জাপার ভাগ্য স্বতন্ত্রদের হাতে
প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রেজা মাহমুদ
দশম জাতীয় সংসদের ভূমিকায় ফিরতে চায় জাতীয় পার্টি। প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার পাশাপাশি প্রভাবশালী কয়েক নেতা মন্ত্রীও হতে চান। কিন্তু নির্বাচনে আসন সংখ্যার দিক থেকে এই পার্টিটি আছে তৃতীয় অবস্থানে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ফলে প্রাধান বিরোধী দলের ভূমিকায় জাপা থাকবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে প্রধানমন্ত্রীকে ম্যানেজ করে ২-৩ মন্ত্রণালয় বাগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী কয়েক নেতা।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানেও জাপার ভাগ্য নির্ভর করবে স্বতন্ত্রদের ছাড়ের ওপর। কারণ, সংসদীয় রাজনীতিতে কয়েকজন রাজনীতিক মিলে একটি দল গঠন করলে ওই দল একটি রাজনৈতিক দল না হলেও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে পারে। আরও এই দল বা মোর্চাকে 'ককাস' বলা হয়। সে হিসেবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা ককাস গঠন না করলে প্রধান বিরোধী দল হবে জাতীয় পার্টি।
এদিকে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের প্রশ্নে প্রায় একই কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা তাদের অবস্থান কীভাবে রাখবেন, এর ওপর নির্ভর করছে বিরোধী দল কারা হবে। স্বতন্ত্রদের অবস্থান ঘোষিত হওয়ার পর বিরোধী দল হবে। নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ককাস গঠন না করলে জাতীয় পার্টি হবে প্রধান বিরোধী দল।
আনিসুল হক বলেন, ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। অসুস্থতা বা অন্য কোনো জরুরি কারণে কেউ শপথ নিতে না পারলে আগে জানাবেন। এরপর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সংসদ নেতা নির্বাচন করবেন। সংসদ নেতাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নতুন সরকার গঠনের অনুরোধ করবেন। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত এই সরকার দায়িত্ব পালন করবে। তবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রীদের শপথ নিতে হবে।
গত ৭ জানুয়ারি বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া, এ কে এম সেলিম ওসমান, মো. আশরাফুজ্জামান, এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান এবং শরিফুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন।
সংবিধান অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের সরকারি গেজেট প্রকাশের পর নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পড়ান স্পিকার। গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে যদি স্পিকার সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করতে না পারেন বা না করেন, তাহলে এর পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আর কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হবে। তবে এই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্পিকার যথার্থ কারণে তা বাড়াতে পারবেন।
এদিকে এবারের নির্বাচনে মহাজোটে থাকার কারণে ২৬ আসনে ছাড় দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী-লীগ। কিন্তু ১১ আসনে জয়লাভে সক্ষম হয় দলটি। এর বিপরীতে ৬১টি আসনে জয় পায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোটের লড়াইয়ে জাপার এমন পতনে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এমনকি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শপথ না নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের সংসদেও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির থাকার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ককাস গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ থাকলেও বেশির ভাগ নেতাই আওয়ামী লীগের পদধারী হওয়ায় জাতীয় পার্টিকেই এই ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। এ ছাড়াও সংসদে প্রায় সব সদস্য আওয়মী লীগের অংশ হওয়ায় সংসদীয় আলোচনা তার গুরুত্ব হারাতে পারে, তাই জাতীয় পার্টি এই সুযোগ পেতে পারে।
আজই শপথ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি
এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আজই শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর নিজ বাসভবনে তিনি এ কথা জানান।
অবশ্য, মঙ্গলবার সকাল থেকেই দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা বুধবার শপথ নিতে সংসদে যাচ্ছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার সকালে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন বলেছিলেন, 'আমরা বুধবার শপথ নিচ্ছি না। বৃহস্পতিবার আমাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেদিন আলোচনা করে শপথের বিষয়টি ঠিক করা হবে।'
পরে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রম্নত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, 'বৃহস্পতিবারের সভা বাতিল করা হয়েছে। বুধবারই দলের নবনির্বাচিত ১১ সংসদ সদস্য শপথ নেবেন।'
নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে নাটকীয়তা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগ নিয়ে দেনদরবার করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। কিন্তু জিততে পেরেছে মাত্র ১১টিতে।