পৌষের ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন সকালেই মুখরিত হয়ে ওঠে সচিবালয়, নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা আসতে শুরু করেন যার যার দপ্তরে।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী; অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী; স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন; কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক; তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুসহ বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী রোববার সকালে নিজ নিজ দপ্তরে আসেন।
আগে থেকেই অপেক্ষমাণ কর্মকর্তারা নতুন মন্ত্রীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। অভ্যর্থনাকারীদের পদচারণায় সচিবালয়ের পার্কিং এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে।
ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে। এবারও তাকে সেই দায়িত্বে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন সরকারের প্রথম কার্যদিবসে নিজের দপ্তরে এসে কাদের বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা 'বড় চ্যালেঞ্জ'। সব চ্যালেঞ্জ 'মোকাবিলা করেই' এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
প্রথম কার্যদিবসে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বহু বছর পর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে আবার সচিবালয়ে ফিরেছেন তিনি।
সাবের বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার পূরণে আগামী সাত দিনের মধ্যে তিনি একশ' দিনের পরিকল্পনা দিতে চান।
তিনি বলেন, 'বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। বন সংরক্ষণ করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্যই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এখানে দুর্নীতি বা অনিয়ম প্রশ্রয় দেব না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অগ্রগতিকে টেকসই করতে হবে।'
গত দুই মেয়াদে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব সামলানো জুনাইদ আহমেদ পলক এবার পুরো মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রথম কার্যদিবসে তিনিও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সেই বৈঠকের ভিডিও তিনি শেয়ার করেছেন ফেসবুকে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু দায়িত্ব পাওয়ার পরই প্রথম দিনই নিজের দপ্তরে ব্রিফিংয়ে আসেন। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী অঙ্গীকার। সেই প্রতিশ্রম্নতি পূরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে তিনি চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, 'উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য যেন সহজতর হয় সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত করব। এক্ষেত্রে আমরা "সাপস্নাই চেইন"-এর দিকে নজর দেব, যেন "স্মুথ" থাকে কোথাও যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।'
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দায়িত্ব পালনের শপথ নেন।
এরপর শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে নতুন মন্ত্রীদের জন্য রোববারই প্রথম কার্যদিবস।
সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যারা শুক্রবার গোপালগঞ্জে গেছেন, তাদের অনেকে এখনো ঢাকায় ফেরেননি। ফলে নতুন মন্ত্রীদের কেউ কেউ সোমবার প্রথম অফিস করবেন।
\হ
রাজনৈতিক কারণে কাউকে কারাগারে যেতে হয়নি : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার সচিবালয়ে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, 'বিএনপি-জামায়াতের যারা কর্মী রয়েছে তাদের কিন্তু রাজনৈতিক কারণে কারাগারে যেতে হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাদের কারাগার যেতে হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।'
তিনি বলেন, '২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার করেছিল, ২০১৩ সালে যে অগ্নিসংযোগ করেছিল... সে মামলাগুলো থেকেই এখন বিচারকার্য সম্পন্ন হচ্ছে। বিচারকার্য আদালত করেন, সেখানে সরকারের কোনো হাত নেই।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের সময়ে আপনারা যে সহিংসতার কথা বলছেন, সেটি কিন্তু প্রায় ছিলই না। যেকোনো দেশে দলীয় কর্মীদের মধ্যে এ লড়াই কিছুটা হয়ই, এবারও ততটুকুই ঘটেছে। এমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি যাতে কেউ মনে করবে বড় সহিংসতা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশে সুশাসন নিশ্চিত করায় জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে প্রতিশ্রম্নতি এবং আমাদের প্রতি যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটির যথাযথ উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা করেছে আইন মন্ত্রণালয়? এর কারণ হচ্ছে, করোনাকালে সারা বিশ্বের সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। বিচারিক ব্যবস্থার মধ্যেও স্থবিরতা চলে এসেছিল। আমরা তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপন করে বিচার ত্বরান্বিত করেছি। তখন কারাগারে যাতে জটিলতা সৃষ্টি না হয় সে ব্যবস্থাও করেছি। অনেক মামলা শেষ করেছি।'
মন্ত্রী বলেন, 'দ্বিতীয়ত, আমরা অনেক আইন করেছি। বিশেষ করে সাক্ষ্য আইন। সাক্ষ্য আইনের সংশোধন মানুষ চাচ্ছিল। এ আইনে নারীদের ইজ্জতের বিষয় ছিল। আমার মনে হয় এই সাক্ষ্য আইন সংশোধনটা একটা বিরাট পদক্ষেপ। আরও অনেক আইন করেছি।'
'নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে যে আইন সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী করেছি, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগ যথেষ্ট কাজ করেছে। এতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমার মনে হয় এভাবে কাজ করে গেলে যেটা আমাদের অগ্রাধিকার... বিশেষ করে মামলা জটের বিষয়টি। বহুদিন যাবৎ মামলা জটের কারণে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে আমাদের ১০ থেকে ১৫ বছর অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে। আমার মনে হয় আমরা সঠিক পথেই এগোচ্ছি।'
আনিসুল হক বলেন, 'দেশবাসীর কাছে আমাদের অঙ্গীকার হলো- জাতির পিতাকে হত্যার সাথে সম্পৃক্ত যারা দেশের বাইরে রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার যে চেষ্টা আমরা করছি... সেটির একটা সফলতা আনা।'