'একতরফা' নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে তাকে 'অবৈধ'-অগণতান্ত্রিক' উলেস্নখ করে 'রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখা'র ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দলটি দুই দিনের 'গণসংযোগ' কর্মসূচি দিয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে গণসংযোগ করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরদিন সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এই ঘোষণা দেন। দীর্ঘদিন বন্ধ
\হথাকার সোমবার গুলশানের কার্যালয়ে নেতারা প্রথম আসেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মঈন খান বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত গণসংযোগ অব্যাহত রাখা হবে। রাজপথে হাটে-ঘাটে মানুষের সঙ্গে কথা বলে লিফলেট বিতরণ করা হবে। গণসংযোগের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি হবে। সেই সচেতনতা হচ্ছে গণতন্ত্রের সচেতনতা, মানুষের যে অধিকার প্রশ্নের মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সচেতনতা। বুধবারও এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তারপরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মঈন খান দাবি করে বলেন, ৭ জানুয়ারির 'ডামি নির্বাচন' জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ জন্য বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণকে বীরোচিত অভিনন্দন জানাই। সারা দেশে এমন অসংখ্য কেন্দ্র ছিল, যেসব কেন্দ্রে সারা দিনে একটি ভোটও পড়েনি কিংবা হাতেগোনা কয়েকটি ভোট পড়েছে।
মঈন খানের দাবি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য আসনের ১৯৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি কেন্দ্রে একটি ভোট পড়েনি। এটা প্রমাণ করে, ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভুয়া।
সরকার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির হার বাড়াতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল দাবি করে মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে 'ডামি প্রার্থী' দাঁড় করিয়ে কৃত্রিম প্রতিযোগিতা করেও কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি ভাতা কার্ডধারীদের হুমকি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক ভোট প্রদানের আদেশ জারিসহ নানা পন্থা অবলম্বন করেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়া যায়নি।
মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করে, নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে বিজয়ী কিংবা বিজিত ঘোষণা করা হবে সবকিছুই থাকে পূর্বনির্ধারিত। এই সরকার আর এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করলে জনগণের ভোটকেন্দ্রে আসার কথা ছিল। কিন্তু জনগণ ভোট বর্জন করে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিয়েছে, এই সরকার আর এই নির্বাচন কমিশন সবই ভুয়া। তিনি আরও বলেন, এই 'ডামি নির্বাচনের' মাধ্যমে শেখ হাসিনা কোনো সরকার গঠনের চেষ্টা করলে সেটি হবে 'গভর্নমেন্ট অব দ্য ডামি, বাই দ্য ডামি, ফর দ্য ডামি'। কিন্তু দেশের মানুষ পরনির্ভরশীল 'ডামি সরকার' নয়, জনগণ চায় তাদের ভোটে নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী জবাবদিহিমূলক সরকার।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং যে পরিমাণ ভোটের উপস্থিতি দেখানো হচ্ছে এটা যে ভুয়া- সকল মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়া, দেশ-বিদেশের ব্যক্তি, ভাড়াটিয়া অবজারভার পর্যবেক্ষকও বলেছেন। বিএনপিসহ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দলের দাবি হলো অবিলম্বে ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বাতিল করতে হবে, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে, রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং গুম-খুন-গায়েবি মামলা এবং পেশিশক্তি দিয়ে জনগণের আন্দোলন দমনকারী জুলুমবাজ সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার আর সিন্ডিকেট করে জনগণের সমস্ত সম্পদ ও অর্থ লুণ্ঠনকারী এই সরকারকে বিদায় করতে হবে- এই দাবিতে গণসংযোগ হবে।'