আড়াই মাস পর রাজধানীর নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। পরে সেখানে জমে থাকা ময়লা আর ধুলোর স্তূপ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বিকালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। এ সময় নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম, কারচুপিসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বে নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদনের ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। পাশাপাশি অভিযোগ করা হয়, ভুয়া নির্বাচনে সরকার সংসদকে কুক্ষিগত করেছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে নয়া পল্টন কার্যালয় থেকে শুরু করে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয় এবং সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়ও বন্ধ হয়ে যায়। নির্বাচনের পর গুলশান কার্যালয়ে কর্মসূচি শুরু করে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার নয়া পল্টন কার্যালয়েও প্রবেশ করে দলীয় কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এদিন ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে সরকার বিরোধী বিভিন্ন সেস্নাগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীরা তাদের রাজনৈতিক ঠিকানায় মিলিত হতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, অনেকে কোলাকুলি করে নিজেদের মধ্যে কুশলাদী বিনিময় করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ৭ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। ভোটের ফলাফল সব নির্ধারিত হয়েছে ঢাকার একটি উচ্চপর্যায়ের টেবিল থেকে। কে কত ভোট পাবে, কে কে নির্বাচিত হবে সবই। এরকম ভুয়া নির্বাচনে সরকার সংসদকে কুক্ষিগত করেছে।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের তিনশ' আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে কে বিজয়ী, হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫
কে বিজেতা, কে জয়ী, কে পরাজিত সেগুলো নির্বাচনে নির্ধারিত হয়নি। এগুলো সব নির্ধারিত হয়েছে ঢাকার সর্বোচ্চ একটি টেবিলে। সেখানে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আগেই নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে কে কত ভোট পাবে, কে কত শতাংশ ভোট পাবে এবং কোন আসন থেকে কে নির্বাচিত হবে। এটা আর এখন বিএনপির কথা নয়, দেশে-বিদেশে সব প্রমাণসহ বিশ্ববাসীর কাছে উদ্ভাসিত হয়েছে।
মঈন খান বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে দুঃখজনক, লজ্জাজনক, কলঙ্কজনক বিষয় হচ্ছে মানুষ ভোট চুরি করে গোপনে। এই সরকার ভোট ডাকাতি করেছে প্রকাশ্যে। তারা প্রকাশ্যে আলোচনা করেছে, আসন ভাগাভাগি করেছে, কে কোন আসনে নির্বাচিত হবে সেটা নির্ধারণ করেছে প্রকাশ্যে। এই সরকার কোথায় নেমেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সরকার যেটাতে বিশ্বাস করে সেটা হচ্ছে একদলীয় বাকশালী শাসন। এটা হচ্ছে অলিখিত বাকশাল। নির্বাচনের পরে যা দাঁড়িয়েছে সেটা অলিখিত বাকশাল ওয়ান।
আবদুল মঈন খান বলেন, দীর্ঘ ৭৫ দিন পরে নয়া পল্টনের কার্যালয় খোলা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর ক্র্যাকডাউনের পরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি সরকার বেদখল করে নিয়েছিল। আজকে (বৃহস্পতিবার) তারা আবার এখানে এসেছেন জনগণের কথা বলার জন্য। তারা রাজনীতি করেন জনগণের জন্য, তারা রাজনীতি করেন জনগণকে নিয়ে এবং তারা রাজনীতি করেন জনগণের মঙ্গলের জন্য।
তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে তারা রাজপথে আন্দোলনে আছেন, রাজপথে আন্দোলনে থাকবেন। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, বিএনপি রাজনীতি করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। জনগণের ভোটের অধিকার, জনগণের অর্থনীতির সাম্যের অধিকার এবং জনগণের গণতন্ত্রের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেবো। ভবিষ্যতে এমন একটি বাংলাদেশে সৃষ্টি করব যেখানে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী. চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।