ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে বড় দরপতন শেয়ারবাজারে
ছয় মাসের জন্য আইপিও স্থগিতের দাবি হ সংক্ষুব্ধ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা প্রত্যাহারের প্রথম দিনে রোববার বড় দরপতনে সংক্ষুব্ধ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হওয়ার পর তিন ধাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। কিন্তু তিনি কথা রাখলেন না বলে অভিযোগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
তাদের অভিযোগ, ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়্যাত-উল-ইসলাম একাধিকবার বলেছিলেন পুঁজিবাজারে গতি ফিরলেই তবে ফ্লোর প্রাইস তোলা হবে। এরই মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছিল। দীর্ঘ চার মাস পর বিগত সপ্তাহে ৮০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অর্থনৈতিক সব সূচক স্থিতিশীল আছে। লেনদেন আরও বাড়ার পর ফ্লোর প্রাইস তোলা যেত।
এরপরও যদি তিন ধাপে ফ্লোর প্রাইস তোলা হতো তাহলে আরও কম চাপ হতো। বৃহস্পতিবার বিএসইসি আকস্মিকভাবে ৩৫ কোম্পানি বাদে সব কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৪০০ তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ১৭৮টির শেয়ার ফ্লোর
প্রাইসের ওপরে অবস্থান করছে। আরও ৩৫টির ফ্লোর থাকায় মোট ২১৩ কোম্পানির শেয়ারের দর নিয়ে কোনো সমস্যাই ছিল না। মাত্র ১৮৭টি কোম্পানির শেয়ারের দর নিয়ে শঙ্কা ছিল। অথচ রোববার ২৯৬টি কোম্পানির দরপতন হয়েছে।
মূলত বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কে এ দরপতন। এ সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় থাকার ঘোষণা দিলেও ততটা থাকেনি। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচকে ২০০ পয়েন্ট কমে যায়। মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই কমে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনের শুরুতে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূচকের পতন প্রবণতা বড় হতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে ডিএসইর সূচকের ২৪০ পয়েন্ট পর্যন্ত পতন হয়েছিল। তবে সেই পতন কাটিয়ে দিনশেষে ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ্ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৩৭ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে ৩৮৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ২৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। বুধবার ডিএসইতে ৫ হাজার ৮৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
শেয়ারবাজারে লাগাতার পতন ঠেকাতে না পেরে, গত চার বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথমবার ২০২০ সালে মার্চে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করলেও তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের জুলাইয়ে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আবারও ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক যায়যায়দিনকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস তিন ধাপে তুলে নেওয়ার কথা বলা হলেও দুই ধাপে তোলা হয়েছে। তিন ধাপে তুললে বাজারে আরও কম প্রভাব পড়ত। তারপরও যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল বাজারে সক্রিয় থাকবে- তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। গতকাল যদি তারা আরও সক্রিয় হতো তাহলে দরপতন ঠেকানো যেত। আজকে যেন তারা প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করেন।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. রুহুল আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সূচক ইতিবাচকভাবে বাড়ছিল। দু-তিন মাস সময় দিলে এমনিতেই ফ্লোর প্রাইসের ওপর চলে যেত অধিকাংশ শেয়ারের দর। বিএসইসির চেয়ারম্যানও বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন ভালো একটা সময় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে। অথচ একটি স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে হঠাৎ তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন। এতে বিনিয়োগকারীদের যে লোকসান হয়েছে এর দায় তাকে নিতে হবে। অনেক বিনিয়োগকারী এত বড় লোকসানের চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহুতির পথও বেছে নিতে পারে। এর দায়ও তাকেই নিতে হবে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সংক্ষুব্ধ।