আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ
নতুন ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর নাম ঘোষণা
প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা আজ সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করবে। তাদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নতুন ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
২৫ পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হলেন- ১. আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), ২. ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), ৩. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। (নরসিংদী-৪), ৮ আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২), ৫. ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩), ৬. মো. তাজুল ইসলাম (কুমিলস্না-৯), ৭. মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), ৮. আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪), ৯. আনিসুল হক (ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৪), ১০. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), ১১. মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪) ১২. সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), ১৩. র, আ, ম, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), ১৪. মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১), ১৫. নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), ১৬. আব্দুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), ১৭. মহিবুল হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৯), ১৮. ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১), ১৯. মো. ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২), ২০. মো. জিলস্নুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), ২১. সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), ২২. জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), ২৩. নাজমুল হাসান (কিশোরগঞ্জ-৬), ২৪. স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ২৫. সামন্ত লাল সেন।
প্রতিমন্ত্রী হওয়ার জন্য যে ১১ জন ডাক পেয়েছেন তারা হলেন- ১. সিমিন হোমেন (রিমি) (গাজীপুর-৪), ২. নসরুল হামিদ (ঢাকা-৩), ৩. জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), ৮. মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭), ৫. মো. মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), ৬. খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), ৭. জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫), ৮. কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), ৯. রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), ১০. শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২), ১১. আহসানুল ইসলাম (টিটু) (টাঙ্গাইল-৬)।
বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, 'গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে।'
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে এবং সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়ে বুধবার বিকাল ৫টার পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গভবনে পৌঁছালে শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের অনুমতি চেয়ে দলের পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। রাষ্ট্রপতি এ সময় তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন পরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, 'সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ বিজয় জনমতেরই প্রতিফলন।
'তিনি বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে রায় দিয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সাফল্যও তিনি কামনা করেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন বলে জানান রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সর্বশেষ বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন তিনি।
এবার নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২২৪ আসন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি দশম সংসদের মতো এবারও নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
বুধবার সকালে জাতীয় সংসদে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথের পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে আবারও সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়।
২০১৯ সালের মন্ত্রিসভা
একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর, এর পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। সেদিনই রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। ৭ জানুয়ারি বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীকে শপথ পড়ান তখনকার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তার আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হয় মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, কাকে কোন দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। শপথের আগে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা সেবারই প্রথম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী গত পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট দুই মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করেন।
সংবিধান কী বলছে?
সংবিধানের ৫৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে।'
আর একই অনুচ্ছেদের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, 'মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকিবেন।' আর সংবিধানের ৫৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকিবেন।'
ধারা দুইয়ে বলা হয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করিবেন।'
এক্ষেত্রে শর্তও দেওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, 'তাহাদের সংখ্যার অনূ্যন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে মনোনীত হইতে পারিবেন।'
আর ধারা তিনে বলা হয়েছে, 'যে সংসদ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।'