জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়ে একযোগে পদত্যাগ করেছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ১০টি থানার ৬৭১ জন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। গণপদত্যাগ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নেতাকর্মীরা।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরের হাতিরঝিল থানা, শেরেবাংলা নগর থানা, মোহাম্মদপুর থানা, আদাবর থানা, পলস্নবী থানা, মিরপুর থানা, বাড্ডা থানা, রূপনগর থানা, দারুস সালাম থানা এবং ক্যান্টনমেন্ট থানা শাখা জাতীয় পার্টির ৬৭১ জন অংশ নেন। এ সময় এসব থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান। তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব ৩০০ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত করার পর মাত্র ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার বিনিময়ে গোটা পার্টিকেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। আর সমঝোতা করে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ
\হমাত্র ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে এমপি হয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতা ও কর্মী সমর্থকরা চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান পার্টির তৃণমূল পর্যায় থেকে পার্টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদত্যাগের দাবি ওঠে। পার্টির এই দুরবস্থার মধ্যেও চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিতার নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন।
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, এমতাবস্থায় আমরা এরশাদপ্রেমিক নেতাকর্মীরা জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন বিপর্যন্ত সংগঠনে অবস্থান করে প্রাণপ্রিয় নেতা পলস্নীবন্ধু এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ধ্বংস দেখতে চাই না। তাই আমরা জি এম কাদেরের সংগঠন থেকে গণপদত্যাগের ঘোষণা করছি। একইসঙ্গে আপনাদের কাছে এই অঙ্গীকারও করে রাখছি, অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা পলস্নীবন্ধু এরশাদের চেতনা, প্রেরণা ও নীতি আর্দশ বাস্থবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকব।
দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, মোট ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব একটি ফাঁদের মধ্যে পড়ে গেছেন। তার আশেপাশে এখন যারা আছেন তারা ঘুঘুর ফাঁদ পেতেছে। এই ফাঁদ থেকে তিনি (জি এম কাদের) বেরুতে পারবেন না। এই ফাঁদের সুতা মহাসচিবের হাতে, আর সে সুতায় ঘুরছেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, এই দলটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আমরা জি এম কাদেরকে বহুবার বলেছি, আপনি এসব বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসেন, তিনি বলেছেন যে আমি পারি না। তিনি সারাদেশের কোনো খোঁজখবর রাখেন না, সকালে অফিসে এসে রাতে বেরিয়ে যান। একটা কর্মসূচি, সমাবেশ, মহাসমাবেশ কোনোকিছুই তিনি করেননি। আমরা দলের মহাসচিবের পদত্যাগ চাই। তারা যোগ্য না, তারা সরে দাঁড়াক। এই দল হচ্ছে এরশাদের, আমরা তার পতাকাতলে আছি। আমরা জি এম কাদের নেতৃত্বে আর দল করব না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ নিয়েই আমরা সামনে এগুবো।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়সহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।