চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে এ সিদ্ধান্ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে ইসির সচিব জাহাঙ্গীর আলম বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে হুমকি দিয়েছিলেন বলে জানান ইসি সচিব, তবে ওই আসনে বাকি সময়ে ভোট চলবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন সচিব ব্রিফিংয়ে বলেন, 'তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দিয়েছেন, তাদের উপর চড়াও হয়েছেন সব বিবেচনায়
নিয়ে কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে?এ বিষয়ে জানতে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বাঁশখালীর ওসি তোফায়েল আহমেদকে ফোনে হুমকির আগে চট্টগ্রামে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন সাংবাদিকদের হয়রানি করার অভিযোগেও আলোচনায় এসেছিলেন এই সংসদ সদস্য।
তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছিল ইসি।
এ আসনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্রের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান।
প্রচার শুরুর পরদিন গত ১৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুরের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমানের সমর্থকরা। এ নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করে দুই পক্ষ।
থানায় মজিবুরের অনুসারীদের মামলা নেওয়ায় গত ২২ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল।
পরে থানার ওসিকে 'দেখে নেওয়ার হুমকি' দেওয়ার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুরের আচরণ সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য 'হুমকিস্বরূপ' বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান মোস্তাফিজুর। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।
প্রশ্ন শুনে সঙ্গে সঙ্গে রেগে যান মোস্তাফিজুর রহমান, গালি দিয়ে ওই সাংবাদিককে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা এ সময় অন্য সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
পরে চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর এ মামলা দায়ের করা হয়।
৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে মোস্তাফিজ নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়েন। এ আসনে তার সঙ্গে আরও ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও ঈগলের মুজিবুর রহমান ও ট্রাক মার্কার আবদুলস্নাহ কবির লিটনের সঙ্গেই তার জোর লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন স্থানীয়রা।
বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনায় আলোচিত মোস্তাফিজুর। কয়েক বছর আগে এক নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার দিন সাংবাদিককে হয়রানির পর ওসিকে হুমকি দিয়ে আবার আলোচনায় আসেন এই সংসদ সদস্য।
পরে বাঁশখালীর ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মোস্তাফিজুরের রহমানের মোবাইলে ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
দু'জনের ফোনালাপের এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর 'তার লোকজনের উপর হাত দেওয়া হলে, হাত কেটে ফেলা হবে' বলে হুমকি দেন।
ফোনালাপের অডিও রেকর্ডে কথাবার্তার একপর্যায়ে এমপিকে বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নে তার লোককে ধরতে পুলিশ কেন পাঠানো হলো তা জানতে চেয়ে এরকম হুমকি দিতে শোনা যায়।
টেলিফোনে মোস্তাফিজুর রহমান ওসিকে বলেন, 'আমার কোনো লোকজনের ওপর যদি হাত দেয়... হাত কেটে ফেলবো কিন্তু এটা বলে দিলাম।'
তার বাড়িতে কেন পুলিশ পাঠানো হয়েছে তাও ওসির কাছে জানতে চান নৌকার প্রার্থী হওয়া মোস্তাফিজুর।
এছাড়া চাম্বলের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীকেও কিছু না করার কথা বলতে শোনা যায় তাকে।
এ অডিও এর বিষয়ে ভোটের দুই দিন আগে শুক্রবার জেলা পুলিশ সুপার কে এম শফিউলস্নাহ বলেন, 'ফোনালাপের অডিও রেকর্ডিংয়ের কথা শুনেছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনা হয়ে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।'
সাংসদের সঙ্গে মোবাইলে ফোনে কথা নিয়ে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল বলেন, 'ঊর্ধ্বতন অফিসারের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে নো কমেন্টস।'
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুরকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।