রাজধানীর রমনা ও পল্টন থানার নয় মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুলতান সোহাগ উদ্দিন বুধবার শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় ফখরুলের জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন না মেলায় গত আড়াই মাস ধরে কারাগারে থাকা এ বিএনপির নেতার আপাতত মুক্তি মিলছে না।
রমনা ও পল্টন থানার ওই নয় মামলায় ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঙ্গলবার মঞ্জুর করেন বিচারক। জামিন প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য বুধবার দিন রেখেছিলেন তিনি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পরদিন গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা ফখরুলকে, তখন থেকেই তিনি কারাগারে।
সে সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। হাকিম আদালতের পর জজ আদালত এবং সবশেষে হাইকোর্টে গিয়েও ওই মামলায় জামিন পাননি বিএনপি মহাসচিব। তার জামিন প্রশ্নে হাইকোর্ট যে রুল জানি করেছিল, বুধবারই তা খারিজ হয়ে যায়।
এদিকে রমনা ও পল্টন থানার আরও ১০ মামলায় ফখরুলকে আসামি করা হলেও সে সময় তাকে গ্রেপ্তার দেখায়নি রাষ্ট্রপক্ষ। এসব মামলায় তার
জামিনের জন্য হাকিম আদালতে আবেদন করেন ফখরুলের আইনজীবীরা।
হাকিম আদালত তা গ্রহণ না করায় ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মির্জা ফখরুল। এর মধ্যে পল্টন থানার সাতটি এবং রমনা থানার তিনটি মামলার কথা রিট আবেদনে বলা হয়।
এর মধ্যে পল্টন থানার একটি মামলায় মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোয় ৯ মামলার ক্ষেত্রে জামিন আবেদন গ্রহণ করে আইন অনুসারে তা নিষ্পত্তি করতে হাকিম আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সে অনুযায়ী ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিন মঙ্গলবার ওই নয় মামলায় ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে তার জামিন প্রশ্নে শুনানির জন্য বুধবার তারিখ রাখেন।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবী আসাদুজ্জামান নয়টি মামলায় আলাদা করে মামলার কাগজপত্রের 'ত্রম্নটি ও অভিযুক্তের ডিফেন্স পয়েন্ট' তুলে ধরে জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ব্যাখ্যার পাশাপাশি জামিন বিষয়ে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্তও তিনি তুলে ধরেন।
আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, '৭৬ বছর বয়সি মির্জা ফখরুল ইসলাম অসুস্থ। গত ২৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে। তার ওজন ৫ কেজি কমে গেছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। বিএনপি মহাসচিব বয়স্ক এবং অসুস্থ, তিনি কারাগারে যে কোনো বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।'
মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে করা নয়টি মামলা 'রাজনৈতিক' দাবি করে তিনি বলেন, 'এসব মামলায় বিএনপি মহাসচিবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। ওই নয়টি মামলার মধ্যে একটি মামলার আসামি শাহজাহান ওমর। তিনি জামিন পেয়ে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।'
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহ আলম তালুকদার।
তিনি আদালতে বলেন, প্রতিটি মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান। তার জামিন আবেদন নাকচ করা হোক। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
মির্জা ফখরুলের পক্ষে আদালতে আইনজীবী আসাদুজ্জামানের সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, ওমর ফারুক ফারুকী, ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজন।
৯ মামলায় জামিন পেলেও আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন ফখরুল। ফলে তিনি এখন কারামুক্ত হচ্ছেন না বলে জানান আইনজীবী আসাদুজ্জামান।