ভোটের হার ৪১.৮ শতাংশ, সন্দেহ হলে চ্যালেঞ্জ করুন
নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সিইসি
প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিএনপির বর্জনের মধ্যে কিছু আসনে গোলযোগের মধ্যে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনের দিন অনিয়মের যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে 'খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা থাকলে' আমলে নেওয়া হবে।
সোমবার বিকালে নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এসে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল, ভোটের হার ও অভিযোগসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোট হয় রোববার। নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থীর মৃতু্যতে সেখানে পরে ভোট হবে।
সিইসি বলেন, 'নির্বাচনটা সমাপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন রকম ধারণা ছিল, পক্ষে-বিপক্ষে ক্যাম্পেইন ছিল। একটি গুরুত্বপূর্ণ দল ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে, জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করেছে
ভোটাধিকার প্রয়োগ না করার জন্য। সেটি একটি বিবেচ্য বিষয় ছিল। আমরা খুশি হতাম, যদি সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে এটার সর্বজনীনতা যদি আরও বিস্তৃত হতো, নির্বাচনটা আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, সেটা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।'
নির্বাচন নিয়ে ভোটের দিন নানা অভিযোগ এসেছে ইসিতে। এসব অভিযোগ কতটুকু আমলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, 'রিটার্নিং অফিসার যে রেজাল্ট দেন, সেটিই চূড়ান্ত। এরপর ইসি যদি সঙ্গত মনে করে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর অভিযোগ থাকলে বিবেচনা করা হতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি মনে করেন ভোট সঠিক হয়নি, ভোটে কারচুপি হয়েছে, ফলাফল প্রভাবিত হয়েছে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ 'উন্মুক্ত থাকবে'। তারা গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে 'নালিশ' দায়ের করতে পারেন।
ইসিতে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেসব নিয়ে কমিশনও শিগগিরই বসবে জানিয়ে সিইসি বলেন, 'কী কী অভিযোগ এসেছে, তা নিয়ে কমিশন বসবে। যেগুলো খতিয়ে দেখার মতো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেগুলো দেখা হবে।'
এর আগে এদিন সোমবার সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিইসি বলেন, 'কারও যদি কোনো সন্দেহ, দ্বিধা থাকে, ইউ ক্যান চ্যালেঞ্জ ইট, এবং যদি মনে করেন, এটাকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম, যে ওটাকে চ্যালেঞ্জ করে, আমাদের অসততা, যদি মনে করেন, তাহলে সেটাকে আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।'
তিনি আরও বলেন, 'টোটাল রেজাল্টটা আসার পর কে কতটা ভোট পেল, ২৯৮টা আসনের যে রেজাল্টগুলো- একজন দুজন তিনজন চারজন ওটাকে যোগ করলে একটা যোগফল বের হয়। এভাবে তিনশ'টা, এটা কিন্তু খুব কঠিন নয়, লাখ লাখ, কোটি কোটি নয়। এটাকে যোগ করলে এক্সেলে ফেলে দিলে পার্সেন্টেজটা একটা টিপ দিলেই বেরিয়ে আসে। যখন আমি ২টার সময় বলি, তখন কোনোভাবেই এটা পুরোপুরি সঠিক হওয়ার কথা নয়, যখন ৪টার সময় বলি, এটা কোনোভাবেই সঠিক হওয়ার কথা নয়। যখন রাতের ১০টায় বলি, যদি সব চলে আসে, বা এখন যদি বলি, সব চলে আসছে, তাহলে ইয়েটা দেখা যাবে।'
কেউ যদি মনে করেন এ তথ্যে ভুল রয়েছে, তিনি চ্যালেঞ্জ করতে পারেন জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের এ হার নিয়ে সমালোচনাকারীদের তথ্য-প্রমাণ নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হলো।
একজন প্রার্থীর মৃতু্যতে নওগাঁ-২ আসনের ভোট আগেরই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রোববার ভোটের মধ্যে একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের ফল স্থগিত রাখে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। ফলে এ পর্যন্ত ২৯৮ আসনের ফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে ২২৩টি আসন পেয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। ৬১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। যে ২৬ আসনে আওয়ামী লীগ লাঙ্গলকে ছাড় দিয়েছিল, তার অর্ধেকের বেশি আসন তারা খুইয়ে বসেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে।