থাকবেন।
দলীয় একাধিক সূত্র মতে, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো যদি নাশকতার চেষ্টা চালায় তাহলে দলগুলোর কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যারা এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগের মতোই কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। সংঘাতে যুক্তদের ছাড় না দেওয়ার কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বলছেন ক্ষমতাসীনরা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, 'যারা দেশের রাজনীতির বিপক্ষে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে, উন্নয়ন-অগ্রগতির বিপক্ষে বাধা সৃষ্টি করে, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগ পার হয়ে আন্দোলনের নামে তথাকথিত কথা বলে নির্বাচনের আগে বাধা দেয় তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।'
শুক্রবার কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে নির্বাচন-পরবর্তী গণসংযোগকালে আয়োজিত পথসভায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, 'যারা আগুন সন্ত্রাস করার চেষ্টা করবে তাদের জঙ্গলের ভেতর থেকে ধরে এনে আইনের মুখোমুখি করা হবে।'