রাজধানীতে ভোটার খরায়ও আনন্দ-উৎসবের আমেজ
অনেক কেন্দ্রে ভোটারের যথেষ্ট উপস্থিতি ছিল আতঙ্ক না থাকলেও অনেকেই ভোট দেননি
প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০২
যাযাদি রিপোর্ট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল তুলনামুলক কম। তবে ভোটকে ঘিরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় উৎসবের আমেজ ছিল। ঢাকায় কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। জাল ভোটেরও কোনো ঘটনা ঘটেনি। একজন ভোটারের একাধিক ভোট দেয়ারও কোনো নজির মেলেনি।
ঢাকা-২: আসনটির কামরাঙ্গীরচর, গাবতলীর কিছু অংশ, কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা ও শুভাড্যা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং সাভার উপজেলার আমিনবাজার, তেতুলঝুড়া ও ভাকুর্তা নিয়ে গঠিত। আসনটিতে ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫৫ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮৯ জন।
এই আসনের কামরাঙ্গীচরের একাধিক ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটারদের উপস্থিতি ছিল যথেষ্ট। তবে তা আশানুরূপ নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। কামরাঙ্গীরচরজুড়ে ছিল রীতিমতো ভোট উৎসব। একমাত্র খাবারের দোকান ছাড়া প্রায় প্রতিটি দোকানই বন্ধ ছিল। একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আতঙ্কে নয়, ভোট দেয়ার আনন্দে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন।
বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়. তারা সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন। এরপর সপরিবারে বিভিন্ন এলাকা ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে বেড়িয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেটে অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এর কারণ হিসেবে ভোটাররা জানালেন, এখানকার ভোটারদের অধিকাংশই স্থানীয়। স্বাভাবিক কারণেই স্থানীয় ভোটাররা সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগতসহ নানা কারণে যথারীতি ভোট দিয়েছেন। ভোট দেয়ার পর তারা আশপাশের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মোড়ে বসে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছেন। তাই পুরো এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ।
আসনটির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কেমব্রিজ কিন্ডারগার্টেন স্কুল ভোট কেন্দ্রের সামনে বিশাল জটলা দেখা গেছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল সেখানে ভোটাররা ভোট দিয়ে এসে গল্পে মেতেছেন। পাশেই ভোটারদের তালিকা দেয়ার অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। আর ক্যাম্প ঘিরে চলছে নানা বয়সি মানুষের আড্ডা। সেখানকার বড়গ্রামের কোড়াঘাট এলাকার মহানগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাগের স্কুল কেন্দ্রেও দেখা গেছে একই চিত্র। সেখানকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন জানান, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভোটারই
নিজ ইচ্ছায় ভোট কেন্দ্রে গিয়েছেন। অনেক বয়স্ক ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে নেয়ার জন্য ইজিবাইক, ভ্যান ও অটোরিকশা ব্যবহার করা হয়েছে। এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন।
ঢাকা-৫ আসনে ভোট শুরুর আগেই অধিকাংশ কেন্দ্রের চিত্র ছিল ভিন্ন। আসনটিতে নৌকার পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী ছিল। এজন্য সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রের সামনেই ছিল প্রার্থী ও তাদের সহযোগীদের ভিড়। যদিও দিনভর ভোটারদের তেমন সমাগম দেখা যায়নি। তবে যারা ভোট দিতে এসেছিলেন, তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছেন। এই আসনে ১৪ জন প্রার্থী হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুনুর রশীদ মুন্না (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী মশিউর রহমান মোলস্না (ট্রাক প্রতীক) ও কামরুল হাসান রিপনের (ঈগল প্রতীক) মধ্যে। এই তিন প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে দিনভর রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার প্রতিযোগিতা চলে।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে ট্রাক প্রতীকের কয়েকশ' অনুসারীকে মিছিল, শোডাউন করতে দেখা যায়। এর আগে সকাল ১০টার দিকে সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চারটি কেন্দ্রের সামনের সড়কে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষের অনুসারীদের শোডাউন দিতে দেখা গেছে। তবে এ সময় ওই দুই স্কুলের কেন্দ্রের ভেতরে খুব স্বল্পসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। ভোটার সংকটের কারণে এজেন্টদের অনেকেই খানিকটা আরাম করতে পেরেছেন।
দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত আসনটির অন্তত ডজনখানেক কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কেন্দ্রেই ১৭ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তবে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। স্থানীয় ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক একটি বুথে কিছু সময় পর পর দু'একজন করে ভোটার এসেছে। বেশির ভাগ ভোটারই ভোট দিয়ে কেন্দ্র এলাকা ত্যাগ করেছেন।
মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা ফাহমিদা ইয়াসমিন এ প্রতিবেদককে জানান, সেখানকার মূলপ্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতা। তাই কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্ত নিতে ভোটারদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে হয়েছে।
ঢাকা-৯ আসনের নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী বিপক্ষে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। এজন্য সকাল থেকেই আসনটির বিভিন্ন এলাকায় উৎসবের আমেজে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণের সময় আসনটির অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শীতের সকালের শুরুতেই ভোট দিতে লোকজন কম এলেও ৯টার পর থেকে ভোটারদের বেশ উপস্থিতি দেখা গেছে।
আসনটির খিলগাঁও, বাসাবো, সবুজবাগ, মান্ডা, মুগদা ও মানিকনগরের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কেন্দ্রের বাইরে নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের ভোটার নম্বর এবং কেন্দ্রের কোনো বুথে ভোট দিতে হবে তা খুঁজে বের করে স্স্নিপে লিখে দিচ্ছেন। বয়োবৃদ্ধ ভোটারদের তারা বুথের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে সহায়তা করছেন।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আসনটির আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী খিলগাঁও গার্লস স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আসনটির প্রতিটি কেন্দ্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধ করেন।
ঢাকা-৬ আসনে ছিল সবচেয়ে বেশি ভোটের উৎসব। এমন উৎসব ঢাকার আর কোনো আসনে লক্ষ্য করা যায়নি। সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর থেকেই দলে দলে ভোটারদের কেন্দ্রে লাইন দিয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। যার মধ্যে সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটারদের লাইন স্কুলের আঙ্গিনা ছেড়ে মূল রাস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। রং বেরঙের সাজ দিয়ে এসেছিলেন ভোটাররা। অনেকেই সঙ্গে করে ব্যান্ড দল নিয়ে এসেছিলেন।
সরেজমিন আসনটির অধীন গেন্ডারিয়া, আলমগঞ্জ, টিকাটুলী, হাটখোলা, ওয়ারী, স্বামীবাগ, নারিন্দা, শরৎগুপ্ত রোড, বেগমগঞ্জ, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল, সূত্রাপুর, লক্ষ্ণীবাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
কেন্দ্রগুলোর আশপাশে থাকা ক্যাম্পে বসেছিল ব্যাপক আড্ডা। সেই আড্ডায় আনন্দের মাত্রা বাড়িয়েছিল পুরান ঢাকার ঐহিত্যবাহী খাবার। পুরান ঢাকার প্রায় সকল হোটেলে ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণে বিরিয়ানী ও কাচ্চি। জোহরের নামাজ আদায়ের পর পরই হোটেলগুলোতে ছিল উপড়ে পড়া ভিড়। বংশাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, নজিরবিহীন ভোটারদের উপস্থিতি। আসনটিতে নৌকার প্রার্থী ব্যতীত তেমন কোনো শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন না। পুরো এলাকা চষে বেড়িয়েছেন নৌকার প্রার্থী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক সাঈদ খোকন। সেন্ট গ্রেগরী স্কুলে কেন্দ্র গিয়ে দেখা গেছে ভোটারদের সবর উপস্থিতি। এলাকাটিতে মাইনরিটি ভোটারের সংখ্যা বেশি। সূত্রাপুর, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া থানার পুরো অংশ, কোতোয়ালি ও বংশাল থানার একাংশ নিয়ে গঠিত আসনটি। ১১টি ওয়ার্ড নিয়ে আসনটি গঠিত। আসনটিতে ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৬ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮০ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ১৯৬ জন।
