আজ সাংসদদের, কাল মন্ত্রিসভার শপথ
ঘোষিত ফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২২২, স্বতন্ত্র ৬২, জাতীয় পার্টি ১১, জাসদ ১, কল্যাণ পার্টি ১ ও ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি আসন পেয়েছে
প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে পঞ্চমবার এবং টানা চারবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনের পর মঙ্গলবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয় এবং আজ তারা শপথ নেবেন। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করবে। এর আগে বেসরকারি ফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন সোমবার বিকালেই তাদের বিজয়ীদের নামের তালিকা বিজি প্রেসে পাঠায়। মঙ্গলবার ২৯৮ আসনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশ করা হয়। আইন অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নিতে হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ চলে। ভোটগ্রহণের পর গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। সোমবার নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ২২২টি আসন পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬২টি আসন। জাতীয় পার্টির প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ১১। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জাতীয় সংসদ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। শপথ নেওয়ার সব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদ সদস্যদের শপথের বিষয়টি জাতীয় সংসদ সচিবালয় ১ এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ ও মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টনের কাজে দাপ্তরিক সহায়তা দিয়ে থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, যেহেতু নির্বাচনকালে সরকারের অধীন মন্ত্রিসভা আছে, সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদের মেয়াদ ও মন্ত্রীদের পদে থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। মন্ত্রীদের পদের মেয়াদের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে (৫৮/৪) বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে, তবে এ পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাদের উত্তরাধিকারীরা কার্যভার না নেওয়া পর্যন্ত তারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদের বিষয়ে সংবিধানে (৫৭/৩) বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার না নেওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকতে এ অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করবে না। মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশর মতো সংসদ সদস্য রয়েছেন। আগের সংসদের মেয়াদ চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত আর মন্ত্রীদের মেয়াদ নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত। ফলে মেয়াদ নিয়ে জটিলতা নেই। বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। রীতি অনুযায়ী, নবনির্বাচিত সাংসদদের গেজেট প্রকাশের পর শপথের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে তা পাঠাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। তবে ভোটের কত দিনের মধ্যে গেজেট হবে, সে বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এদিকে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কোনটি হবে, তা স্পষ্ট নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় বিরোধীদল কারা হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বিরোধী দলে থাকতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, 'স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আলাদা থাকবেন, না কীভাবে থাকবেন, তা যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিষ্কার হয়, ততক্ষণ বোঝা যাচ্ছে না বিরোধীদল কারা হবে। এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।' ঢাকা-৪ আসনের গেজেট প্রকাশ স্থগিত এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনের (যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুর) গেজেট প্রকাশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সানজিদা খানমের রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উলস্নাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, মোতাহার হোসেন সাজু ও এবিএম আলতাফ হোসেন। মোতাহার হোসেন সাজু জানান, অনিয়মের অভিযোগে ১৮ কেন্দ্রে আবার ভোট চেয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করেছিলেন। একটি কমিটি করে সেই আবেদনের ওপর ১০ দিনের মধ্যে ইনকোয়ারি করতে বলা হয়েছে আর ইনকোয়ারি রিপোর্ট দাখিল করতে বলেছেন। এ সময় পর্যন্ত ঢাকা-৪ আসনের নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এর আগে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তিনি ২৪ হাজার ৭৭৫ হাজার ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নিয়ে সানজিদা খানম পান ২২ হাজার ৫৭৭ ভোট। আর বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৮ ভোট। বঙ্গভবনে অতিথি ১৩-১৪শ ঐতিহ্যগতভাবেই মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৪টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা যখন শপথ নেয়, আমন্ত্রিতদের প্রায় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ জনের তালিকা থাকে। আমরা তাদের শপথে আমন্ত্রণ জানাই। মন্ত্রীদের স্ত্রীরা আমন্ত্রণ পাবেন কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের একটি তালিকা করা আছে। আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, মন্ত্রীদের স্ত্রীদের নামের তালিকা আছে কি না।' তবে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন বা কতজন শপথ নেবেন তা এখনো জানাননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জয়ীদের গেজেট প্রকাশ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনে জয়ীদের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরীফুল আলম। তিনি বলেন, ২৯৮ সংসদীয় আসনে জয়ীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গত ৭ জানুয়ারি ৩০০টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে নওগাঁ-২ আসনের ভোট বাতিল করা হয়েছিল, একজন প্রার্থীর মৃতু্যর কারণে। ১২ ফেব্রম্নয়ারি সেখানে নির্বাচন হবে। আরেকটি কেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ভোটের ফল স্থগিত করা হয়েছিল ময়মনসিংহ-৩ আসনে। সে আসনের একটি কেন্দ্রের নির্বাচন ১৩ জানুয়ারি হবে বলে জানান তিনি। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এ দুটো বাদ দিয়ে ২৯৮ আসনের ফল যাচাই করে দেখা হয়েছে। সব ঠিক আছে। গেজেটে নির্বাচিত প্রার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ও আসন নম্বর উলেস্নখ করা হয়।