নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা
মিছিলে বোমা হামলা ভাঙচুর, নিহত ১
প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দেশের চার জেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে ভোট-পরবর্তী পরাজিত প্রার্থী ও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক তরুণ মারা গেছেন। এছাড়া মাদারীপুরের কালকিনিতে বিজয় মিছিলে বোমা হামলা, পাবনায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও পটুয়াখালীতে নৌকার ৭ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ৪২ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে ভোট-পরবর্তী পরাজিত প্রার্থী ও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত নুরুল আমিন (২৪) নামে এক তরুণ মারা গেছেন। সোমবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। তিনি আটপাড়া উপজেলার লুনেশ্বরপুর ইউনিয়নের দেওগাঁও গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার। ইফতিকার উদ্দিন পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৮০৩ ভোট। অসীম কুমার পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত ৯টার দিকে নির্বাচনের ফলাফল জানাজানি হলে ট্রাক প্রতীকের সমর্থকেরা সুখারি ইউনিয়নের দেওশ্রী বাজার ও লুনেশ্বর ইউনিয়নের দেওগাঁও
এলাকায় বিজয় মিছিল করেন। উভয় স্থানেই নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ দুটিতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সংঘর্ষে ট্রাক প্রতীকের সমর্থক নীরব মিয়া, কবিরুল মিয়া, কামরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, আশ্রাব আলী, জসিম উদ্দিন, বাকী মিয়া, লিখন মিয়া, আসাদুজ্জামান, গোলাম হোসেন, নুরুল আমিন, রাজন মিয়া ও নৌকার সমর্থক তায়েব আলী রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে আটপাড়া ও মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে যান।
আশঙ্কাজনক হওয়ায় নৌকার সমর্থক তায়েব আলী, ট্রাকের সমর্থক নুরুল আমিন ও রাজন মিয়াকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাতেই সেখান থেকে নুরুল আমিন ও রাজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে নুরুল আমিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাওহীদুর রহমান বলেন, হামলায় নুরুল আমিন নামের এক তরুণ ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান জানান, রোববার রাতে হামলার ঘটনার পর থেকে দুই পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত।
অন্য দিকে আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, কালকিনি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের বিজয় মিছিলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার বেলা ১১টার দিকে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালীনগর এলাকার এমরাত সরদার (৪০) ও আক্কেল আলী সরদার (৪০), দক্ষিণ কানাইপুর এলাকার আবু বকর (৩০), মিরাকান্দি এলাকার রুবেল ফকির (২৬) ও আজিম চৌকিদার (২৫), টুমচর এলাকার মো. ইশরাক (১৬), আলীনগর এলাকার রফিক ফকির (২৫)।
দলীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান ও সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে ৩৪ হাজার ৬৬২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম (ঈগল)। বিজয়ী তাহমিনা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর আবদুস সোবহান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার সকালে তাহমিনার সমর্থক আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সরদারের নেতৃত্বে একটি বিজয় মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কালিগঞ্জ থেকে ফাসিয়াতলা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। পথে আলীনগর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান শাহিদ পারভেজের সমর্থকেরা মিছিলে অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে আহত হয় অন্তত ১০ জন।
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ও মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল থেকে এমরাত সরদার ও আবু বকরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহমুদ বলেন, বোমা হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে বেশ কয়েকজন এসেছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরাও জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের সবার শরীরের বোমার আঘাতের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
আলীনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমাদের ঈগলের মিছিলে লক্ষ্য করে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহেদ পারভেজের লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আমাদের অনেক লোক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন গুরুতর অবস্থা। একজনের হাতের কবজি উড়ে গেছে।'
আলীনগর ইউপির চেয়ারম্যান শাহেদ পারভেজ বলেন, 'আমি ঢাকায় আছি। রোববার রাত থেকেই ঈগলের অনুসারী হাফিজুর তার লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। সোমবার সকালে হাফিজুর তার লোকজন নিয়ে ফাসিয়াতলা বাজারে আসেন। তখন সবার হাতে দেশীয় অস্ত্র ও বোমা ছিল। এ সময় ইমরাত নামের একজনের ব্যাগে থাকা একটি বোমা বিস্ফোরিত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। হাফিজুর ওই সময় আমার কর্মীদের ওপরে হামলা চালানোর নির্দেশ দিলে সংঘর্ষ বাধে। বিষয়টি আমি পুলিশকে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।'
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, কালকিনিতে যেসব এলাকায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে সাহেবরামপুর, লক্ষ্ণীপুর, কয়ারিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও কালকিনি পৌরসভার ভুরঘাটা, পুরান বাজারসহ তিনটি স্থানে ঈগল প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
কালকিনি পৌরসভার মেয়র এস এম হানিফ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ঈগল প্রার্থীর লোকজন অতি উৎসাহী হয়ে এই হামলা চালাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঈগল প্রতীকে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, 'নির্বাচনে পরে আমার সব কর্মী সমর্থককে কোনো ধরনের সহিংসতা না করার নির্দেশনা দিয়েছি। সবাইকে শক্ত থাকতে বলেছি। কিন্তু কিছু এলাকায় সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। এখানে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের উসকানিতে তার কিছু কর্মী আমাদের বিজয় মিছিলে হামলা চালায়। এভাবেই সংঘর্ষ ছড়ায়। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি পুলিশের সহযোগিতাও চেয়েছি।'