ঢাকা-৭ আসনের অধীন নতুন পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের যথেষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে ভোট দিতে যাওয়া একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এবার ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হওয়ার নানা কারণ আছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টানা তিন দিনের ছুটি। অনেকেই এমন ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। অনেকেই আবার তিন দিনের ছুটির সঙ্গে বাড়তি ছুটিও নিয়েছেন। মোটামুটি এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে শীতের পিঠাপুলি খেতে গ্রামের বাড়িতে বা দূরে কোথাও ঘুরতে চলে গেছেন। এছাড়া প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরই অনেকেই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে নির্বাচনের অনেক আগেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
তিনি আরও জানান, ভোটের আগে ট্রেনে, বাসে ও ভোট কেন্দ্রে নাশকতার ঘটনায় অনেক ভোটার আতঙ্কে ভোট কেন্দ্রে যাননি। অনেকেই আবার পুরোপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এরপর দুপুরের পর ভোট দিতে গেছেন। এমন ভোটারের সংখ্যা অনেক।
আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের বাইরে গুটিকয়েক ভোটার দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সবার হাতে হাতে ভোটারের তালিকা। তবে ভেতরে প্রবেশ করে অনেক ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। দায়িত্বশীলরা জানান, নাম ঠিকানা যাচাই করে ভোটারদের হাতে ব্যালট পেপার দেওয়া হচ্ছে। এরপরই একজন ভোটার ভোট দিতে পারছেন। তবে কোনো হুড়োহুড়ি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রোববার দুপুর ২টার দিকে লালবাগের নবাবগঞ্জ ঢালে অবস্থিত ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত চার তলা ভাগলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বাইরে এবং ভেতরে অনেক ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছেন। আশপাশের বিভিন্ন প্রতীকের প্রার্থীদের এজেন্টদের ভোটারদের তালিকা দিতে দেখা গেছে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ষাটোর্ধ বয়সি এক মুরুব্বী বলছিলেন, অধিকাংশ ভোটার সকালেই ভোট দিয়ে গেছেন। যেসব ভোটার নাশকতা বা হাঙ্গামার আশঙ্কায় রয়েছেন, তারা পরিস্থিতি দেখছেন। পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় দুপুরের পবিত্র জোহরের নামাজ আদায় করেই ভোট দিতে এসেছেন। এজন্য দুপুরে কেন্দ্রটিতে ভোটারের চাপ কিছুটা বেশি। তবে আরও ভোটারের উপস্থিতি আশা করা হয়েছিল। কারণ কোনো ঝামেলা নেই।
আজিমপুর ভিকারুননিসানূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখায় দেখা গেছে, বাইরে প্রচুর লোকজন। যাদের অধিকাংশই ভোটার। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সকালেই ভোট দিয়েছেন। এখন তারা যার যার এলাকা থেকে ভোটারদের ডেকে আনার কাজ করছেন। রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছাড়াও প্রাইভেটকারযোগেও অনেক ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে আনতে দেখা গেছে। দুপুর আড়াইটার দিকে কেন্দ্রে যথেষ্ট ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে এজেন্টরা বলছিলেন, ভোটারদের উপস্থিতি আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন হলো না তা নিয়ে তারা চিন্তিত। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বেশ কয়েক জন জানান, অনেক ভোটারকে বাড়ি থেকে অনুরোধ করে আনতে হয়েছে। যদিও অধিকাংশ ভোটারই স্বেচ্ছায় ভোট দিয়েছেন। অধিকাংশ কেন্দ্রেই প্রার্থীদের লোকজনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি।
ঢাকা-১২ আসনের রাজধানী স্কুল, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল ১১টা নাগাদ ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তা অব্যাহত থাকে বিকাল প্রায় ৪টা নাগাদ। এখানকার মনুমিয়া হাইস্কুল, ফরিদ উদ্দীন প্রি ক্যাডেট স্কুল, ঢাকা পলিটেকনিক ল্যাবরেটরি স্কুল, সিদ্দিকী স্কুল, তেজগাঁও মডেল হাইস্কুল, তেজগাঁও গালর্স স্কুল, বটমলী হোমস অর্ফানেস গালর্স স্কুল, নাজনীন স্কুল এন্ড কলেজের চিত্রও অনেকটাই একই রকম। এছাড়া নয়াটোলা কামিল মাদ্রাসা, টিএনটি কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজে দুপুরের পর যথেষ্ট পরিমাণে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
