রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কালো পতাকা মিছিলে শোডাউনের প্রস্তুতি বিএনপির

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কালো পতাকা মিছিলে শোডাউনের প্রস্তুতি বিএনপির

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর টানা আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি মাঠে নামছে এমন আওয়াজ থাকলেও তা হয়নি। আগামীকাল শুক্রবার ও পরের দিন শনিবার কালো পতাকা নিয়ে নির্বাচনের পর প্রথম রাজপথে নামাছে তারা। এই কর্মসূচিতে বড় জমায়েতের মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চায় দলটি। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবরে মতো এই কর্মসূচিতেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন আগাম তথ্যে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি সতর্কতাও আছে।

গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি প্রতিবাদ এবং অবৈধ সংসদ বাতিলসহ এক দফা দাবিতে সারাদেশে দুইদিন কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার ২৬ জানুয়ারি সব জেলা সদরে এবং ২৭ জানুয়ারি সব মহানগরে এই কর্মসূচি হবে। কর্মসূচির প্রথম দিনে জেলা সদরে এবং পরের দিন রাজধানীতে বড় জমায়েতের জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের পরে

রাজপথে প্রথম কর্মসূচিতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কর্মসূচি সফলের জন্য দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা এ কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি জানান দেওয়ার জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নানা দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। এমনি সময় দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২

কালো পতাকা মিছিলে হামলার হুমকির দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করলে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দিয়েছি। এটি একটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু হুমকি এসেছে-আবারও রাজপথে কালো পতাকা মিছিল করলে ২৮ অক্টোবরের মতো আমাদের ওপর ক্র্যাকডাউন করা হবে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, মূলত বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙতে এবং আন্দোলন যাতে এখনই বেগবান না হয় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এমন হুমকি দেওয়া হযেছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার পরিকল্পনাও থাকতে পারে। তবে তাতে লাভ হবে না। বিএনপির আন্দোলনে জনগণ এখন সম্পৃক্ত কালো পাতকা মিছিলে ব্যাপক লোক সমাগম হবে।

এই হুমকির কারণে বিএনপিতে আতঙ্কও আছে বলে মনে করেন এই নেতা। তার মতে, দলটির তৃণমূল থেকে শুরু করে একেবারে হাইকমান্ড পর্যন্ত প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মামলার পাহাড়। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি সাজার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। নিয়মিত মামলার সঙ্গে এখন সাজার দন্ড মাথায় নিয়ে ফেরারি জীবন পার করছেন তারা। কবে নাগাদ আত্মসমর্পণ করে জামিন নেবেন, তা কেউ বলতে পারছেন না। আর ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে অনেকে আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের অনেকে এখনো সুস্থ হয়নি। আর আটককৃতরা মুক্তি পায়নি। এসব কারণে আতঙ্ক থাকা অস্বাভাবিক নয়।

কালো প্রতাকা মিছিলের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব এজিএম শামসুল হক বলেন, নির্বাচনের পরে মাঠের প্রথম বড় ধরনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। নয়া পল্টনে বা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হতে পারে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এদিন বড় জমায়েতের মাধ্যমে কর্মসূচি সফল করার নির্দেশনাও আছে।

এই কর্মসূচি ঘিরে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগরের এই শীর্ষ নেতা বলেন, হুমকি-ধমকি বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য জন্য নতুন নয়। দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা নির্যাতন চলছেই। আর নতুন করে হুমকি আসায় আতঙ্ক থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এদিন নেতাকর্মী সতর্ক থাকবে।

প্রসঙ্গত, ১৫ মাসের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পর গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। সেই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়। এ ছাড়া এক যুবদল নেতা সংঘর্ষ চলাকালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। হাঙ্গামার সময় অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়িসহ আগুন দেওয়া হয়েছে অন্তত ৭৬টি যানবাহনে। ভাঙচুর চালানো হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটকেও। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পাঁচটি পুলিশ বক্স। সংঘর্ষে আহত হয় দুই শতাধিক। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত পাঁচ দফায় ৭ দিন হরতাল করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এ ছাড়া ১২ দফায় ২৩ দিন সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এ ছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ৮ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে দলটি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে গণসংযোগ ও আলোচনা সভামতো নিরীহ ও ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এবারেই প্রথম কালো পতাকা নিয়ে রাজপথে নামাচ্ছে দলটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে