ঢাকায় নিজ বাসায় এক নারীকে গলা কেটে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে রীতিমতো গোলক ধাঁধায় রয়েছে পুলিশ। জানতে পারেনি হত্যাকান্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা রহস্য। হত্যার পর ওই নারীর লাশ বাথরুমে ফেলে রাখা হয়েছিল। এরপর বাসার দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল। সন্দেহভাজন একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ হত্যাকান্ডের রহস্যের কিনারা করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাগুলো।
সোমবার হাজারীবাগ থানার এসআই পলাশ যায়যায়দিনকে বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে তানিয়ার সঙ্গে বাড়ির লোকজনের কোনো যোগাযোগ নেই। মোবাইল ফোন বন্ধ। পরে বাড়ির লোকজন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। একইভাবে বাড়িটির লোকজন ও স্থানীয়রাও পুলিশকে বিষয়টি জানায়।
তাদের ভাষ্য মতে, ঢাকার হাজারীবাগ থানাধীন মিতালী রোডের ১৭/১ নম্বর সপ্তমতলা বাড়ির সপ্তম তলার একটি রুম থেকে তানিয়া আক্তার-(৩৫) নামে এক নারী বসবাস করেন। বাসাটির ওই রুমটি দুই দিন ধরে বাইর থেকে তালা দেওয়া। এমন খবরে পুলিশ গত ২১ জানুয়ারি রাতে ওই বাড়িতে যায়। গিয়ে দেখা যায়, কক্ষের বাইর থেকে তালা দেওয়া। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করার পরও ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পুলিশ তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ঢুকে বাসায় কাউকে দেখা যায় না।
পরে বাসার বিভিন্ন জায়গায় তলস্নাশি চালানো হয়।
একপর্যায়ে বাথরুমের ভেতর এক নারীর গলা কাটা লাশ দেখতে পাওয়া যায়। খবর দেওয়া সিআইডির ক্রাইম সিন, পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই),র্ যাব, ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে। তারা ঘটনাস্থল থেকে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে। এরপর লাশ উদ্ধার করে পাঠানো পুরান ঢাকার স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনায় হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা কাজ করছে।
সার্বিক পর্যালোচনা মনে হচ্ছে, এক বা একাধিক ব্যক্তি ওই বাসায় ঢুকে বা তার সঙ্গে অবস্থান করার পর ওই নারীকে হত্যা করতে পারে। আবার বাইর থেকে গিয়েও এক বা একাধিক ব্যক্তি হত্যার পর লাশ বাথরুমে রেখে বাইর থেকে দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। অন্যথায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। নিহত নারীর সঙ্গে সাবলেট হিসেবে থাকা একজনের বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে। হত্যাকান্ডটি দুই দিনের মধ্যে কোনো এক সময় সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত নারীর ছোট ভাই তন্ময় হাসান নীদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত খুনিদের আসামি করে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলায় কে বা কারা বা কি কারণে তার বোনকে হত্যা করতে পারে, সে সর্ম্পকে কোনো কিছুই উলেস্নখ করেননি তিনি।
মামলা বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, আমাদের বাড়ি কুমিলস্না জেলার কোতোয়ালি থানাধীন রায়েরবাজার গ্রামে। বাবার নাম তোফাজ্জল হোসেন। আমরা দুই বোন, এক ভাই। নিহত তানিয়া সবার বড় ছিল। আমি মেজো। প্রায় ছয় বছর আগে তানিয়ার বিয়ে হয় আজিজুল রহিম নামের কুমিলস্নার এক ছেলের সঙ্গে। তাদের সংসারে কোনো সন্তানাদি নেই।
তিনি বলেন, বোন জামাইয়ের বাড়িও আমাদের এলাকায়। তিনি এক সময় বিদেশ ছিলেন। চার বছর আগে দেশে ফিরে কুমিলস্নায় ব্যবসা করছেন। আমার বোনও কুমিলস্নায় থাকতেন। তবে মাঝে মধ্যে ঢাকায় আসতেন। ঢাকায় এলেও ওই বাসায় থাকতেন। তানিয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের (বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনসহ অন্যান্য বিষয়ের আয়োজন) কাজ করতেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় তার বোন জামাই কুমিলস্নাতেই ছিলেন। মোবাইলে না পেয়ে পরে আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বোনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বোনকে হত্যা করার তেমন কোনো কারণ বা এমন কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে আমার জানা নেই। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মিডফোর্ড হাসপাতাল থেকে আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। তানিয়াকে সোমবার মাগরিবের নামাজের পর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।