পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পিটার হাস
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আরও নিবিড়ভাবে কাজ করবে
প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ব্যবসা সম্প্রসারণসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা বলেছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে আগামী মাসগুলোতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছি।'
গত ৭ জানুয়ারির ভোটে ২২৩টি আসনে জিতে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন নিয়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের একাংশ সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভোট 'সুষ্ঠু হয়নি' বলে বিবৃতিতে দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
ভোটের পর দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজারও সদস্যকে গ্রেপ্তার ও নির্বাচনের অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি এবং সব দল এতে অংশ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।'
এর আগে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভোটের পর আওয়ামী লীগের নতুন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, 'আপনাদের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ আজ পেয়েছি, যাকে আমি আগের দায়িত্ব থেকেই চিনি।
'আজ আমাদের প্রাথমিক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে, জলবায়ু এবং ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারণের মতো বিষয় নিয়ে এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো পারস্পরিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করেছি।'
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা এক প্রশ্নের উত্তরে জানান রাষ্ট্রদূত।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে পররাষ্টমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, 'নানা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কো-অপারেশন (সহযোগিতা) আছে। আমরা জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে, উগ্রবাদ মোকাবিলায় দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছি। আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ব্যাপারে আমরা একমত ব্যক্ত করেছি। গত নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেকে পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে, প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। কারণ, নির্বাচনের দিন অনেক কুয়াশা ছিল সকালে এবং ঠান্ডাও ছিল। সেটি না হলে ভোট আরও ১০ শতাংশ বেশি পড়ত। সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা উভয় দেশ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে, জঙ্গি দমন, উগ্রবাদ মোকাবিলাসহ সব ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে একমত হয়েছি।'
নির্বাচনের পর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে গুঞ্জন ছিল। কিন্তু বৈঠকে পিটার হাসকে হাস্যোজ্বল দেখা গেছে। সেই অস্বস্তি কতটা কাটল- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'উভয় দেশ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে আমাদের সরকার মার্কিন সরকারের সঙ্গে একযোগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি।'
মন্ত্রী বলেন, 'মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেই আমার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী। বাণিজ্য ক্ষেত্রেও তারা একটি বড় বাণিজ্যের অংশীদার। আমি গত ৫২ বছরের পথচলায় মার্কিন সহায়তার জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা উভয়েই আমাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার ব্যাপারে একমত হয়েছি। সে লক্ষ্যে কাজ করার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতও নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য, বাণিজ্য আরও বিস্তৃত ও সরাসরি বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করার বিষয়ে কথা বলেছেন।'
রোহিঙ্গা ইসু্যতে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইসু্যতে কথা বলেছি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আমরা তাদের সহায়তা সব সময় চেয়ে এসেছি। আজকে সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছি। তারা আমাদের সহায়তা করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব। ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও এটি নিয়ে কথা বলেছি। রোহিঙ্গা ইসু্যটি শুরুতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় অমানবিক হামলার ঘটনায় বিশ্বের দৃষ্টি অনেকটা সরে গেছে। সে জন্য আমি তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গা ইসু্যটি আমাদের জন্য সমস্যা। বাংলাদেশে ঘন জনবসতি। সেখানে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের জন্য বাড়তি সমস্যা। সে জন্য তাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে মিয়ানমারে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করেছি।'