একদিনের ব্যবধানে বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে দেশজুড়ে শীতের যে দাপট চলছে, মাসের বাকি দিনগুলোতেও প্রায় একই রকম আবহাওয়া থাকবে। বুধবার দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল ঘন কুয়াশায় আবৃত ছিল। পাশাপাশি কয়েক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে। সকালে চার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আর সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে সকালে রাজধানীতে সূর্য উঠলেও দুপুরের পর আকাশ ঢেকে যায় মেঘে। সেই সঙ্গে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় রাজধানী। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমে সর্বনিম্ন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বুধবার দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে রয়েছে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা আর দক্ষিণে মেঘ। দক্ষিণের জনপদ মোংলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। সন্ধ্যার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতেও। সার্বিকভাবে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও ১৮ জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আজ বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এর পর থেকে আবারও তা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঁচটি যাত্রীবাহী বিমান নামতে পারেনি।
এগুলো পরে চট্টগ্রাম ও কলকাতায় চলে যায়। বেলা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে শাহজালালে উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রম্নপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, 'ভোর থেকে ঘন কুয়াশা ছিল। কুয়াশার কারণে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঁচটি যাত্রীবাহী বিমান গতিপথ পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম ও কলকাতায় চলে যায়। এর মধ্যে চারটি যাত্রীবাহী বিমান যায় চট্টগ্রামও আর একটি বিমান কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।'
আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, 'রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ এবং কিশোরগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে জেলার সংখ্যা ১৬। এর সঙ্গে আরও দুই জেলা মিলিয়ে মোট ১৮ জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।'
মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৮ দশমিক ৫, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁর বদলগাছি, রাজশাহী ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৯, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ২, বগুড়ায় ৯ দশমিক ৩, নীলফামারীর ডিমলায় ৯ দশমিক ৫, পাবনার ঈশ্বরদীত ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
হাফিজুর রহমান জানান, তাপমাত্রা বাড়ার এ প্রবণতা আগামী দুই দিন থাকতে পারে। এর পর থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে পারে। সে অনুযায়ী জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের প্রকোপ থাকতে পারে। বাগেরহাটের মোংলায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের আকাশে মেঘ আছে। আর উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার দাপট কমেনি।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানাও বলেন, 'কিশোরগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় তা প্রশমিত হলেও শীত থাকবে জানুয়ারি মাস জুড়েই।'
এবার শীত বেড়েছে জানুয়ারিতে এসে। ১১ জানুয়ারি দেশের উত্তরের কিছু কিছু জেলায় শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিম হাওয়ার দাপট। জানুয়ারির ২০ তারিখের পর শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার বাড়তে থাকে। তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে প্রায় পুরো দেশ। কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার খবরও মিলছে প্রায় প্রতিদিনই। হাসপাতালগুলোয় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের ভিড়ও বাড়ছে। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যস্ত বিস্তত রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকতে পারে দুপুর পর্যন্ত।
চরম ভোগান্তিতে উত্তরের জনপদ
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি জানান, সকালে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল প্রান্তিক এই উপজেলা। টানা শীত দুর্ভোগ বেড়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াসহ উত্তরের জনপদে। বিপাকে পড়েছেন পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে রিকশা-ভ্যান চালকসহ শ্রমজীবী মানুষ। শীতের কারণে কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন আয়-রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন এসব মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে শীতার্ত মানুষদের। আবার কেউ কেউ শীত উপেক্ষা করেই নেমেছেন জীবিকার সন্ধানে।
এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, ক্রনিক শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, সকাল ৬টা ও ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে রোদের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা তেমন কমেনি। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো বিমান অবতরণ করেনি। এতে ঢাকাগামী দুই শতাধিক যাত্রী বিমানবন্দরে আটকা পড়েন। দুপুর দেড়টার পর প্রথম বিমান সৈয়দপুরে নামার পর উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম বলেন, 'ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে বিমানবন্দর এলাকা। বেলা ১১টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে দৃষ্টিসীমা ছিল মাত্র ২০০ মিটার; যা উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য দৃষ্টিসীমা কমপক্ষে দুই হাজার মিটার থাকা প্রয়োজন।'
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে দুর্ভোগও বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। অনেককেই তীব্র শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে কাজে বের হদে দেখা গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কম থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল।