আইন মেনে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা।
বুধবার সকাল ১০টার পর জাতীয় সংসদের শপথ কক্ষে এই শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই একাদশ সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দ্বাদশ সংসদের এমপি হিসেবে নিজের শপথ নেন। এবারের নির্বাচনেও রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
পরে তিনি অন্যদের শপথ পড়ান। প্রথমে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ এবং শরিক দলের এমপিরা শপথ নেন।
শেখ হাসিনাসহ দ্বাদশ সংসদের এমপিরা নিজ নিজ নাম উচ্চারণ করে স্পিকারের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকেন- 'সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, ৫
তাহা আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; এবং সংসদ-সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দেব না।'
এরপর সবাই শপথপত্রে নিজেদের আসনের নাম লিখে সই করেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিব এ কে এম আবদুস সালাম।
শপথ অনুষ্ঠানে এমপিদের প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডান পাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, ওবায়দুল কাদের। আর বাঁ পাশে মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, নূরুল মজিদ হুমায়ূন, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবদুর রাজ্জাক ছিলেন।
শপথগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠান শেষে সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ায় নতুন এমপিদের জন্য ছিল চা-চক্রের আয়োজন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ২৯৮ জনের মধ্যে যারা এদিন উপস্থিত ছিলেন, তাদের তিন দফায় শপথ পড়ান স্পিকার।
দ্বিতীয় দফায় বেলা ১১টায় শপথ নেন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত সদস্যরা। আর জাতীয় পার্টির ১১ জন দুপুর ১২টায় তৃতীয় দফায় শপথ নেন।
শপথ নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'আমরা চাই উন্নয়ন, যা দৃশ্যমান হচ্ছে। ইশতেহারেই সব তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের ব্যর্থতা ভুলভ্রান্তি আসবে, সেজন্য আমরা চাই পার্লামেন্টে সবারই কথা বলার সুযোগ থাকবে- যারা স্বতন্ত্র, বিরোধী দল।'
ভোটের আগে দল পাল্টে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চমক দেখানো শাহজাহান ওমর সাংবাদিকদের বলেন, 'নাথিং নিউ'।
আওয়ামী লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন বলেন, 'বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্ত মোকাবিলা করে আজকের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।'
গত দুই মেয়াদে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, '২০৪১ সালে স্মার্ট নাগরিকদের নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা- এটাই আজকের দিনের প্রত্যয়।'
তিনি বলেন, 'ইশতেহারে বলাই আছে যে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান। আমরা সেই সেস্নাগান নিয়ে আগাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশে বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।'
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'এটা তো আমার চতুর্থবার। সুতরাং ভূমিকা আগে যা ছিল মোটামুটি তাই, আমার দল সরকার প্রধান, দলের প্রধান আমাদের ইশতেহারে যে বিষয়াদি আছে, কিছু বিষয় আছে চিরকালীন, আমি তুলে ধরব। বিশেষ করে আমার এলাকা গ্রামীণ এলাকা, হাওড় এলাকা সেই বিষয়গুলো আমি তুলে ধরব।'
আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ার, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। আমি বিশ্বাস করি, এই সংসদ দৃঢ় প্রদক্ষেপে সেদিকে এগিয়ে যাবে।'
জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, 'ধারাবাহিকতা ছিল পনের বছর কাজ করার, সে ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছি। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা করব।'
দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, গোলযোগের কারণে ময়মনসিংহের একটি আসন স্থগিত রেখে ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন মোট ২২৪ জন। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের অনেকেই শপথ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মুজিব কোট পরে।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি দশম সংসদের মতো এবারও নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
এদিকে দলীয়ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ে ছয়গুণ বেশি আসনে স্বতন্ত্ররা জয় পাওয়ায় দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্ররা জোট করে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন করলে তাতে বাংলাদেশের আইনে কোনো বাধা নেই।