কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু দেশ!

পাঁচ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৬ ডিগ্রি আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির আভাস বাড়ছে শীতজনিত রোগ

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু সারাদেশের মানুষ, বিপর্যস্ত জনজীবন। ছবিটি শুক্রবার গাইবান্ধার বালশিঘাট থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
পৌষের শেষভাগে এসে একদিনের ব্যবধানে দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু প্রায় সারাদেশের মানুষ। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় বইতে শুরু করেছে শৈত্যপ্রবাহ। এ পরিস্থিতি আরও কয়েক জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া দেশের ১৯ অঞ্চলের তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির নিচে। রাজধানী ঢাকায় শীতের তীব্রতা এতদিন না থাকলেও তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। একদিনের ব্যবধানে ঢাকার তাপমাত্রা কমেছে আরও এক ডিগ্রি। সেই সঙ্গে বেড়েছে হিমেল বাতাস। তাতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। পাশাপাশি সারা দেশেই রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলিতে এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬, যা গতকাল ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া শুক্রবার ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯, যা গতকাল ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি। এদিকে ১২ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে আছে- পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৮, দিনাজপুরে ১০, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৫, নওগাঁর বদলগাছিতে ১০ দশমিক ৭, যশোর, সীতাকুন্ড ও মাদারীপুরে ১১, খেপুপাড়া, কুমারখালী ও সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ৩, বগুড়া ১১ দশমিক ৪, বরিশালে ১১ দশমিক ৫, টাঙ্গাইলে ১১ দশমিক ৮, তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৯, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরে ১১ দশমিক ২, কুমিলস্না ও গোপালগঞ্জে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানী কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাটতে শুরু করে কুয়াশার আবরণ। দেশের অন্য এলাকার অবস্থাও একই। শুক্রবারের তাপমাত্রা চলতি শীত মৌসুমে দেশের অধিকাংশ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, শনিবার শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে ঘন কুয়াশা খুব একটা কমবে না। আগামী তিন দিন কুয়াশা এমন থাকতে পারে। এরপর আবার তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টির শঙ্কা আছে। এতে শীত আবার বেড়ে যেতে পারে। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৩.৪ ডিগ্রি চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে শুক্রবার সকাল ৯টায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, দুই জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তীব্র শীতে কাবু হয়ে হয়ে পড়েছে দুই জেলার জনজীবন। রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা গেছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হওয়া খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে। ভোর থেকেই এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ও চায়ের দোকানে শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুভাস চন্দ্র সাহা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে কৃষকদের বোরো ধানের বীজতলা ও আলুক্ষেত রক্ষায় বিশেষভাবে সতর্ক করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া, সম্ভব হলে চারা রাতের বেলা ঢেকে দেওয়া, বীজতলায় সেচ দিয়ে পরদিন সকালে পানি বের করে দেওয়া এবং বীজতলা লাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তীব্র শীতে দুই জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও লেনদেন অস্বাভাবিক হারে কমেছে। দিনমজুর মিনারুল হক বলেন, 'প্রতিদিন ভোরে জেলা শহরে কাজের সন্ধানে আসতে হয়। আজ মনে হচ্ছে তীব্র শীতে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। যেন বরফ পড়ছে। তারপরও থেমে নেই কাজ। বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।' গত সাত দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় দুই হাজার রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন জানিয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, 'তীব্র শীতে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগই শিশু রোগী।' এদিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শিশুদের গরম ঘরে গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখতে হবে। খাওয়ার আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়াতে হবে। আগুনের ধোঁয়া থেকে শিশুদের দুরে রাখতে হবে। এছাড়াও সমস্যা দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, শীতের সবজিসহ গম, সরিষা ঠান্ডায় ভালো হয়। তবে অতিরিক্ত কুয়াশাতে ক্ষতি হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ কমে গেলে ফসলের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।' বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার কারণে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের শেষ নেই। কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকেই। তবুও পেটের তাগিদে কাউকে রিকশা, ভ্যান বা ক্ষেত খামারে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। অনেকই শীত নিবারণের জন্য খড়কুড়া জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন। উপজেলার কামারখালী গ্রামের দিনমজুর মহিবুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সকালে ইটভাটায় কাজে যেতে হয় যতই কুয়াশা বা শীত পড়ুক না কেন। কারণ কাজ করলে মুখে ভাত উঠবে। ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে, তাদের খরচ জোগাতে হয়। অটোচালক সমসের আলী বলেন, 'প্রচন্ড শীতে লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। যে কারণে ভাড়াও হচ্ছে না। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এদিকে অটো চালাতে গিয়ে হাত-পা ঠান্ডায় শক্ত হয়ে যাচ্ছে। পাখিভ্যান চালক মহসিন জানান, শীত লাগলেও কিছু করার নেই। পরিবারের লোকজনদের দু'মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে হলে কষ্ট করতেই হবে।' উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষ। আর এই ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার যত্ন নিতে হবে। আর ধানের চারার যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য চারার মাথার শিশিরগুলো ফেলে দিতে হবে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ জানান, প্রচন্ড শীতে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালে এখন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেখা দিয়েছে হাঁচি, সর্দি-কাশি ও হাঁপানি রোগ। শিশুদের গরম পোশাক পরিধানের পাশাপাশি ঘরের বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিলেন এই চিকিৎসক। বঙ্গবন্ধু সেতু? মহাসড়কে যানজট, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ১ স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল থেকে জানান, শুক্রবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়?