গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ আইসিজের

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস-আইসিজে। শুক্রবার এ মামলায় দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে আদালতের প্রেসিডেন্ট মার্কিন বিচারক জে দোঙ্গু বলেন, 'আদালত ইসরাইলকে নির্দেশ দিচ্ছে, গাজায় গণহত্যা সংঘটিত যেন না হয় সে জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয়তা ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি "কথিত" গণহত্যার প্রমাণ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।' আন্তর্জাতিক এ আদালতের প্রধান বিচারক বলেছেন, 'জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী যে কোনো রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসতে পারে। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে এ আদালতে মামলা করার আইনি এখতিয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার রয়েছে।' গাজায় ইসরাইলি 'গণহত্যা' চালানোর অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ বিষয়ে আদালত বলেছেন, এই অভিযোগ মামলা আমলে নেওয়ার বিচারিক এখতিয়ার ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার করা এ মামলা নাকচ করে দেওয়ার যে আবেদন ইসরাইল করেছিল তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন আইসিজে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলে আকস্মিকভাবে ঢুকে হামলা চালিয়ে ১২০০ মানুষকে হত্যা এবং অন্তত ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। ওইদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল যা এখনো চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। গাজায় গণহত্যার অভিযোগ আমলে নিয়ে ইসরাইলের সামরিক অভিযান বন্ধসহ নয়টি ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক এই আদালতে আবেদন করে ফিলিস্তিনের দৃঢ় সমর্থক দক্ষিণ আফ্রিকা। গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান স্থগিত করা, আরও মানবিক ত্রাণ সহায়তার অনুমোদন এবং সম্ভাব্য লঙ্ঘনের বিষয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার এর অন্যতম। আইসিজের যে ১৭ জন বিচারকের প্যানেল শুক্রবার রায় দিয়েছেন তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থায়ী বিচারক। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরাইলের একজন করে বিচারক রয়েছেন। দুই সপ্তাহ আগে এ মামলা দায়েরের পর হেগের এই আদালত দুই দেশেরই বক্তব্য শুনেছে, যেখানে ইসরাইল দৃঢ়ভাবে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রায়ে আদালত ইসরাইলকে আরও নির্দেশ দেন, 'সেনারা যেন কোনো ধরনের গণহত্যা সংঘটিত না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং গণহত্যার নির্দিষ্ট (অভিযুক্ত) প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে।' রায়ে আরও বলা হয়, 'গাজা উপত্যকায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছতে দিতে হবে এবং গাজার সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে।' এছাড়া ত্রাণ পৌঁছানো এবং গণহত্যা প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে এক মাসের মধ্যে আদালতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দখলদার ইসরাইলকে। তবে যেটি ধারণা করা হয়েছিল, গাজায় ইসরাইলকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ আদালত দেবেন; সে ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আইসিজের বিচারক জে দোঙ্গু এর আগে বলেন, 'ইসরাইলের বিরুদ্ধে করা মামলায় রায় দেওয়ার এখতিয়ার এ আদালতের রয়েছে এবং ইসরাইলের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তারা এই মামলা খারিজ করে দেবেন না।' গাজায় আগ্রাসন ও গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে গত বছরের শেষের দিকে আইসিজেতে মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসের শুরুতে আদালতে মামলাটির দুই দিনের শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরাইলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়। এছাড়া জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষার তাগিদও দেওয়া হয়। অবশ্য ইসরাইল আদালতকে এই মামলাটি সরাসরি খারিজ করে দিতে বলেছিল। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, তারা আশা করছেন- জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত 'এই মিথ্যা এবং বিশেষ অভিযোগগুলোকে ছুড়ে ফেলে দেবে'। দক্ষিণ আফ্রিকা দুই সপ্তাহ আগে অভিযোগ করে, ইসরাইলের আকাশ ও স্থল আক্রমণের লক্ষ্য গাজার 'জনসংখ্যাকে ধ্বংস' করা। আইসিজে তার অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে আরও বলেন, 'ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে; সেসব অভিযোগের সঙ্গে কিছু বিষয়ের মিল রয়েছে। এ কারণে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ মামলা চলবে।'