দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, তারা বিরোধী দলে ছিলেন এবং বিরোধী দলেই থাকতে চান।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে শপথগ্রহণের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন একাদশ সংসদের সংসদ উপনেতা। এর আগে দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত ১১ সংসদ সদস্যকে শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মঙ্গলবার খবর এসেছিল, জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা বুধবার 'শপথ পড়বেন না', বৃহস্পতিবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। পরে রাতে সেই সিদ্ধান্ত বদলে যায়। বুধবারই শপথ নিতে সংসদ ভবনে হাজির হন ভোটে জয়ী জাতীয়
পার্টির ১১ সদস্য।
রংপুর সদর-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য জি এম কাদের বলেন, সংসদে আসার বিষয়টি তার জন্য সবসময়ই 'আনন্দের'।
তিনি বলেন, 'সংসদে আসার অনুভূতি সবসময়ই ভালো। সেদিক দিয়ে বলতে গেলে আবার সংসদে আসলাম সেটা আনন্দের বিষয়।'
দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, গোলযোগের কারণে ময়মনসিংহের একটি আসন স্থগিত রেখে ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
পরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর আবেদনে ঢাকা-৪ আসনের ফল হাইকোর্ট স্থগিত করলেও সেই আদেশ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আটকে যায়।
এবারের নির্বাচনে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন মোট ২২৪ জন। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসন বাদে একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির আসন ছিল ২৩টি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ছিল ২৬৪ আসনে। এর মধ্যে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের ছাড় দিয়েছিল। অর্থাৎ ওই ২৬ আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী রাখা হয়নি।
কিন্তু বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টক্কর দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া আসনের অর্ধেকেও জয় পায়নি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল। অধিকাংশ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
দলীয়ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ে ছয়গুণ বেশি আসনে স্বতন্ত্ররা জয় পাওয়ায় দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্ররা জোট করে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন করলে তাতে বাংলাদেশের আইনে কোনো বাধা নেই। আর সে রকম হলে গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি সেই তকমা হারাতেও পারে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জিএম কাদের বলেন, 'আমি ঠিক জানি না নিয়মটা কি। তবে আমরা বিরোধী দলে ছিলাম এবং বিরোধীদলে থাকতে চাই। আমরা জনকল্যাণমুখী, যেটা জনগণের ভালো হয় সেটিই আমরা করতে চাই।'
পার্টি অফিসে নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এগুলো সাজানো জিনিস। কিছু লোক আমাদের পার্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অথবা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। যেটা করা হয়েছে সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে।