নির্বাচন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে :১৬ দেশের পর্যবেক্ষক
প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকা ১৬ দেশের দেশের পর্যবেক্ষক। সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে পৃথক দু'টি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তারা।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাতটি দেশের পর্যবেক্ষক দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সাবেক উপ-সহকারী ও হোয়াইট হাউস এনএসসির চিফ অব স্টাফ এবং আমেরিকান গেস্নাবাল স্ট্র্যাটেজিসের (এজিএস) সিইও আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রে বলেন, আমরা মার্কিন ১
যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রাক্তন কংগ্রেসম্যান এবং সাংবাদিকদের একটি দল। আমরা বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। রোববার আমরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার ২০টি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি।
তিনি বলেন, আমরা গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসেছি এবং রোববার পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের মানুষকে দেখেছি তাদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক যা পৃথিবীর অন্য দেশে খুব কমই পাওয়া যায়। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যারা ভোট না দেওয়ার জন্য জরিমানা আরোপ করে এবং অনেক দেশ আছে ভোট দিতে উৎসাহিত করার জন্য অতিরিক্ত নাগরিকত্ব সুবিধা প্রদান করা হয়? কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার আগ্রহ ও উৎসাহ রয়েছে যা আমরা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহী তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী উলেস্নখ করে গ্রে বলেন, সবাই বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আশা করেছে। আমরা দেখেছি, গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের ভোট প্রক্রিয়া বিশ্বের অনেক দেশের মতই।
গ্রে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে বিরত থাকা এবং একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক দলটি। সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে পরিবেশ আরও সুন্দর ও আনন্দময় হতো। আমরা যেসব কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি, সেখানে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখেছি, তারা ভোট দিতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দল দ্বারা ভোটারদের কোনো ভয় দেখানো হয়নি- যা?নির্বাচনে এটা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য ভালো ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, আমরা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা শুনেছি? যেটি অপ্রত্যাশিত। কিন্তু সার্বিক পর্যালোচনা করলে নির্বাচনী পরিস্থিতিতে সেসব ঘটনা খুবই নগণ্য। সব ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখানে উপস্থিত সব পর্যবেক্ষক একমত যে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান ও সানডিগো সিটির কাউন্সিলম্যান জিম বেটস, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সাবেক পার্লামেন্ট মেম্বার শাওকেট মুলেনমানে, যুক্তরাজ্য থেকে আসা ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ইকনোমিক ফোরামের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার জন বস্নাকবার্ন, আয়ারল্যান্ড থেকে আসা ইইউ রিপোর্টার এর পলিটিক্যাল এডিটর নিকোলাস হু পয়েল, জার্মানির জিবিপি ইন্টারন্যাশনালের সিইও ভলকার উয়ে ফ্রেডরিখ, নরওয়ে থেকে আসা ওয়ার্ল্ড পিচ অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ডার্স নিলস হেনরি, ইব্রাকি প্রিফেকচারাল অ্যাসেম্বলি জাপানের প্রাক্তন সদস্য ইয়োশিহিরো আইডিই উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পর্যবেক্ষকরা। তারা জানান, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ কোনো বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পেরেছে। তারা কোথাও কোনো সহিংসতা দেখেননি।
উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে : ৯ দেশের পর্যবেক্ষক
এদিকে এ দিন দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে ভারতসহ ৯টি দেশের পর্যবেক্ষকরা জানান, বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং দেশটির মুসলিম কংগ্রেসের ডেপুটি চিফ সৈয়দ আলী জহির বলেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইরাক, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল এবং মালদ্বীপ থেকে এসেছি। আমরা ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে প্রাক-নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন আমরা খুব সকালে পরিদর্শন শুরু করি। ঢাকা শহরের আশপাশে প্রায় ৩০টি ভোটকেন্দ্র ঘুরেছি আমরা।
সৈয়দ আলী জহির বলেন, বাংলাদেশে আসার পরই আমরা জানতে পারি যে, নির্বাচন বিরোধীরা ঢাকায় একটি ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর, আগুন লাগানোর কিছু খবরও আমরা শুনেছি। আমরা এই ধরনের কার্যকলাপের জন্য তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এই ধরনের সহিংস ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে বলি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সরকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগেই বলেছি, ৫ জানুয়ারি থেকে গতকাল (রোববার) পর্যন্ত আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। সাধারণ মানুষের ভোটদানে অনেক আগ্রহ ও উদ্দীপনা রয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়েছে। আমরা মানুষকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখেছি। এর মধ্যে নারী ও নতুন ভোটারদের উপস্থিতি আমাদের চোখে পড়েছে।
তিনি বলেন, সব কেন্দ্রের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোট দিতে তারা কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। নির্বাচনে প্রার্থী বা দল দ্বারা ভোটারদের কোনো ভয়ভীতি প্রদর্শনও দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সূর, এশিয়া টাইমসের বিশেষ প্রতিবেদক জাভিয়ের পিয়েদরা, কনজারভেশন কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এমানুয়েল ফিনদোরো-ওবাসি, আফ্রিকা হাউজ লন্ডনের পরিচালক রিচার্ড সেমেতিগো, আইডিসিও'র সভাপতি জুন শিনদো, মালদ্বীপ নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমজাদ মুশতাফা, এডিইএল'র ভাইস চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আইদ মোহামেদ, নেপাল মুসলিম কমিশনের সভাপতি সামিম মিয়া আনসারি ও সদস্য মোহামেদিন আলী, থাইল্যান্ডের মানবাধিকার কর্মী জুরপাস পিথাকসেকাথারন ও ইরাকের মানবাধিকার কর্মী তালার মাহমুদ কারীম।
নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়নি, জানাল কানাডা
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি কানাডা সরকার। সোমবার এক বার্তায় এ কথা জানায় কানাডা হাইকমিশন।
বার্তায় আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে কানাডার যে দুই নাগরিকের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে, তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাই নির্বাচনের বিষয়ে তাদের (দুই পর্যবেক্ষক) মতামতের সঙ্গে কানাডা সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আমন্ত্রিত পর্যবেক্ষক হিসেবে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের কয়েকজন পর্যবেক্ষক। পরে সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এতে অংশ নেন কানাডার পার্লামেন্ট সদস্য চন্দ্রকান্ত আর্য ও সিনেটর ভিক্টর ওহ।
সংবাদ সম্মেলনে কানাডার পার্লামেন্ট সদস্য চন্দ্রকান্ত আর্য বলেন, 'ভোট সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। ভোটে রেকর্ডসংখ্যক নারী ভোটার উপস্থিত ছিলেন। আমরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাই।'
এক প্রশ্নের জবাবে চন্দ্রকান্ত আর্য বলেন, 'যারা ভোট বর্জন করেছে, সেটা তাদের বিষয়, এটা আমাদের বিষয় নয়। কানাডায়ও ভোট ৪৩ শতাংশ পড়েছিল, সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। জনগণ ভোট দিতে পারছে কিনা, এটাই দেখার বিষয়। ভোটার কত শতাংশ এলো, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যারা এসেছে, তারা ঠিকমতো ভোট দিয়েছে নির্বিঘ্নে। তাই এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণ নেই।'