দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচন 'শান্তিপূর্ণ হবে না' বলেই তারা মনে করেন। ফলে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই তারা নিয়ে রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের জরুরি কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের যে ভোট হতে যাচ্ছে, সেখানে নৌকা প্রতীক দেবে না দলটি। সেক্ষেত্রে প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হলে বিএনপি কী করবে- মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন রাখা হয় রিজভীর সামনে।
জবাবে তিনি বলেন, 'দেখুন, আমরা এ সরকারের অধীন নির্বাচনই তো সুষ্ঠু হবে না বলছি। সেখানে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে সিদ্ধান্ত তা হচ্ছে- শেখ হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। কারণ তার অধীন কোনো নির্বাচন কখনো অবাধ সুষ্ঠু হয় না।
তিনি বলেন, 'আমরা বরাবরই বলেছি, শেখ হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচন কখনো শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু হবে না। সুতরাং তার অধীন কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না সেই সিদ্ধান্ত আমাদের আগেই নেওয়া আছে। বিএনপি এখনো সেই সিদ্ধান্তেই অটুট রয়েছে।'
রিজভী বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা আগেও বলেছি, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার প্রমাণ আছে। শেখ হাসিনা যতই কথা বলুক, তিনি কোনোক্রমে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। জনগণের যে শক্তি, জনগণের ইচ্ছা, এটাতে তিনি বিশ্বাস করেন না। করেন না বলেই আজকে দেশ-বিদেশে থেকে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের যে দাবি জানানো হয়েছে, এটাতে তিনি কর্ণপাত না করে তিনি তার মাস্টার পস্ন্যান অনুযায়ী এবং তাদের প্রভুদের সমর্থন নিয়ে তিনি একটি অদ্ভুত তামাশার নির্বাচন করেছেন। মানুষের কাছে সেটি হয়েছে বর্জনীয়, মানুষের কাছে সেটি হয়েছে ঘৃণ্য।'
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, তাহসিনা
রশদীর লুনা, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, আসাদুল করীম শাহিন, মনির হোসেন, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
আ'লীগ নিজেরাই নৌকা
ডুবিয়ে দিয়েছে : মঈন খান
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে প্রতীক তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের ৭ তারিখের পর সোমবার দ্বিতীয় পরাজয় হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেরা পরাজয় স্বীকার করে নিজেরাই নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে।
তারা এখন নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবে না। এখানেই তাদের পরাজয় হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি এখন ধোপে টিকছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ওলামা দলের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি শাহ নেসারুল হক। সংগঠনের নেতাকর্মী এতে অংশ নেন।
আবদুল মঈন খান, এখন আর বক্তব্য নয়, কাজ করবার সময়। বিএনপি রাজপথে নেমেছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে। আওয়ামী লীগের কারণে গণতন্ত্র আজ মৃত। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বাকশাল গঠন করে মানুষের অধিকার হরণ করেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মকান্ড স্বাধীনতার আদর্শের বিরোধী।
তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি যে প্রতিবাদ করছে তা হবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। ভুয়া প্রহসনের নাটক করায় বাংলাদেশের মানুষ আজ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশ-বিদেশে আওয়াজ উঠেছে এখানে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। ইলেকশনের নামে সিলেকশন হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিজয় মিছিল নয়, পরাজয়ের মিছিল করছে।
মঈন খান বলেন, সংবিধান নয় সরকারের দুর্নীতি লুটপাটের প্রীতি রয়েছে। সংবিধানের দোহাই সরকারের প্রহসন মাত্র।
তিনি বলেন, জনগণের শক্তিকে কামান গোলা দিয়ে রুখতে পারবে না। এই সরকারকে বিদায় করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেও সফল হয়নি সরকার, বিএনপির নেতাকর্মী হারেননি। জনগণ জেগে উঠেছে তবে বাঁধ সেধেছে পুলিশ বাহিনী। জীবন-মরণ লড়াই করা হবে এরপরও আওয়ামী লীগকে বাকশাল কায়েম করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, নেতাকর্মী হতাশ নয়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ধমকে বিএনপি ভয় পায় না। অভিনব কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে। অচিরেই জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
বিরোধী জোটের বিজয় অনিবার্য: নজরুল
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপির লড়াই জনগণের পক্ষের লড়াই, এ লড়াই আরও সুসংগঠিত করা হবে, অব্যাহত রাখা হবে। এতে জনগণ ও বিরোধী জোটের বিজয় অনিবার্য।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'একতরফা নির্বাচনে গণতন্ত্র নির্বাসনে' শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনটির সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সংগঠনের অন্য নেতারা আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নতুন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে এ নির্বাচনে 'ডামি প্রার্থী'। যদিও নির্বাচন কমিশনও ডামি, অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানও সে রকম আচরণ করছে।
তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বয়কট করার পরও সিইসি ঘুমিয়েছেন। কারণ সবই তো নির্ধারণ করা ছিল। এটা ডামি নির্বাচনের সরকার, জনগণের সরকার না। গণতন্ত্র নিয়ে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে রসিকতার অধিকার জনগণ কাউকে দেয়নি। সরকার ঠিক করছে কে বিরোধী দল হবে।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ হলেও বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা কারাগারে।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত আদালত চলে। এভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের স্বপ্ন দেখছে সরকার। এতে কোনো কাজে আসবে না। প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার করে রেখে, অত্যাচার নির্যাতন করে দমিয়ে রাখতে পারবে না। সব স্বৈরাচারের একই স্বভাব, তারা ইতিহাস ভুলে যায়।