'বিতর্ক ওঠায় সপ্তম শ্রেণির 'ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান' বইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী-সম্পর্কিত জনসচেতনতামূলক পাঠ 'শরীফার গল্পে' সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে। বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, গল্পটি বাদ দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) চেয়ারম্যানকে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'যদি বিশেষজ্ঞ কমিটি মত দেন, তাহলে গল্পের কিছু লাইন পরিবর্তন করে এ বছরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে দেখা যাক, বিশেষজ্ঞরা কী মত দেন।'
পর্যালোচনা কমিটিকে অনতিবিলম্বে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী
সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন খন্ডকালীন শিক্ষক একটি অনুষ্ঠানে ওই বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক পাঠ অংশের উপস্থাপনায় কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকলে এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করলে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তবে বইয়ে শব্দটি 'ট্রান্সজেন্ডার নয়', 'থার্ড জেন্ডার' আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটি আইনি স্বীকৃত, যারা জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) কারণে তৃতীয় লিঙ্গ বা সামগ্রিকভাবে সমাজে 'হিজড়া' নামে পরিচিত।
এ ঘটনায় বুধবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে 'শরীফার গল্পের' পর্যালোচনা করার জন্য উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে 'শরীফার গল্প' বাদ দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। ওই আইনি নোটিশটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে শরীফার গল্প বলা হয়েছে। এখানে শরিফ আহমেদ একজন ছেলে এবং সে শারীরিকভাবে একজন ছেলে। কিন্তু সে মনে করে, সে একজন মেয়ে। তাই তার নাম পরিবর্তন করে রেখেছে শরীফা। এখানে স্বীকার করা হয়েছে, শরিফ আহমেদের শারীরিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু মানসিকভাবে সে মনে করে, সে একজন মেয়ে।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, 'গল্পের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ট্রান্সজেন্ডারের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়েছে। সুকৌশলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি প্রেরণা সৃষ্টি করা হচ্ছে।'
আইনি নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ব?ই থেকে 'শরীফার গল্প' বাদ দেওয়াসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব?ইয়ের দোকান থেকে এই ব?ই প্রত্যাহার করতে হবে বলে নোটিশে বলা হয়। এর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের সংশোধিত ব?ই সরবরাহ করতে হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মহামান্য হাইকোর্টে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট পিটিশন করা হবে বলে নোটিশে বলা হয়।