পাবনা প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পাবনায় বেশকিছু বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলার চাটমোহর ও বেড়া উপজেলায় এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, গুনাইগাছা, পৈলানপুর, ছাইকোলা, লাঙলমোড়া ও চরনবীন গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ১০ জন সমর্থকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় নৌকার সমর্থকেরা।
এর মধ্যে লাঙলমোড়া গ্রামের ইউসুফ আলী, ফজলুর রহমান, চরনবীন গ্রামের নাজমুল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে নৌকার সমর্থকরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাইকোলা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান নুরু বলেন, 'নৌকার সমর্থকরা বা আমার কোনো লোকজন কারো বাড়িতে হামলা করেনি। কারো বাড়ি ভাঙচুরের খবর জানা নেই। এমন কোনো ঘটনা আমার এলাকায় ঘটেনি।'
এদিকে, গুনাইগাছা ইউনিয়নের নতুনপাড়া ও পৈলানপুর গ্রামের ময়েজ মাস্টার, হাসান মাস্টার, বান্টুসহ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। রোববার রাতে ও সোমবার সকালে এসব হামলা হয়।
হামলায় নতুনপাড়া গ্রামের আমিন উদ্দিন, আহসান আলী, ময়নাল হোসেন, রামচন্দ্রপুর গ্রামের আমুদ আলী আহত হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবুল কাশেম ও জিলালসহ কয়েকজনের দোকানপাট খুলতে দেয়নি হামলাকারীরা। ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
গুনাইগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে সোমবার বিকালে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এছাড়া একই উপজেলার ফৈলজানা পবাখালী গ্রামে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নৌকার সমর্থকদের মারধরে আহত হয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৪ সমর্থক। এর মধ্যে সালাউদ্দিন ও রুহুল আমিন লিংকন নামের দুজনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করায় ফৈলজানা ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে নৌকার সমর্থকরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ আহতদের।
এছাড়া ফৈলজানা গ্রামে সোমবার সকালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আশরাফুল ইসলাম নামের নৌকার এক সমর্থক ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন বলা জানা গেছে। তাকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ফৈলজানা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, 'অভিযোগ সত্য নয়। রোববার রাতে ফলাফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এ নিয়ে ছেলেপেলেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে এটুকু শুনেছি। সোমবার সকালে উঠে শুনি মারামারি হইছে। একজনকে চাকু মারছে। এর মধ্যে আমার ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।'
অন্যদিকে, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পাবনার বেড়া উপজেলার ৮-১০টি বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চারজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার সকালে পাবনা-১ আসনের বেড়া পৌরসভা এলাকার সানিলা গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আহত করার অভিযোগে ওঠে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবিত উপজেলা কমিটির স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ দুলাল অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর জয় লাভের পর থেকেই পাবনা-১ আসনের বিভিন্ন এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
সকালে সানিলা গ্রামে নৌকার সমর্থকরা বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা করে। এ সময় হামলায় একজন নারীসহ চারজন আহত হয়। আহতদের নাম জানা যায়নি।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসিফ শামস রঞ্জনকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, এসব ঘটনা জানার পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলাকা পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে কেউ এখনো লিখিত অভিযোগে দেয়নি, তবে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালী-৪ আসনের বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাওয়ার পথে নৌকার ৭ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী হাটখোলা বাজার সংলগ্ন মুজিব কিলস্না এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহম্মদ।
হামলায় আহতরা হলেন- বশির চৌকিদার (৫৫), মো. মিজানুর রহমান (৫০), শিপন (৪০), ইদ্রিস প্যাদা (৬৪), মো. সোহেল (৪২), মিজানুর রহমান হাওলাদার (৪৮) ও আকিব (২৪)।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার চিন্ময় চন্দ্র হালদার জানান, সাতজনকে আহতাবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের সবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কম বেশি দায়ের কোপ ও লাঠির আঘাত রয়েছে।
এর মধ্যে বশির চৌকিদার গুরুতর জখম হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মিজানুর রহমান হাওলাদার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান এই চিকিৎসক।
আহতরা ও স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে টিয়াখালী ইউনিয়নের হাটখোলা বাজার থেকে পটুয়াখালী-৪ আসনের বিজয়ী প্রার্থী মো. মহিব্বুর রহমান মহিবের সঙ্গে দেখা করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন নৌকার সমর্থকরা। তারা বাজার সংলগ্ন মুজিব কিলস্না এলাকায় পৌঁছালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুজন মোলস্নার নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়।
সুজন মোলস্না ঈগল প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদারের সমর্থক। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুজন মোলস্না বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তার বাড়ি তিন কিলোমিটার দূরে।
তিনি বলেন, 'পূর্বের জুয়েল মার্ডার নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। কারণ যারা আহত হয়েছেন তারা বেশির ভাগই জুয়েল মার্ডার মামলার আসামি। নৌকার সমর্থন করে জয়ী হওয়ার পর আসামিরা বাদী খোকন প্যাদার বাড়িতে হামলা করেছে। তখন তারা প্রতিহত করে তাদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এটাই সত্য ঘটনা।'
এ বিষয়ে কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহম্মদ জানান, 'এ ঘটনায় এখনো অভিযোগ পাইনি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'