কে ১৪ কিলো?মিটার এলাকাজুড়ে থে?মে থে?মে যানজ?টের সৃ?ষ্টি হ?য়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে যানজটে আটকা পড়ে রেললাইনে হাঁটাহাঁটি করার সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন। ট্রাকচালক সোনা মিয়া জানান, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ঢাকা থেকে ট্রাক ছেড়ে সকাল ৭টায় এলেঙ্গায় এসে দেখতে পান ধীরে ধীরে গাড়ি চলাচল করছে। প্রচুর কুয়াশা ও তীব্র শীত এবং কতিপয় অসাধু চালকের অনিয়মতান্ত্রিক গাড়ি চালানোর ফলে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করে কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ভোরে কুয়াশা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করতে থাকে। কয়েকজন চালক যত্রতত্র গাড়ি নিয়ে এলেঙ্গা থেকে সেতুর গোলচত্বর পর্যন্ত এক লেনের মহাসড়কে তিন সারিতে চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশি তৎপরতায় যানবাহনগুলো ধীরে ধীরে চলতে থাকে। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব রেল স্টেশন মাস্টার শাহিন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে। নীলফামারীতে পাঁচদিন সূর্যের দেখা নেই ডোমার নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশা, হিমশীতল বাতাস আর হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় নীলফামারীর জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। রাত থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। পাঁচ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে। দিনের বেলায়ও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, 'উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুরে সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ রকম তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন এমন থাকবে। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। এই ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিদিনই সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে।' প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুক্ষেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গরু-ছাগল। প্রাণীগুলোর শীতজনিত রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পঞ্চগড়ে জনদুর্ভোগ চরমে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় পঞ্চগড়ে বেড়েছে শীতের দাপট। জেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত পাঁচ দিন ধরে মেঘ-কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সূর্য। এ কারণে ঠান্ডা অনুভূতি হচ্ছে। গত দুই দিন ধরেই তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা নিম্নমুখী। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে নানা শ্রমজীবী মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। তারাও ঠান্ডার প্রকোপে ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। এ ছাড়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। রাস্তায় চলা ভবঘুরে মানুষরাও পড়েছে শীত দুর্ভোগে। জেলার তেঁতুলিয়ার সদর এলাকার হোসেন আলী, আলাউদ্দিন ও আবুল কালামসহ কয়েকজন দিনমজুর জানান, মেঘ-কুয়াশায় দেখা যাচ্ছে না সূর্যের মুখ। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাসে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। এদিকে তীব্র শীতে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাত ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে কুয়াশার ঘনত্ব কেটে যাওয়ায় প্রায় ৭ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১টার পর ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন (বিআইডবিস্নস্নউটিসি) শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের সহ-ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, 'বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে প্রচন্ড কুয়াশা দেখা দিয়েছিল। কুয়াশার মধ্যে নৌপথের দুর্ঘটনা এড়াতে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে রাত ১টা ২০ মিনিট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে কুয়াশার ঘনত্ব কেটে গেলে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়েছে। নিকলীতে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গত দু'দিন ধরে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে কনকনে শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে উপজেলার জনজীবন। নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা আয় রোজগার করতে পারছেন না। অন্যদিকে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রচন্ড শীতে কাবু জয়পুরহাটের জনজীবন জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, উত্তরের হিমেল হাওয়া, ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে পড়েছে জয়পুরহাটের সাধারণ মানুষ। দিনমজুর, খেটে খাওয়া শ্রমিক থেকে শুরু করে নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ ঠান্ডায় ও শীতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছেন। শুক্রবার সকাল থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় চারদিক। বাস-ট্রাক, সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। প্রচন্ড ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সূর্যের দেখা নেই। কুয়াশা মাঝে মাঝে টপ টপ করে বৃষ্টির পানির মতো ঝরছে। সারা দিন জেলায় তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির মতো। কাজ না থাকলে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বাজারে লোক সমাগম তুলনামূলক অনেক কম। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। শাহজালালগামী ফ্লাইট কলকাতায় এদিকে ঘন কুয়াশা থাকায় সৌদি আরবের দাম্মাম থেকে আসা বিমানের একটি ফ্লাইট কলকাতায় অবতরণ করেছে। এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগামী ৮ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। শুক্রবার সকালে বিমানবন্দর সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, ঘন কুয়াশা থাকায় গতিপথ বদলাতে বাধ্য হয় বিমানটি। বিমান বন্দর সূত্র জানায়, ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় নিরাপদ অবতরণের জন্য এই গতিপথ বদলানো হয়। একই ঘটনা গত ৩ জানুয়ারিও ঘটেছে। এ দিন শাহজালাল বিমানবন্দরে নামতে না পেরে সিলেট ও ভারতের কলকাতায় অবতরণ করে তিনটি বিমান। এছাড়া শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক সাতটি ফ্লাইটের অবতরণ।