কারা হচ্ছেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি!

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

আলতাব হোসেন
আগামী ৩০ জানুয়ারি বসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। আইন অনুযায়ী, প্রথম অধিবেশনেই নির্বাচনে বিজয়ী দল বা জোটগুলোর পাওয়া আসনের ভিত্তিতে ৫০টি সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হয়। সাধারণত প্রাপ্ত ছয় আসনের বিপরীতে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে। সে হিসাবে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ ২২৩ আসনের বিপরীতে পাচ্ছে ৩৭টি আসন, জাতীয় পার্টি ১১ আসনের বিপরীতে পাচ্ছে ২টি আসন, স্বতন্ত্র জোট গঠনের শর্তে ৬২ আসনের বিপরীতে পাবে ১০টি আসন। কল্যাণ পার্টি ১টি আসন পাওয়ায় সংরক্ষিত নারী আসন পাবে না দলটি। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ দুটি আসনে জিতলেও দল দুটি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। এদিকে, সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে ইসি। নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও জোটের জন্য থাকবে ভিন্ন ভিন্ন ব্যালট। ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট করলে তারা ১০টি সংরক্ষিত আসন পাবেন। সে ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র জোট হিসেবে গণ্য হবেন। সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। নিয়োগ দেওয়া হবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাও। এ পর্যন্ত সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেও কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট নির্ধারিত আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিলে সে ক্ষেত্রে ভোটাভুটি হবে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কী করবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আগামী রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তারা নির্দলীয় আলাদা জোট করবেন না। নারী আসনের জন্য তারা ছয়জন করে আলাদা আলাদা জোট করবেন। এ ছাড়াও এবার ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদে তাদের ভূমিকা কী হবে, সংরক্ষিত আসন কীভাবে দেওয়া হবে- এসব বিষয়েও তাদের অনেকে তাকিয়ে আছেন দলীয় সভাপতি সংসদ নেতা শেখ হাসিনার দিকে। এদিকে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে নারী নেত্রীদের ভিড় ভাড়ছে ঢাকায়। ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের কাছে। সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলের শতাধিক নেত্রী। বিশেষ করে মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীরা এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নারীনেত্রী, সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকা শিল্পীরাও রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার দৌড়ে। আগে সংরক্ষিত আসনের এমপিদের অনেকেই আবার চান এমপি হতে। শিক্ষক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নারী নেত্রীরাও চান ক্ষমতাসীন দলের সুনজর। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। যোগ দিচ্ছেন গণভবনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ নেত্রীরাও আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন দৌড়ে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, যারা দলের ত্যাগী, বঞ্চিত, শিক্ষিত, রাজপথে থাকা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া নেতারাই সংরক্ষিত আসন পাবেন। সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেত্রীদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ত নারীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। এছাড়া মনোনয়ন পেয়েও জোট বা শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া এবং যোগ্যতায় এগিয়ে থাকার পরও নানা কারণে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি এমন নারী নেত্রীরা মনোনয়নে এগিয়ে থাকবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, প্রধানমন্ত্রী সবসময় ত্যাগী, পরীক্ষিত ও দলের খারাপ সময়ে পাশে থাকা সদস্যদের গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন, এবারও দেবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আরেকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দলের জন্য ত্যাগী ও নিবেদিতরাই গুরুত্ব পাবেন। আসতে পারে নতুন মুখ। সংরক্ষিত আসনের এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরও শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া লক্ষ্ণীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনের আফরুজা বারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি। এছাড়া সাবেক এমপি অভিনেত্রী তারানা হালিম, সাবেক এমপি যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজি সারোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফারজানা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক নিলুফা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাহেরা খাতুন লুৎফা ও সাধারণ সম্পাদক শামীমা রহমান। এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, ঢাকার ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, নাহিদ ইজহার খান, সুবর্ণা মুস্তাফা, চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়শা খান, খুলনার অ্যাডভোকেট গেস্নারিয়া ঝর্না সরকার, নরসিংদীর তামান্না নুসরাত বুবলী, কুমিলস্নার আরমা দত্ত, গোপালগঞ্জের নার্গিস রহমান ও খাগড়াছড়ির বাসন্তী চাকমা। নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নেহরিন মোস্তাফা দিশি, ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপি, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা জাহান লিটা, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, মাহজাবিন খালেদ অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, আখতার জাহান নিলুফার জাফর উলহ ও রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি, ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আমেনা আহমেদ ও জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য লুৎফা তাহের, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রুবী রহমানও এমপি নির্বাচিত হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। শহিদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহিদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ ও শহিদুলস্নাহ কায়সারের মেয়ে এফবিসিসিআইর পরিচালক শমী কায়সার আলোচনায় রয়েছেন। এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, নুসরাত ফারিয়া, অরুণা বিশ্বাস, নুসরাত ইমরোজ তিশা, তানভীন সুইটি, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তারসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেশ ক'জন আলোচনায় রয়েছেন। সংরক্ষিত আসনের জাপার এমপি কারা হচ্ছেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, জাপার দুটি আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন দলের চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের এবং আরেক কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। এ দু'জনই দ্বাদশ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের জন্য আমরা সংসদ সচিবালয়ে চিঠি দিয়েছি, কোন দল কতটি আসন পাবে এই বিষয়ে সেই চিঠির জবাব এলে আমরা তফসিল ঘোষণা করব। আশা করছি এই সপ্তাহে অথবা আগামী সপ্তাহে সংসদ সচিবালয়ের চিঠির জবাব পাব। জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন-২০০৪ সালের ৩(১) ধারায় বলা আছে, 'সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইবার তারিখের পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদেও (৩) দফার অধীন সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক পৃথক তালিকা প্রস্তুতি করিবে। ৩(৩) ধারায় কোনো নির্দলীয় সদস্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদান করিলে নির্বাচন কমিশন যোগদানকারী সদস্যকে সংশ্লিষ্ট দল বা জোটের মনোনয়নে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে গণ্য করিয়া তাহার নাম, উক্ত দল বা জোটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করিবে।' আইন অনুযায়ী, নির্বাচিতদের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দল বা জোটগুলো বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের জোটের অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। এই হিসেবে ৭ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে বিজয়ী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা তাদের অবস্থান ইসিকে জানাবেন। ইসি আগামী ২২ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে সদস্যদের তালিকা (ভোটার) প্রস্তত করবে। তবে আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন হতে হবে।