শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নতুন সরকারে সবমিলিয়ে পঞ্চমবার ও টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফ করবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যালয়ে এসে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এ সময় বিভাগের অন্যান্য

কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। নতুন এই মন্ত্রিসভার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক বসলো সোমবার। যদিও এর আগে শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ বাড়িতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।

দাম নিয়ে কারসাজিকারীদের

নজরে রাখতে পরামর্শ

বৈঠকে বাজারে পণ্যের দাম নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের নজরে রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকার প্রধান বলেন, 'সামনে আমাদের রমজান মাস। আমাদের খাদ্যপণ্য আনে সীমিত কয়েকটি গ্রম্নপ। তারাও এখানে সবসময় একটা খেলা খেলতে চায়। সেই ক্ষেত্রে এখন থেকে আমাদের একটু প্রস্তুতি নিতে হবে। রমজান মাসে যে পণ্যগুলো আমাদের বেশি লাগে সেগুলোর মূল্য যেন ঠিক থাকে এবং সেগুলো যেন বাজারে পাওয়া যায়; সরবরাহ যেন ঠিক থাকে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।'

পণ্যের দাম কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার, খাদ্য পণ্যের যখন দাম বাড়ে তখন কৃষক খুশি হয়। কিন্তু যারা ভোক্তা তারা দুঃখ পায়। তাদের ওপরে চাপ এসে পড়ে। এটাকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে, এটাকে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায় এ বিষয়ে আমাদের খুব দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের প্রবৃদ্ধি যেটা হবে মূল্যস্ফীতি তার চাইতে কম থাকতে হবে। তাহলেই তার সুফলটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পাবে।

তিনি আরও বলেন, 'মুদ্রাস্ফীতি আমরা কমিয়েছি, খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১২ শতাংশ উঠে গিয়েছিল, সেটাকে কমিয়ে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্য সব মিলিয়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এটাকে আমাদের আরও কমাতে হবে।'

দুর্নীতি-অনিয়ম বরদাস্ত করব না

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'কোনো ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম আমি বরদাস্ত করব না। সরকারি কেনাকাটাসহ সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'সরকার পরিচালনায় স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি আয়ব্যয় ও ক্রয় এসব বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে করতে হবে। এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম বরদাস্ত করবো না।'

তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দেশের জন্য ভালো নয়। আমাদের যতটুকু সম্পদ আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাব। আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে এগোবো।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের সীমিত সম্পদ, জনসংখ্যা বেশি। আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়েই জনগণের কল্যাণ করতে হবে।'

সামাজিক সুরক্ষা খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বয়স্কভাতা ও সামাজিক সুরক্ষা ভাতা সঠিক লোক যথাযথভাবে যেন পায় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন

নির্বাচনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।

সংবিধানের ৭৩ (২) ধারা অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের সূচনায় এবং প্রতি বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যখন নতুন সরকার শুরু করে বা বছরের শুরুতে যে অধিবেশন হয় সেই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। সেই ভাষণের খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেটি অনুমোদন করা হয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে অফিস

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে পঞ্চমবারের মতো সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে তার নিজ কার্যালয়ে প্রথম কর্মদিবস পালন করেছেন। এর আগে তিনি ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে তার নিজ কার্যালয়ে প্রথম কর্ম দিবস পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং এ বিভাগের মহাপরিচালকরা।

এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব.) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন সকালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে তার মন্তব্যসহ সই করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে