সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৩ দিনাজপুরে
শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার কমেছে ফের দু'দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস
প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
একদিনের ব্যবধানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। পাশাপাশি কমেছে ঘন কুয়াশার প্রভাব ও শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রংপুর বিভাগের ছয় জেলা এবং নওগাঁ জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আকাশ মেঘলা রয়েছে। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিও হয়েছে। তবে মেঘ কেটে যাওয়ার পর শৈত্যপ্রবাহ ফের বিস্তার লাভ করতে পারে।
বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় এক রকম থাকলেও আজ শুক্রবার থেকে তা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র। বুধবার দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই দিন বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে। আবহাওয়া অফিস সকাল নয়টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে দিনাজপুরে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.২ ডিগ্রি।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মাঘের শীতের মধ্যে শীতের প্রকোপ বাড়িয়েছে বৃষ্টি। বুধবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রাজধানীর বৃষ্টির পরিমাণ ছিল সামান্য। তবে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়, ৯ মিলিমিটার। এছাড়া কুমিলস্নায় ৮ মিলিমিটার এবং চট্টগ্রামে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
তবে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সূত্রটি। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, '৩১ জানুয়ারি দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। ১ থেকে ২ ফেব্রম্নয়ারিও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় এ সময় ১৮ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।'
বিপর্যস্ত দিনাজপুরের জনজীবন : মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো কনকনে শীত যেন জেঁকে বসেছে দিনাজপুরে। সপ্তাহ
জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। বৃহস্পতিবারও জেলার তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার যা ছিল ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে হিমেল বাতাসের গতি বেশ বেশি থাকায় শীতের মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত কয়েক বছরে জেলায় একটানা এমন তীব্র শীতের প্রকোপ ছিল না। এবার যেন হাড় কাঁপানো শীত স্থায়ী রূপ নিয়েছে। একটানা প্রায় ১৫ দিন শীতের দাপট থাকায় কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তবে গত ৩-৪ দিন সূর্যের দেখা মেলায় দুপুরে শীত কিছুটা কম অনুভূত হলেও বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত শীত আর কুয়াশার দাপট ঠিকই থাকছে।
তীব্র শীতে শ্রমজীবী মানুষের যেমন দুর্ভোগ বেড়েছে তেমনি সব বয়সের মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা এমন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল কাইয়ুম জানান, হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুরা সর্দি-কাশি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে আলু এবং বোরো বীজতলা হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করে ফসল রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, গত কয়েকদিন কিছুটা সময় সূর্যের দেখা মেলায় ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে।
কাঁপছে পঞ্চগড়ের মানুষ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, মাঘের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে তীব্র শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়ের মানুষ। জেলার শীতার্ত মানুষ বলছেন, বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বৃহস্পতিবার বেশি শীত অনুভূত হয়েছে। এদিন সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। বুধবারও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আরও দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের কনকনে হিমেল বাতাসে কাবু হতে থাকে পঞ্চগড়ের মানুষ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা ঝরেছে বৃষ্টির মতো। বৃহস্পতিবার সকালেও ছিল একই অবস্থা। দুপুরের দিকে কুয়াশা কেটে সূর্যের মুখ দেখা যায়। তবে উত্তরের কনকনে হিম শীতল বাতাস প্রবাহিত অব্যাহত থাকায় সূর্যের তেজ গায়ে লাগেনি।
এদিকে, তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকালেই কাজে যোগ দিয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষি শ্রমিকরা। শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিকশা-ভ্যানে উঠতে চায় না। কনকনে শীতের কারণে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে এসব শ্রমজীবী মানুষের।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার বলেয়াপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুর রহমান জানান, 'আজ সকালে যে শীত অনুভূত হয়েছে তা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থা চললে আমরা আর টিকব না। একটি কম্বলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু পাইনি।'
দিনভর কুয়াশার দাপট
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, দিনভর কুয়াশার দাপটে সূর্যের দেখা মেলেনি পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। রাতে হালকা হালকা বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা ও কনকনে হিমেল হাওয়ায় শীতে বিপর্যস্ত জেলাবাসী।
গত কয়েকদিন ধরে জেলায় সূর্যের দেখা মিলছে না। বৃহস্পতিবার একেবারে অন্ধকার হয়ে ছিল। তবে শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে বাধ্য হয়েছেন শ্রমজীবীরা। সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালতে দরজা ও জানালা বন্ধ করে কাজ চালিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা খুলনার পর্যটক খরশীদ আলমগীর বলেন, 'কক্সবাজারে বেড়াতে এসে রাত ও দিনে প্রচুর ঠান্ডা অনুভব করছি। হোটেল থেকে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে, কানটুপি ও গলায় মাফলার পেঁচিয়ে বাইরে বের হচ্ছি। দিনভর মেঘাচ্ছন্ন নগরী কুয়াশায় ঢেকে ছিল রাস্তাঘাট। সূর্যের আলোর দেখা মিলেনি। ঠান্ডায় হাত-পা ব্যথা করে। তাই সৈকতে হাটাহাটি করে শরীর গরম করছি।'
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে শিশুসহ তিন সহস্রাধিকরও বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিশেষ করে শীত ও কুয়াশার কারণে শিশু-বৃদ্ধদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগী রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা রোগীদের সেবার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
কক্সবাজার শিশু বিশেষজ্ঞ নুরুল আলম বলেন, 'গত এক সপ্তাহের বেশি সময় জেলায় তীব্র শীতে কাবু হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। হঠাৎ করে ঠান্ডাজনিত কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে।'
অন্যদিকে ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়েছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু'এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি/গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ এবং সড়ক পরিবহণ চলাচল ব্যাহত হতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়েছে, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।