ঢাকা-১৩ আসনের আদাবর থানাধীন মিশন কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। দুপুর ১২টা নাগাদ ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কমে যায়। আবার দুপুর ২টার পর ভোটারের উপস্থিতি বেড়ে যায়। শের-ই-বাংলা নগর থানাধীন রাজধানী স্কুল, মোহাম্মদপুর থানাধীন নবযুগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদাবর বাজারে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল, মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিআরএমসি, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল, মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও আদাবরের নবদিগন্ত আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়েও ভোটারের উপস্থিতি মাঝে মধ্যেই বেড়েছে। আবার কোনো কোনো সময় একেবারেই কমে গেছে। তবে বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ আবারও ভোটারদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।
ঢাকা-১৪ আসনের মিরপুরের কাজিপাড়া মাদ্রাসায় ভোট কেন্দ্রে দিয়ে দেখা গেছে, একজন কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন আনসাররা। কোনো ঝামেলা নেই। একজন একজন করে ভোট দিয়ে বের হচ্ছেন।
সেখানকার নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনকারীরা জানান, কোনো ঝামেলা নেই। ভোটারের যাবতীয় সব কিছুই যাচাই-বাছাই করে ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে। কোনো জালভোট দেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি একজন ভোটারের একাধিক ভোট প্রদানেরও নূ্যনতম কোনো সুযোগ নেই।
মিরপুরের পাইকপাড়ার বশির উদ্দিন আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচটি কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়নি। ভোটারের উপস্থিতি কম থাকায় ছোট ছোট সারিতে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। কোনো প্রকার ঝামেলা হয়নি। এছাড়া ঢাকার কমার্স কলেজ, মণিকানন স্কুল, মিরপুর সরকারি বিদ্যালয়, বিসিআইসি কলেজ, শাহ আলী মহিলা কলেজেও দেখা গেছে এমন চিত্র। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬টি ওয়ার্ড (৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২) এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে আসনটি গঠিত।
কাউন্দিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান খান শান্ত জানান, কোনো প্রকার ঝামেলা হয়নি। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক। তুরাগ নদের ওপারে অর্থাৎ ঢাকায় থাকা ভোটারদের যাতায়াতের জন্য সরকারের তরফ থেকে নৌকা ও ট্রলারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এজন্য অনেক ভোটারই ভোট দিতে পেরেছেন।
ঢাকা-১৮ আসনের উত্তরা, তুরাগ, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও বিমানবন্দর থানাধীন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আসনটিতে জাপা প্রার্থী শেরিফা কাদেরের লাঙ্গল ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী খসরু চৌধুরীর কেটলি প্রতীকের লোকজনদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটারদের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি চোখে পড়েছে। এছাড়া উত্তরখান ও দক্ষিণখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রেও ভোটারদের যথেষ্ট উপস্থিতি দেখা গেছে। কাওলার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, সিভিল অ্যাভিয়েশন হাইস্কুল ও গাওয়াইর প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুরাগের নয়ানগর সরকারি রফিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তরা ওয়ার্ল্ড ভিশন স্কুল, আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কলেজ ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল যথেষ্ট।
ঢাকা-১০ আসনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি। আসনটির প্রতিটি কেন্দ্রেই এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা-১১ আসনের রামপুরার দিদার আদর্শ কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে যথেষ্ট ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা-১৭ আসনের মানারাত ইন্টান্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন কেন্দ্রেও ভোটারদের সবর উপস্থিতি দেখা গেছে। গুলশানের বাঁশতলার লাইট ফেয়ার স্কুল কেন্দ্রটিতে তুলনামূলকভাবে ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। নর্দ্দার কালাচাঁদপুর সরকারি স্কুলেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ এলাকাটির বাসিন্দাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে গেছেন।