পণ্যমূল্য নিয়ে মানুষ যে কষ্টে আছে, সেটি অজানা নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেবে। এও বলেছেন যে, কিছু মহল চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়ায়।
আগামী মার্চে শুরু হওয়া রোজাকে সামনে রেখে যা যা করা দরকার, এর সব এখনই কিনে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভার শুরুতে এ কথা বলেন দলীয় সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, 'এখনকার মানুষের সবচেয়ে কষ্টের জিনিস হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। হঁ্যা, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, আমরা এটা অনেক কমিয়ে এনেছি।'
'কিছু কিছু মহল আছে, যারা চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে, এটাও সত্যি, আগে এত ক্রয় ক্ষমতা ছিল না।'
মূল্যস্ফীতি যাতে আরও কমানো যায়, সেই জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যদিও আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি, খাদ্য উৎপাদন আমাদের কোনো সমস্যা নেই, এরপরও বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা, সেখানে আমরা এর থেকে দূরে না। আমি সব সময় এটাই আহ্বান করেছি, যেন এক ইঞ্চি জায়গাও অনাবাদী না থাকে, আমাদের খাদ্যের যেন অভাব না হয়।'
'আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে, রপ্তানির ক্ষেত্র বহুমুখী করতে হবে। পাট, চামড়াসহ আমাদের যেসব পণ্য আছে, এর জন্য বাজার খোঁজা, জনসাধারণকে ট্রেইনিং দিয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা বিদেশে দক্ষ
জনশক্তি রপ্তানি করতে চাই।'
স্বল্প আয়ের মানুষদের কষ্ট লাঘব করতে সরকারের উদ্যোগের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আমরা টিসিবি কর্তৃক পারিবারিক কার্ড করে দিচ্ছি, যাতে কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে, অর্থাৎ মানুষের যাতে কষ্ট না হয়।'
তিনি বলেন, 'সামনে রোজা, রোজার জন্য যা দরকার, সবই আমরা আগাম ক্রয় করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আর আমরা সব সময় যারা হতদরিদ্র, তাদের জন্য বিনা পয়সায় খাদ্য সাহায্য দিয়ে আসছি, সেই ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া টিসিবি কার্ড দেওয়া থাকবে।'
পণ্যমূল্য যেন কম থাকে, আবার কৃষকও যেন লোকসানে না পড়ে, সে বিষয়েও দৃষ্টি থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'কৃষিপণ্যের দাম বেশি থাকলে কৃষক খুশি হয় আবার যারা ক্রেতা, তারা নাখোশ হয়। এখানে একটা ভারসাম্য যেন থাকে, সেদিকে দৃষ্টি থাকতে হবে।'
ইশতেহার বাস্তবায়ন হবে
নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বাজেট প্রণয়নের কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আমরা মানুষকে যে ওয়াদা দেই, তা বাস্তবায়ন করি। আসছে যে বাজেট, সেখানে আমরা কী ওয়াদা ?দিয়েছি, ভবিষ্যতে আমরা কী করব, তা থাকবে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের কল্যাণ আওয়ামী লীগের হাতে। এই আওয়ামী লীগই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের ওয়াদা বাস্তবায়ন করেই কিন্তু বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি।'
কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'দেশের ভেতর ফ্রিল্যান্সাররা যাতে আরও উদ্যোগী হয়, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্টার্টআপ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। এক ব্যক্তি যেন কোম্পানি খুলতে পারে, সেই আইনও করে দিয়েছি, যাতে আমাদের যুবসমাজ নিজে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, যাতে নিজেরাই চাকরি না করে, মানুষের চাকরি দেবে।'
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার প্রয়োজনীয়তা ছিল উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, '১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তারা কিন্তু এ দেশের কোনো উন্নয়ন করতে আসেনি। তারা ব্যক্তিগত উন্নয়ন করেছিল।'
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দোষ-ত্রম্নটি খুঁজে বের করার চেষ্টা না করতেও দলের পরাজিত প্রার্থীদের পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে যারা হেরে গেছেন, তাদের প্রতিও একই আহ্বান রাখেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- দলের সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলী এবং সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
এই সভায় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি ছিল না।