ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুসহ নানা বয়সিদের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। পৌষের শেষদিকে শীতের প্রকোপ গত কয়েক দিনে বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলো থেকে অনেক অসুস্থতা নিয়ে রোগী আসছে। হাসপাতালগুলো ঘুরেও দেখা গেছে রোগীদের ভিড়।
আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গত ২৪ ঘণ্টায় নেমেছে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে। শীতের দাপটের সঙ্গে ঢাকার বাতাস আরও বিষাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় রোববার ঢাকার অবস্থান ছিল
\হদশম। আইকিউএয়ারের তথ্যে দেখা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বরের পর ঢাকার বাতাসের মানের সূচক একিউআই কখনই ১৮০ এর কম ছিল না।
ঠান্ডার সঙ্গে বায়ু দূষণের কারণে অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারেও রোগী বাড়তে দেখা গেছে।
রোববার শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে রোগীদের ভিড়। বহির্বিভাগের সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শরীফা বেগম নামে এক নারী।
নোয়াখালীর বসুরহাট থেকে তাকরিম ও তাফসির নামে দুই মাস এগারো দিন বয়সি যমজ দুই নাতি নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন শরীফা। এর মধ্যে তাকরিম নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তাফসিরের জ্বর আসায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, 'প্রথমটার জ্বর হলে আমাদের ওখানকার প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে আসতে বলেন ডাক্তার। তাকরিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। তাফসিরেরও গত চার দিন আগে থেকে জ্বর। আজ এখানে নিয়া আসছি, ডাক্তার পরীক্ষা দিছে। রিপোর্ট দেখার পর প্রয়োজনে ভর্তি দেবেন।'
সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ১৯ মাস বয়সি আফিয়া বেগমকে নিয়ে এসেছেন তার মা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, 'সাত-আটদিন ধরে ঠান্ডা, কাশি। কিছুতেই কমতেছে না। এজন্য এই হাসপাতালে নিয়া আসছি।'
মোহাম্মদপুরের রুহুল ইসলাম তার ৬ মাস বয়সি শিশুপুত্র ওমরকে নিয়ে এসেছেন শিশু হাসপাতালে। ওমর গত ৬ দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। রুহুল বলেন, 'তার জ্বরজারি খুব একটা হয় হয় না। শীত বাড়ার পরই জ্বর আসছে। সঙ্গে কাশিও আছে। এজন্য নিয়ে আসলাম। ডাক্তার দেখে বুকের এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা দিয়েছেন।'
এদিকে, ঠান্ডার সঙ্গে পাতলা পায়খানার মতো ভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে অনেক শিশুর। ঢাকার মধ্য বাড্ডা থেকে দুই বছরের অতুনুকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে এসেছেন তার মা হোসনে আরা।
তিনি বলেন, 'গত চার দিন ধরে অতুনুর জ্বর। পাশাপাশি শুক্রবার থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে বাসায়ই ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম। জ্বর কমে, আবার বাড়ে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পাতলা পায়খানা। এজন্যই এখানে আসা।'
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুলস্না বলেন, শীত ও বায়ুদূষণজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে।
তাদের অনেকে আসছে সর্দি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাঁচি-কাশি নিয়ে। একটা অংশের তীব্র জ্বর, গলাব্যথা, কাশির উপসর্গ রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'দেখা গেছে এ ধরনের রোগীদের কোনো সংক্রমণ নাই, জ্বরও নাই। কিন্তু নাক বন্ধ থাকায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নবজাতক হলে দুধ টেনে খেতে পারে না। বাচ্চা ঘুমাতে পারে না, কান্নাকাটি করে। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই সময় বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে যাচ্ছে।'
বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএসের বর্তমান এই সভাপতি বলেন, শীতের সময় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। বায়ুদূষণের ফলে বিভিন্ন বস্তুকণার পরিমাণ বাড়ে। এসব বস্তুকণা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার ছাতা হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ওই ডাস্ট পার্টিকেল নিঃশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসতন্ত্রে যাওয়ায় ছোট-বড় সবারই ক্রনিক কাশি হচ্ছে। সব সমস্যাই শৈত্যপ্রবাহের সময়, শৈত্যপ্রবাহ চলে যাওয়ার সময় বেশি হচ্ছে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের জটলায় কথা বলে জানা যায়, রোগীদের প্রায় সবাই শ্বাসতন্ত্রের নানা সমস্যা নিয়ে এসেছেন। তাদের অনেককেই একটু পরপর কাশতে দেখা যায়।
কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না বেরাইদ থেকে আসা গৃহিণী মিথিলা। তার স্বামী নয়ন হোসেন বলেন, 'ঠান্ডা বাড়ার পর থেকেই হঠাৎ তার সর্দি আসে। এরপর থেকে প্রচন্ড কাশি আর শ্বাসকষ্ট। ঠিকমতো দম নিতে পারতেছে না। এজন্য হাসপাতালে আনছি। ডাক্তার ওষুধ দিছেন আর কয়েকটা পরীক্ষা করতে দিছেন।'
ষাটোর্ধ্ব মাকে নিয়ে আসা আশরাফুল হক জানান, তার মায়ের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে। শীত এলে সেটি বাড়ে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও আছে। যে কারণে হাসপাতালে আসা।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, 'হাসপাতালে এখন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে রোগীরা বেশি আসছেন। বেশি ঠান্ডা ইনহেল করার কারণে এটা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও বাচ্চারা বেশি আসছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।'
অধিক মাত্রায় শীতের এ সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতর থাকা এবং শরীরকে সব সময় গরম রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সব সময় গরম খাবার খাওয়া, গরম পানি পান করা দরকার। এসব নিয়ম মেনে চললে কিছুটা ভালো থাকা যাবে।
বরিশালে হাসপাতালে ভর্তি ৬৩৯৩
এদিকে, নদীবিধৌত বরিশাল বিভাগে এবারের হাঁড় কাঁপানো শীতে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে পুরো জনপদকে। বিভাগে গত তিনদিন ধরে দেখা মেলেনি সূর্যের। শেষ বিকালে এক চিলতে রোদ উঠলেও তা ছিল উত্তাপহীন। শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিশু বৃদ্ধরা। হাসপাতালেও ঠান্ডাজনিত রোগীর লম্বা লাইন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঠান্ডাজনিত রোগে বিভাগের ছয়টি জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৯ জন ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়। বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৮৭ জন। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৯ জন এবং ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন।
ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ভোলায় ৫১, পটুয়াখালীতে ৪১, বরগুনায় ৪০, বরিশালে ৩২, পিরোজপুরে ২২ ও ঝালকাঠিতে ১১ জন। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টেও সবচেয়ে বেশি পটুয়াখালীতে ৩১, ভোলায় ২১, বরিশালে ১৬, পিরোজপুরে ৮ ও ঝালকাঠিতে ৩ জন। ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পটুয়াখালীতে ৮১ জন। ঝালকাঠিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ আর বরিশালে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন।
গত ১ মাসে এই বিভাগে শীতকালীন রোগের প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৩৯৩ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৬ জন এবং নিউমোনিয়া-শ্বাসকষ্টে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৯৭ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, শীত এলেই ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব হয় বরিশাল অঞ্চলে। আমরা ছয়টি জেলার সব সরকারি হাসপাতাল, সেবা কেন্দ্রে শীতকালীন রোগের গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও জানান, দিনে দিনে রোগী বাড়লেও দ্রম্নত সময়ে চিকিৎসা পাওয়ায় মৃতু্যর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শীত কমতে শুরু করলে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কমবে।
এদিকে বরিশাল নগরী ঘুরে ও শহর লাগোয়া উপজেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহর এলাকার চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের বাসিন্দা মুনসুর বলেন, এর চেয়ে অন্যান্য বছর বেশি শীত লাগলেও এবার হাত-পা সব বরফ হয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহেও মাঠে সবজি তুলেছি। কিন্তু এ বছর কিছুই পারছি না।
সদর উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের করিমন বেগম বলেন, আজ দুইদিন ধরে নাতি-নাতনিদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছি। তারা ঘরেই থাকছে। এত শীত আগে কখনো পাইনি।
বরিশাল নগরীর ফজলুল হক অ্যাভিনিউতে একরামুল হক বলেন, শীতের প্রভাব ৩-৪ দিনে কেটে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু গত দুইদিন ধরে যে শীত লাগছে তাতে হার পর্যন্ত কেঁপে যাচ্ছে। সামনের দুই-তিনদিন কাটানোর জন্য শীতের পোশাক কিনতে আসলাম।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের পোশাকের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্রেতারা। সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, শৈত্যপ্রবাহ যে কয়দিন চলবে ততদিন আমাদের দোকানে ক্রেতা বেশি। দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছি না। শীত কমলে এই চাহিদা কমে যাবে।
বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, শনিবার বরিশালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রোববার তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এই মৌসুমে বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তিনি বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।
এদিকে শীত মোকাবিলায় জেলার বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী ও জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।
খানসামায় বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা
এদিকে, আমাদের খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত রোগীর চেয়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৭ ভাগ। চলতি বছরে এটি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলায় এ সপ্তাহে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে বলে জানান জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান।
সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ঘুরে দেখা যায়, পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড মিলে প্রতিদিন ৫৫-৬০ জন রোগী ভর্তি হলেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ১০-১২ জন রোগী ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ৭-৮ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অন্য সমস্যার রোগী ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও আন্তরিকতার সহিত রোগীদের সেবা দিচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স-মিডওয়াইফ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেই সঙ্গে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে এখন রোগীর ভিড় বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহ থেকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০ জন ডায়রিয়া রোগী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন এবং ৯-১০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সেই সঙ্গে জ্বর-সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি বলে জান যায়।
আমেনা খাতুন (৩৫) গত বুধবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ ডায়রিয়ায় পড়ে হাসপাতালে এলে ডাক্তার ভর্তির পরামর্শ দেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যর্মীদের ট্রিটমেন্টে আগের চেয়ে এখন শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভালো। জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসা আহসান হাবীব আসেন তার ২ বছরের ছেলেকে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভর্তি করান হাসপাতালে। তিনি বলেন, ডায়রিয়া ও চেহারা ফ্যাকাসে হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করাইছি এখন চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। এসময় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং শিশুদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। পাতলা পায়খানা শুরু হলে মুখে খাবার স্যালাইন বার বার খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মলয় কুমার মন্ডল বলেন, আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এ ছাড়া খোলা ও বাসি খাবার পরিহারের পাশাপাশি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকারও পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।