দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মত
প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল। রোববার ভোটগ্রহণ পরিদর্শন শেষে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে পর্যবেক্ষক দল এ কথা জানায়।
সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম বেটস বলেন, 'আমি যেটি দেখেছি, সেটি হচ্ছে- নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। বাংলাদেশে ভোটগ্রহণের সময় বিশ্বে সবচেয়ে কম।' বিশ্বের অন্য কোনো দেশে আট ঘণ্টা ভোট হয় না বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, 'আমি অবশ্যই বলতে চাই, আমার দেশের মিডিয়া বাংলাদেশের মিডিয়ার মতো অনুসন্ধানী ও সৎ নয়। এখানকার গণমাধ্যম যেটি বাস্তবে হয়, সেটির বিষয়ে তারা রিপোর্ট করে।'
আরেকজন মার্কিন পর্যবেক্ষক আমেরিকান গেস্নাবাল স্ট্র্যাটেজিসের প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার বি গ্রে বলেন, 'আমি নিজের চোখে যা দেখেছি, সেটি হচ্ছে- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে। ভোটাররা উৎসাহের সঙ্গে কেন্দ্রে গিয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'আমি এবং আমার সঙ্গী প্রক্রিয়াটি দেখেছি। আমরা প্রায় ১০টি সেন্টার ঘুরে দেখেছি। আমরা সন্তুষ্ট যে, নির্বাচন অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়েছে।'
এদিকে, এই নির্বাচন দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ওআইসি, রাশিয়া, ফিলিস্তিন ও গাম্বিয়ার পর্যবেক্ষকরা। তারা বলেছেন, ভোটার এবং প্রার্থীর এজেন্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, আমরা সন্তুষ্ট। রোববার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধান শেখ মোহাম্মদ
\হবন্দর বলেন, পর্যবেক্ষক হিসেবে সহিংসতার কোনো চিহ্ন আমাদের চোখে পড়েনি। আমি অবাক হয়েছি, দোকানপাট বন্ধ কেন! সড়কে কোনো মানুষ দেখা যায়নি। শহর ছিল শান্ত।
আরব ইলেক্ট্রোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়ে ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধান বলেন, আমার দেশের পাশাপাশি আমি ওই সংগঠনেও (আরব ইলেক্ট্রোরাল ম্যানেজমেন্ট বডি) প্রতিবেদন জমা দেব। যে কারণে এই আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অভিজ্ঞতা বিনিময়। আপনাদের অভিজ্ঞতা এবং আমি ও বাংলাদেশে আমার সহকর্মীরা আজকে যা দেখলাম। এই সফরে আমরা একে-অপরের কাছ থেকে শিখলাম। এটা একটি পেশাগত সফর ছিল। নির্বাচনী পরিবেশ দেখে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ভালো নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মোহাম্মদ বন্দর বলেন, আমি এখনো জানি না কত শতাংশ ভোট পড়েছে। সকালে যখন আমরা কেন্দ্র পরিদর্শন করি, তখন ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল। মানুষ আশা করছিল, উপস্থিতি বাড়বে। যদি বাধ্যবাধকতা না থাকে, আপনি কেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং কেউ আপনাকে ভোট দিতে বাধ্য করতে পারে না। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের দেশে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই, তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।
সাংবাদিকরা ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধানের কাছে কেন্দ্রে কম ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ বা ১৬ শতাংশ ভোট পড়লে সেটা নির্বাচন আয়োজকদের জন্য বার্তা। এর কারণ রাজনীতিকরা বিশ্লেষণ করবেন।
গাজীপুরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতিনিধি দল
এদিকে আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। রোববার দুপুরে গাজীপুর-৩ আসনের মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ ও মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ দুটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তারা। পরিদর্শনের সময় তারা দুই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে নানা বিষয়ে দীর্ঘসময় কথা বলেন। তবে এ প্রতিনিধি দলে কারা ছিলেন তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।
মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ১ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ওয়াহিদুল আবরার বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে ওভার অল সবকিছু তারা জানতে চেয়েছেন। তাদের সামগ্রিক বিষয়ে অবগত করা হয়েছে।
মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ২ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ১৫ মিনিটের মতো আমার এখানে ছিলেন। এসময় তারা ভোট প্রদান প্রক্রিয়া দেখেন এবং ভোট নিয়ে নানা বিষয়ে জানতে চান। নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করেছে কিনা, এসব বিষয়ে জানতে চান। তাদের ভোট কেন্দ্রের সামগ্রিক বিষয়ে অবহিত করা হয়। তারা কেন্দ্রের পরিবেশ দেখে কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে, গাজীপুরের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছে ভারতীয় তিন সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল। এদিন দুপুর সোয়া ১টায় গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শহীদ স্মৃতি স্কুলে কয়েকটি ভোটকক্ষের এজেন্ট, ভোটার ও প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলেন তারা। দুপুর ২টায় টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইন্ডিয়ার দি ফরেন করেসপনডেন্ট ক্লাব অব এশিয়ার এস ভিনকার্ড নারায়ণ, ভারতবর্ষের সাহিত্যিক অমিতাভ রায়, ইন্ডিয়ান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী।
তারা গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, ভোটের পরিবেশ ভালো, তবে উপস্থিতি আরও বেশি থাকলে ভালো হতো। নির্বাচনে উন্মাদনা উত্তেজনা নেই তবে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে।
প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা বলেন, নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এ কারণে হয়তো মানুষ ভীত হয়ে কেন্দ্রে কম এসেছে। একটা আতঙ্কের ভাব ছিল যার কারণে তারা ভোট দিতে বের হয়নি।
কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছেন সহিংসতা নেই। বিকালে হয়তো উপস্থিতি আরও বাড়বে। আমাদের ধারণা বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও মজবুত করার জন্য মানুষ ভোট দিতে আসবে।
আমরা যে কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০০-এর বেশি ভোটার। কিন্তু ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় ২৯২টি ভোট পড়েছে। এটা আশানুরূপ নয়। তবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েও আসছে, এটা দেখে ভালো লেগেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা শান্তিপূর্ণই আছে।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের
সন্তোষ প্রকাশ
আমাদের সীতাকুন্ড প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছে কমনওয়েলথের প্রতিনিধি দল। টেরি ডেইল ও সব্যসাচী ব্যানার্জি নামে কমনওয়েলথের দুজন প্রতিনিধি সীতাকুন্ড ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র এবং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দুটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। রোববার সকালে কেন্দ্র দুটি পরিদর্শন করেন তারা।
এসময় সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কেএম রফিকুল ইসলাম দুটি কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথ ঘুরে ঘুরে তাদের দেখান এবং ভোট প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন।
সীতাকুন্ড ডিগ্রি কলেজে পরিদর্শন শেষে সীতাকুন্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পরিদর্শন করে প্রতিনিধিদল। তবে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথ তারা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন। এসময় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে কয়েকটি বুথে এজেন্ট দেখতে না পেয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন তারা।
শার্শায় ভারতীয় পর্যবেক্ষক
এদিকে আমাদের শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোর-১ শার্শা আসনের গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ইন্ডিয়ান ইলেকশন কমিশনের পিন্সিপাল সেক্রেটারি মো. ওমর। সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর সকাল ১০টায় তিনি শার্শা উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রের সুষ্ঠু ভোট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় তার সঙ্গে নাভারন সার্কেলের এএসপি আল নাহিয়ান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশীসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ছিলেন।