শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সেই চেনা রাজপথে হাঁটলেন রাষ্ট্রপতি

পাবনা প্রতিনিধি
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সাংবাদিকরা যাযাদি

ছাত্রজীবনে যে রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছিল তার সেস্নাগানে, সেই রাজপথ মুখরিত হলো তার জয়গানে। সারি সারি গাড়ি বহর নয়, পায়ে হেঁটে হাত নাড়িয়ে রাতের শহরে শৈশব আর স্মৃতিঘেরা আড্ডাস্থানগুলো ঘুরলেন, দেখলেন ও বসলেন রাষ্ট্রপতি। কুশল বিনিময়, নিজের বন্ধু ও এক সময়ের সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডার সাথে হাসি, ঠাট্টা আর নষ্টালজিয়ায় মেতে ওঠেন। মঙ্গলবার রাতে পাবনা প্রেস ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ আড্ডায় রাষ্ট্রপতি ও পাবনা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন মিলিত হন। এ সময় তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও পাবনার সাংবাদিকতার সঙ্গে 'আমার আজীবন ও অন্তরের সম্পর্ক' উলেস্নখ করে বলেন, 'আমি প্রাণ দিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানকে লালন করি তার মধ্যে পাবনা প্রেস ক্লাব অন্যতম। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।' রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, 'আমি পাবনা জেলার উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই। এই জন্য কোনো সমালোচনা বা পিছু কথা আমি মনে রাখি না। আমি আমার সাধ্যমতো জেলার উন্নয়নে কাজ করব। আমি ইছামতি নদীর সৌন্দর্যবর্ধন কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দিয়েছি। যাতে করে একটি দৃষ্টিনন্দন শহর হয়। আমি ৫শ' বেডের পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহায়তায় পাবনার উন্নয়নে আমি কাজ করে যাব।' তিনি আরও বলেন, 'আমি পাবনা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য। প্রেস ক্লাবের নিজস্ব ভবন তৈরিতে আমার সার্বিক সহায়তা থাকবে। তার জন্য যাকে বলা প্রয়োজন আমি বলব।' এ সময় রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সালাহ উদ্দিন আহমেদ, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি লায়ন বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি এর আগে রাত ৭টার দিকে পাবনা সার্কিট হাউজ থেকে গাড়িতে চড়ে প্রথমে তার অন্যতম আড্ডাস্থল পাবনা ডায়াবেটিক সমিতিতে যান। সেখানে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর পর বের হয়ে পায়ে হেঁটে যান আরেক আড্ডাস্থল লক্ষ্ণী মিষ্টান্ন ভান্ডারে। দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সেখান থেকে যান প্যারাডাইস সুইটে। সেখানে তিনি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং নিজের প্রিয় ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া খান। এরপর রাত ৮টার আগ মুহূর্তে তিনি চলে আসেন তার স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় সংগঠন পাবনা প্রেস ক্লাবে। সেখানে সাংবাদিক, বন্ধু ও এক সময়ের সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। পুরনো দিনের কথা মনে করে স্মৃতি রোমন্থন করেন। এক সময় তিনি সাংবাদিকতা করতেন, প্রেস ক্লাবের ছাদে আড্ডা দিতেন, সেসব কথা উলেস্নখ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা প্রেস ক্লাবে আড্ডা শেষে নির্ধারিত গাড়িতে সার্কিট হাউজে ফেরেন রাষ্ট্রপতি। এ প্রসঙ্গে লক্ষ্ণী মিষ্টান্ন ভান্ডারের ভোলানাথ ঘোষ বলেন, 'প্রিয় মানুষ অনেক বড় হয়ে যায়। কিন্তু প্রিয় মানুষের প্রিয় মানুষকে ভুলে থাকতে পারেন না। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি তারই দৃষ্টান্ত। তিনি আসলেন, কথা বললেন। কেমন আছি জানতে চাইলেন। খোঁজখবর নিলেন। এটা কি আমার জন্য চরম পাওয়া নয়। আমি কৃতজ্ঞ মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতি। আমি খুশি হয়েছি।' ভোলানাথ ঘোষ আরও বলেন, 'আমার এই দোকানে তিনি এক সময় আড্ডা দিতেন। আমাদের এখানকার সকালের নাস্তা তিনি খুব পছন্দ করতেন। এত বড় মানুষ হয়েও তিনি এখনো তেমনি নিরহংকারী আছেন। আমাদের দোকানকে তিনি এখনো মনে রেখেছেন ভেবে খুব ভালো লেগেছে।' প্যারাডাইস সুইটসের মালিক আবু ইসহাক শামীম বলেন, 'মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের দোকানে এসেছেন। সবার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। রাজনৈতিক ও ছাত্রজীবনে তিনি আমাদের দোকানে বসতেন, আড্ডা দিতেন। আমাদের দোকানের ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া ছিল তার খুব পছন্দের। বুধবারও তিনি অল্প করে ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া খেয়েছেন। তার আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। জয়তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি।' পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, 'পাবনা প্রেস ক্লাবের ২২তম সদস্য হলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। পাবনায় আসলেই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। তিনি সাংবাদিক বান্ধব রাষ্ট্রপতি। কারণ তিনি নিজেও ১৯৭৮ সালে সাংবাদিকতা করতেন। এই প্রেস ক্লাবে আড্ডা দিতে গিয়ে তিনি পুরনো স্মৃতি তুলে ধরলেন। হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠলেন। প্রেস ক্লাবের ছাদে আড্ডা দিতেন, চিড়া-মুড়ি খেতেন। বুধবারও তিনি চিড়া-মুড়ি খেয়েছেন। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে সময় কাটান। প্রেস ক্লাব ভবনটি অর্পিত সম্পত্তি। সেটি তিনি অবহিত আছেন। সে বিষয়েও তিনি কথা বলেছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি ভবনটি প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।' এর আগে তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার দুপুরে পাবনায় আসেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি স্থানীয় কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। দ্বিতীয় দিনে আরিফপুর সদর গোরস্থানে বাবা মায়ের কবর জিয়ারত, দোয়া, স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, পাবনা মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে বসবেন। ১৮ জানুয়ারি তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৫ মে প্রথমবার চার দিনের এবং ২৭ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নিজ জেলা পাবনায় এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এবারের তিনি তৃতীয়বারের সফর করলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে