গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি ক্ষমতায় আসতে অন্ধকার গলি খুঁজছে
প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি পরাজয়ের ভয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং জনগণের কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষমতায় আসার অন্ধকার গলি খুঁজছে।
তিনি বলেন, 'তারা জানে জনগণ তাদের বর্জন করেছে। এ কারণেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। তাই তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ক্ষমতা যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। তারা এখন নির্বাচনে আলোর পথ এড়িয়ে অন্ধকারের গলির দিকে তাকিয়ে আছে।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণকালে এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।'
তিনি বলেন, 'তারা (বিএনপি-জামায়াত) এখন নির্বাচন বাতিলের দাবি করছে।'
২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ আসন পেয়েছিল।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'তখন থেকেই তারা কোনো নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনে আগুন লাগিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। তারা যত বেশি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অগ্নিসন্ত্রাস করবে, জনগণ তত বেশি তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।'
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'কাজেই তারা জানে যে, জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে বর্জন করেছে, সেজন্য নির্বাচন করতে চায় না। এজন্যই নির্বাচন বানচাল করে কীভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়- তারা সেই পথ খুঁজে বেড়ায়। অন্ধকার গলি খুঁজে বেড়ায়, আলো ঝলমল
নির্বাচন আর জনগণের পথ হারিয়ে ফেলে।'
সরকারপ্রধান বলেন, 'নিজেরা অফিসে তালা দেয়, আবার নিজেরাই ভাঙে। এ নিয়ে আবার গর্ববোধ করে যে, চাবি হারিয়েছে। চাবি গেল কোথায়? তালাতো তাদেরই দেওয়া ছিল। তাদের চাবি খোয়া যাবে, চাবি হারাবে এবং তারা পথও হারাবে। তারা পথ হারানো পথিক হয়ে গেছে।'
শেখ হাসিনা বিএনপি সম্পর্কে বলেন, 'তাদের একটাই দক্ষতা আছে- অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন, লঞ্চে ট্রেনে আগুন দেওয়া, রেলের লাইন খুলে দিয়ে, রেলের পাত খুলে ফেলে মানুষ হত্যা করা। মানুষ মারার ফাঁদ পাতায় তারা ওস্তাদ। তাদেরকে জনগণ শুধু নির্বাচন নয়, বারবারই তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং হারার ভয়েই নির্বাচন করেনি। কিন্তু জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।'
প্রধানমন্ত্রী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় প্রসঙ্গে বলেন, 'এ নির্বাচনে বিজয় বাংলাদেশের জনগণের বিজয়। নির্বাচনে বিজয় গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বিজয়।'
তিনি দেশ পরিচালনায় সবার সহযোগিতা এবং দোয়া কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'দোয়া করবেন, এখনো চক্রান্ত শেষ হয়নি। এখনো শুনি তারা আবার লাফালাফি করে। নির্বাচন বাতিল করতে হবে, এই করতে হবে সেই করতে হবে। যাই হোক, জনগণের ভোটে আমরা সরকারে এসেছি জনগণের কল্যাণেই কাজ করে যাবো।'
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স অর্থনীতির
মূল চালিকা শক্তি
প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সকেই দেশের অর্থনীতির 'মূল চালিকা শক্তি' হিসেবে বর্ণনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়তে প্রবাসীদের ভূমিকার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, 'স্বাধীনতা, সংগ্রামে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে প্রবাসীরা বিরাট অবদান রাখেন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের বিরাট অবদান রয়েছে। সেটা ছাড়াও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।'
তিনি বলেন, 'যখন বাংলাদেশে মার্শাল ল জারি হয়, আমরা যখন কাজ করতে পারি না, তখন প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানান। আপনারা আন্দোলন সংগ্রাম করেন। জনমত সৃষ্টি করেন। এটা আমাদের জন্য বিরাট শক্তি।'
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ 'স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়ায়' ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, 'বিএনপি যখন নির্বাচনে আসবে না, কেউ যাতে নির্বাচনে না আসে, কেউ যেন ভোট না দেয় এর জন্য লিফলেট বিতরণ শুরু করল, এই লিফলেট বিতরণের পরে ঘটনা উল্টো হয়ে গেল, মানুষজন আরও উৎসাহিত হলো যে 'আমাদের ভোট দিতেই হবে'।
'এবং সেই ক্ষেত্রে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, কোনো রকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, একটা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, সেই প্রচেষ্টাই আমাদের ছিল। যার কারণে একের পর এক নির্বাচনের সংস্কার আমরা নিয়ে আসি। কারণ সেনা শাসকরা যখন একের পর এক ক্ষমতা দখল করে তখন তারা নির্বাচনে ভোট কারচুপি করাটা শুরু করেছিল। সেই জায়গা থেকে মানুষের অধিকার মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া, সেই আন্দোলন সংগ্রামটাই আমরা করেছি।'
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পর জনগণ এ সরকারকে 'সেবক হিসেবে পেয়েছে' বলে শেখ হাসিনার ভাষ্য।
তিনি বলেন, 'সেই ঘোষণাটা জাতির পিতা দিয়েছিলেন, আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করব, যেন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি।'
বাংলাদেশ যে কোনো পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের পাশে আছে জানিয়ে সরকারের পররাষ্ট্র নীতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'এভাবে একটা জাতিকে ধ্বংস করা, নারীদের ধ্বংস করা, এটা এক ধরনের গণহত্যা। আমরা সাহায্য পাঠিয়েছি, আগামীতেও পাঠাব। এর পরে আবার ইয়মেনে আক্রমণ। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। মিয়ানমার যখন অশান্ত হলো, তারা আশ্রয় চাইল আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, আমরা যুদ্ধে যাইনি। কারণ আমরা শান্তি চেয়েছি।'
অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, 'আন্তর্জাতিকভাবে আমি যেখানেই গেছি, সেখানেই বলেছি, এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে ওই টাকা শিশুদের খাদ্য, শিশুদের চিকিৎসা-শিক্ষায় ব্যয় হোক। আমরা এর (অস্ত্র বাণিজ্য) ঘোর বিরোধিতা করি, আমরা কখনো যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই।'
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালিসহ ২৯টি দেশের প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে তাদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে রেকর্ড পঞ্চম এবং টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।