ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে হত্যার সময় খুনির উলস্নাসের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার ওই ঘটনার সময় কোনো একজন একটি গলির ভেতর থেকে মোবাইলে ভিডিওটি ধারণ করে। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
ভিডিওটি পুলিশের নজরেও এসেছে। এখন এই বীভৎস ভিডিও নিয়ে স্থানীয়ভাবে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার পাইথল ইউনিয়নের গয়েশপুর বাজারে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোমিও চিকিৎসক হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে হত্যা করেন একই ইউনিয়নের নেওকা গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া (৩৫)।
পুলিশ জানায়, বাজারে হারুন তার নিজ চেম্বার ফিরোজা হোমিও হলে বসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ রুবেল এসে তাকে চেম্বার থেকে বের করে কুপিয়ে হত্যা করেন।
এক মিনিট ৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, খুনের ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক রুবেল একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে হারুন অর রশিদকে উপর্যুপরি কোপাচ্ছে। হারুন নিস্তেজ অবস্থায় মাটিতে পড়েছিলেন। রুবেল একটি সাদা লুঙ্গি ও কালো রঙের সোয়েটার পরিহিত অবস্থায় ছিল। রক্তে তার লুঙ্গি লাল হয়ে যায়।
টানা কিছুক্ষণ কোপানোর পর দুই হাত ওপরে তুলে রুবেলকে উলস্নাস করতে দেখা যায়। এরপর সে আরও দু'টি কোপ দেয়। শেষে রামদা হাতে বাজারের মধ্য দিয়ে চলে যায়।
এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা রুবেলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেয়। এতে রুবেল ও তার মা বিউটি আক্তার আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে। পরে গফরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভায়।
নিহতের ছেলে ফেরদৌস আহম্মেদ দিপ্ত বাদী
হয়ে রুবেল মিয়াকে আসামি করে সোমবার রাতেই পাগলা থানায় হত্যা মামলা করেন বলে জানান ওসি খায়রুল বাসার।
রুবেল ও তার মা পুলিশ হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রুবেল মিয়া একই ইউনিয়নের নেওকা গ্রামের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য শাহাব উদ্দিনের ছেলে।
তবে রুবেল মিয়ার সঙ্গে স্বামীর কী নিয়ে বিরোধ ছিল তা বলতে পারছেন না নিহতের স্ত্রী শিক্ষিকা ফেরদৌসী বেগম।
নিহতের ভগ্নিপতি গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, 'আমরা শুনতে পেরেছি, ঘটনার কিছু সময় আগে হারুনের সঙ্গে রুবেলের কথা কাটাকাটি হয়। এর কিছুক্ষণ পর রুবেল রামদা নিয়ে এসে হারুনকে ধাওয়া করে এবং পেছন থেকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃতু্য নিশ্চিত করে দুই হাত তুলে চিৎকার ও উলস্নাস করে।'
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাপ সরকার বলেন, 'হোমিও চিকিৎসক হারুন অর রশিদ খুব সজ্জন ও ভদ্রলোক ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতি করলেও কারও সঙ্গে তার বিবাদ ছিল না।'
তিনি আরও বলেন, 'হারুনের স্ত্রী স্থানীয় পাইথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি অনেক সময় খাবারের সমস্যায় পড়ে দোকানের কর্মচারীর বাসায় খাবার খেতে যেতেন। এ নিয়ে ওই কর্মচারীর প্রতিবেশী রুবেল মিয়ার আপত্তি ছিল।'
নিহতের ছোট ভাই কামরুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে রুবেল তাকে (কামরুল) কুপিয়ে জখম করেন। এ ঘটনায় মামলার সাক্ষী ছিলেন বড় ভাই হারুন। এটিও হত্যার কারণ হতে পারে।
হত্যার পর রুবেল কেন উলস্নাস প্রকাশ করেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পাগলা থানা পুলিশ।
ওসি খায়রুল বাসার বলেন, 'ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে নারীঘটিত বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ছাড়া পূর্ববিরোধের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'