রোমানিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসী পাচারে জড়িত ২১ জনকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির বর্ডার পুলিশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (হাঙ্গেরি সীমান্তবর্তী আরাদ, বিহোর, ব্রাইলা, ডলজ এবং ভরান্সিয়া কাউন্টিতে মানব পাচার চক্রের ব্যবহার করা ৩৫টি বাড়িতে অভিযান শেষে মোট ২১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠী গঠন, অভিবাসী পাচার এবং জাল পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে ওঠে এসেছে আসামিরা রোমানিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, নেপাল, মিশর, তুরস্ক, বেলারুশ, ইতালি এবং অস্ট্রিয়ার নাগরিক। তারা বিভিন্ন স্তরে ভাগ হয়ে একটি অপরাধমূলক গোষ্ঠী গঠন করেছিলেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিবাসী পাচার।
চার সদস্যের দলে আছেন এক বাংলাদেশি : সীমান্ত পুলিশ জানিয়েছে, আসামিরা ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ২৫০ জনেরও বেশি অভিবাসীকে রোমানিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। এসব কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন চক্রটির চার সদ্যসের একটি ছোট দল। এই চারজন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং অস্ট্রিয়ার নাগরিক।
তারা মূলত রাজধানী বুখারেস্ট ও সীমান্তবর্তী তিমিসোয়ারা অঞ্চল থেকে অনিয়মিত অভিবাসীদের গ্রাহক হিসেবে খুঁজে নেয়। সীমান্ত পার করানোর
আগে চক্রটি অভিবাসীদের রোমানিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে রাখত।
তদন্তে সূত্র আরও জানিয়েছে, রোমানিয়ার পশ্চিম সীমান্তের স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ট্রেনের মালবাহী বগিতে লুকিয়েও তারা কিছু অভিবাসীকে পাচার করেছে।
জনপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার ইউরো : অভিবাসীরা কত দিন নেটওয়ার্কটির আওতায় আবাসন এবং খাবার সুবিধা নিত সেটির ওপর নির্ভর করে জনপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত আদায় করেছে চক্রটি। অভিবাসীদের পিক-আপ, গাইডিং, এসকর্টিং, পরিবহণ এবং বাসস্থানসহ পাচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা খরচ যোগ করে প্যাকেজ নির্ধারণ করত চক্রটি।
আসামিদের মধ্যে একজনকে তার আসল পরিচয় লুকিয়ে অন্য কোনো পরিচয়ে রোমানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার সময় শনাক্ত করা হয়।
৩৫টি বাড়িতে তলস্নাশি চালিয়ে নগদ ২২ হাজার ৪৮৫ ইউরো, ২৬ হাজার ৮০৯ রোমানীয় মুদ্রা, ৪০টি সিমা কার্ডসহ ফোন, একটি ঘড়ি, ২৫০টি বিদেশি পাসপোর্ট ও ভুয়া বসবাসের অনুমতিপত্র, দু'টি ল্যাপটপ, মেমরি স্টিক, পাচারে ব্যবহৃত ছয়টি গাড়ি এবং অন্যান্য নথি জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযানের সময় ৮ জন অভিবাসীকেও শনাক্ত করা হয়েছিল।
আসামিদের মঙ্গলবার আরাদ অঞ্চলের আদালতে তোলা হয়েছে। আদালত ৯ জনকে কারাগারে এবং বাকিদের গৃহবন্দি করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশ দিয়েছেন।
অভিযান চলাকালে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তারে বিশেষায়িত দপ্তরকে অভিযান জোরদার করার আদেশ দিয়েছে আরাদ টেরিটোরিয়াল অফিসের প্রসিকিউটর।
অভিযানে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কারিগরি ও ফরেনসিক বু্যরো এবং রোমানিয়ান পুলিশের স্পেশাল অপারেশন ডিরেক্টরেট সহায়তা দিয়েছে।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে সীমিত পরিসরে ইউরোপে অবাধ চলাচল অঞ্চল শেঙেন জোনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে রোমানিয়া। আপাতত আকাশপথেই সেই সুবিধা পাচ্ছে দেশটি। শেঙেন জোনে যুক্ত হতে গেল বছর থেকে অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে বুখারেস্ট।