সরকারের উদ্দেশে বিএনপি

চারদিকে চেয়ে দেখুন বিপদ ধেয়ে আসছে

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'চুরি-চামারির নির্বাচন করে এতো আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। চারদিকে চেয়ে দেখুন বিপদ ধেয়ে আসছে।' বুধবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ''গত ৭ জানুয়ারি 'ভোটারবিহীন নির্বাচনে' গোটা বিশ্ব কিন্তু হাততালি দেয়নি। তারা মুচকি হেসেছে। কারণ এই সরকারের মনুষ্যত্ব নেই। এই সরকার দুর্নীতির মহাসাগরে ভাসছে। অথচ তারাই নাকি এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলবেন।'' রিজভী বলেন, সব বিরোধী দলের নেতাকে বন্দি রেখে নিজেরা নিজেরা নির্বাচন করেছেন। 'আমরা-মামুরা' নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের যারা হেরেছে তারাই এখন বলছেন যে, প্রশাসনকে দিয়ে তাদের পরাজিত করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে থেকেই ডিসিদের বলে দিয়েছে যে, সরকার এগুলো চায়। এ ধরনের বক্তব্য এখন আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারি আমলারাও বলছেন। এসংক্রান্ত অডিও-ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'এ ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটা হলো বাকশাল-২ প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনের তামাশা দেখিয়ে তিনি আজীবন ক্ষমতা ধরে রাখতে চান। বাকশালকে সফল করতেই তিনি এ ধরনের প্রতারণার নির্বাচন করছেন। আজকে পুরনো পোশাকে নতুন ভূত। দেখা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাইন ধরে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এটা তো বাকশালেরই নিদর্শন।' রিজভী বলেন, 'সরকার যেন ভেবেছে তাদের পতন নেই। সেজন্যই বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ তো লেলিয়ে দিয়েছেই সঙ্গে তাদের দলদাস পুলিশ প্রশাসনকেও লেলিয়ে দিয়েছে।' তিনি আরও বলেন, '৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ভোটাররা কেন্দ্রে যাননি। তবুও ডামি লাইন তৈরি করে ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। অথচ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা কেউ ভোটার নয়। এগুলো বিদেশি পর্যবেক্ষককে দেখানো হয়েছে। এটা তো জঘন্য তামাশা। কোনো সভ্য দেশের স্বৈরশাসকরাও এ ধরনের নির্বাচন করেছে কি না জানা নেই। রাশিয়া, চীন সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু সেসব দেশে কি নির্বাচন হয়। এই দেশগুলোতে তো স্বৈরশাসক আছে। গণতান্ত্রিক দেশ ভারত আধিপত্য বজায় রাখতেই টার্গেটকৃত দেশে প্রতিভু বসাতে চায়। দেশের জনগণ কি চাইল না চাইল সেটা বিবেচ্য নয়। আওয়ামী লীগ হলো ভারতের প্রতিভু।' কারাগারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ডিভিশন বাতিল করায় নিন্দা জানান রিজভী। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট গ্রেপ্তার ৪০ জন, ২টি মামলায় আসামি ১৩৫, আহত ১৫ জন নেতাকর্মী। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনী তপশিলের পর থেকে মোট গ্রেপ্তার ১৩ হাজার ৪৬৪, মোট মামলা ৫০১, মোট আসামি ৫২ হাজার ৪৭৭ নেতাকর্মী ও মোট আহত ২ হাজার ৬৭ জন নেতাকর্মী এবং মোট মৃতু্য ১৫ জন। বিএনপিসহ সমমনাদের লিফলেট বিতরণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট বর্জন করেছে বলে দাবি করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। এজন্য বুধবার রাজধানীসহ সারাদেশে জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন তারা। এসময় নেতারা বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি 'অবৈধ' সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ। এই অবৈধ সরকারের অবৈধ সংসদে জনগণের সাড়া মেলেনি। 'একতরফা, ডামি' নির্বাচন করে সরকার গঠন করলেও বেশিদিন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। গণতন্ত্রকামী মানুষের ঢলে ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের কারণে আওয়ামী সরকারের চরম বিপর্যয় ঘটবে। শিগগিরই তাদের পতন ঘটবে। জনগণের বিজয় হবে। এদিন সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের জন্য জনগণকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, এই নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। শুধু তাই নয়, জনগণের অংশ ছাড়া এই নির্বাচন বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোও গ্রহণ করেনি। এটা অবৈধ সরকারের অবৈধ সংসদ। এ সময় মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবসহ নেতারা ছিলেন। জয়নুল আবদিন ফারুক সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ১৯৮৬ ও '৮৮ সালে এরশাদের নির্বাচনেও জনগণ অংশগ্রহণ করে নাই। ক্ষমতায় থেকে জোর করে এবার ২০২৪ সালে তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভোটারবিহীন যে নির্বাচন করেছেন, সেই সরকার আপনারা পরিচালনা করতে পারবেন না। ২ থেকে ৪ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে নাই। সেই ভোটের সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হয়েছে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় আছি থাকব। গণতন্ত্রের বিজয় অবশ্যই আনব। এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে সকালে গুলশান-১ এর ইম্পেরিয়াল ভবনের সামনে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হয়। এসময় বিএনপি নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রিজভী জনগণকে ভোট বর্জন করায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা গায়ের জোরে নির্বাচন করে গণতান্ত্রিকভাবে প্রস্থানের পথ হারিয়েছেন। জনগণ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা কর্তৃত্ববাদী শাসন বারবার মানবে না। দুপুরে উত্তরা এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, আরিফ হাওলাদার, রফিকুল ইসলাম, মনির আলম চৌধুরী, রাসেল মাহমুদ, এমজি মাসুম রাসেল, ফরহাদ উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি গাজী রেজওয়ানুল হক রিয়াজ, কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মোখতার হোসাইন প্রমুখ। মালিবাগে লিফলেট বিতরণ করেছে যুবদলের নেতাকর্মী। ফকিরাপুলে লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রদল। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ছাত্রনেতা অলিউজ্জামান সোহেল, মাকসুদা রিমা প্রমুখ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট ও মিছিল করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির নেতাকর্মী। পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে অন্যান্য সমমনা দলগুলো। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মী পৃথকভাবে এই কর্মসূচি পালন করেন।